গণসংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। ২৫ ডিসেম্বর
গণসংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য দিচ্ছেন তারেক রহমান। ২৫ ডিসেম্বর

আই হ্যাভ আ প্ল্যান: তারেক রহমান

১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন থেকে ফিরে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে নিজের একটি পরিকল্পনা থাকার কথা জানালেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পরিকল্পনাটি কী, তা খোলাসা না করলেও তা বাস্তবায়নে দেশের সবার সহযোগিতা চাইলেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দেশে ফেরার পর লাখো সমর্থকের উচ্ছ্বাসে ভেসে ঢাকার তিনশ ফুটে সংবর্ধনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আই হ্যাভ আ প্ল্যান।’

কথাটি বলার আগে ৬২ বছর আগে আমেরিকার বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতা মার্টিন লুথার কিংয়ের ঐতিহাসিক ভাষণটি স্মরণ করেন তারেক রহমান। ১৯৬৩ সালের ২৭ আগস্ট ওয়াশিংটনের লিঙ্কন মেমোরিয়ালে লাখো মানুষের সমাবেশে লুথার কিং বর্ণবৈষম্যমুক্ত যুক্তরাষ্ট্র দেখার স্বপ্নের কথা তুলে ধরে বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ আ ড্রিম।’

২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে থাকা তারেক রহমান তাঁর মা বিএনপি চেয়ারপারসন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী থাকার মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আগে আজ দেশে ফিরলেন।

দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামার পর বিশেষ একটি বাসে রওনা হয়ে উচ্ছ্বসিত সমর্থকদের মধ্যদিয়ে সাত কিলোমিটার পথ তিন ঘণ্টার বেশি সময়ে পাড়ি দিয়ে বিকালে পূর্বাচলে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে সড়কে স্থাপিত সংবর্ধনা মঞ্চে পৌঁছান তিনি।

নেতা-কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাতে জানাতে পূর্বাচলে জুলাই ৩৬ এক্সপ্রেসওয়ে সড়কে স্থাপিত সংবর্ধনা মঞ্চে আসেন তারেক রহমান। ২৫ ডিসেম্বর

দেশে ফেরার পর প্রথম ভাষণে তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা দেশের শান্তি চাই। মার্টিন লুথার কিং—নাম তো শুনেছেন না আপনারা? তাঁর একটি বিখ্যাত ডায়ালগ আছে, আই হ্যাভ আ ড্রিম। আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সকলের সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসাবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই, আই হ্যাভ আ প্ল্যান, পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি। আর এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে।’

সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা চেয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়, প্রিয় ভাইবোনেরা এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন, এই সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের শক্তি যত মানুষ উপস্থিত আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন ইনশা আল্লাহ আমরা “আই হ্যাভ আ প্ল্যান” বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।’

মানুষ যেন নিরাপদে থাকতে পারে, সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা যে ধর্মের মানুষ হই, আমরা যে শ্রেণির মানুষ হই, আমরা যে রাজনৈতিক দলের সদস্য হই অথবা একজন নির্দলীয় ব্যক্তি হই, আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে—যেকোনো মূল্যে আমাদের এই দেশের শান্তিশৃঙ্খলাকে ধরে রাখতে হবে। যেকোনো মূল্যে যেকোনো বিশৃঙ্খলাকে পরিত্যাগ করতে হবে। যেকোনো মূল্যে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যাতে মানুষ নিরাপদ থাকতে পারে। শিশু হোক, নারী হোক, পুরুষ হোক—যেকোনো বয়স, যেকোনো শ্রেণি, যেকোনো পেশা, যেকোনো ধর্মের মানুষ যেন নিরাপদ থাকে এই হোক আমাদের চাওয়া।’

তারেক রহমান বলেন, ‘আসুন, আমরা সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি যে ইনশা আল্লাহ আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবে আমরা সকলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু সাল্লামের ন্যায়পরায়ণতা, সেই ন্যায়পরায়ণতার আলোকে আমরা দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’

বক্তব্য শেষ করার পর যখন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী (এ্যানি) অনুষ্ঠান শেষ করার ঘোষণা দিচ্ছিলেন, তখন আবারও মাইকের সামনে এসে তারেক রহমান বলেন, ‘মনে রাখবেন, উই হ্যাভ আ প্ল্যান। উই হ্যাভ আ প্ল্যান ফর দ্য পিপল, ফর দ্য কান্ট্রি। ইনশা আল্লাহ, আমরা সেই প্ল্যান বাস্তবায়ন করব।’

মঞ্চে কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তারেক রহমান। ২৫ ডিসেম্বর

সংবর্ধনা মঞ্চে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমদ (বীর বিক্রম), এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী উপস্থিত ছিলেন।

এ ছাড়া দীর্ঘদিনের যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের মধ্যে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।