
আওয়ামী লীগ এ দেশে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কী করেছে, বলতে চাই না। তারা গন কেস। তাদের এই দেশে ঢোকার আর কোনো সম্ভাবনা নেই, তারা একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক।’
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জামায়াতের জাতীয় সমাবেশে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের এ কথা বলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে গত ৫৪ বছরের শাসনের বিরুদ্ধে ‘চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যানের বিপ্লব’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, যারা পুরোনো কায়দায় আবার সেই শাসন ফিরিয়ে আনতে চায়, তাদের আর সুযোগ না দিতে জনগণকে ভেবে দেখার আহ্বানও জানান জামায়াতের এই নেতা।
আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী নির্বাচনে বাংলাদেশপন্থীরাই জিতবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত দুটি সমাবেশে (আজ জামায়াতের সমাবেশ ও গত ২৮ জুন ইসলামী আন্দোলনের সমাবেশ) সেই বার্তা পাওয়া যাচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ, বাংলাদেশপন্থীরাই জিতবে, চাঁদাবাজবিরোধীরাই জিতবে, সুশাসনের পক্ষের শক্তিই জিতবে।’
জামায়াতের এই নায়েবে আমির বলেন, ‘জামায়াত কোনো সন্ত্রাসবাদকে পছন্দ করে না। ইসলামে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারবে না, পারবে না, পারবে না। সেটা ধর্মীয় জঙ্গিবাদ হতে পারে, অথবা রাজনৈতিক জঙ্গিবাদ হতে পারে। জামায়াত প্রয়োজনে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, লড়াই-সংগ্রাম করবে।’
চলমান সংস্কারের আলোচনা নিয়ে সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, ‘প্রত্যেকেই বলেন সংস্কার মানি। কিন্তু বৈঠকে বসলে কেউ কেউ “মানি না” ভাব দেখাচ্ছেন। সমস্যাটা কোথায়? সংস্কার তো সবার জন্য কল্যাণের। তাহলে যাঁরা চান না, তাঁদের মতলব আছে! পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে কেন্দ্র দখল হবে না, তাহলে মতলব পূরণ হবে না। পিআর পদ্ধতিতে টাকা দিয়ে ভোট কেনার কোনো সুযোগ নেই, সে জন্য মতলব পূরণ হবে না।’
সংস্কারের আইনগত ভিত্তি কীভাবে দেওয়া হবে, সে প্রসঙ্গে জামায়াতের নেতা এই বলেন, ‘অনেকে বলছেন, আগামী সংসদে দেওয়া হবে। তাহলে আপনারা মনে করছেন, আগামী সংসদে আপনারা জিতবেন, নাকি দখল করবেন? এসব কথা সমাজকে বিভ্রান্ত করবে। জুলাই সনদকে একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনগত ভিত্তি দিয়ে যাঁরা জিতবেন, তাঁরা রেটিফাই করবেন। এর ব্যত্যয় জনগণ মানবে না।’
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে গত মে মাসে খালাস পাওয়া জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামও এই সমাবেশে বক্তব্য দেন। তিনি আওয়ামী লীগ আমলে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের ফাঁসি দেওয়ার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানান।
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে (পিআর পদ্ধতি) নির্বাচনসহ সাত দফা দাবিতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশের আয়োজন করেছিল জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে দলের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের অনেকেই বক্তব্য দেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের কয়েকজন জামায়াতের সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁদের মধ্যে আছেন শহীদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, শহীদ শাহরিয়ার হাসান আলভীর বাবা আবুল হাসান ও জুলাই চব্বিশ শহীদ পরিবার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রবিউল আউয়াল। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) ছাত্রলীগের নির্যাতনে শহীদ আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহও এই সমাবেশে বক্তব্য দেন।
জামায়াতের এই সমাবেশে অন্য রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাদের অনেককেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সমাবেশে বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব ইউনুস আহমদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আব্দুল কাদের, হেফাজতে ইসলামের নায়েবে আমির মহিউদ্দিন রাব্বানি, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের (একাংশ) আমির আবু জাফর কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক প্রমুখ।