
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে এক দিনে তাঁকে ‘ট্রাভেল পাস’ দেওয়া সম্ভব বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোম্যাটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ডিক্যাব) আয়োজিত ডিক্যাব টকে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
‘বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি: পরিবর্তনশীল বিশ্বে একটি প্রাসঙ্গিক ভূমিকা নির্ধারণ’ বিষয়ে ডিক্যাব সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তারেক রহমান দেশে আসতে চাইলে কোনো বিধিনিষেধ নেই, এক দিনে ট্রাভেল পাস দেওয়া সম্ভব।’
তিনি বলেন, ‘এটার নিয়ম হচ্ছে যে যখন পাসপোর্ট থাকে না বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে বলে তখন কেউ যদি আসতে চান, তাহলে তাঁকে আমরা ওয়ান টাইম পাস একটা দিয়ে দিই, একবার দেশে আসার জন্য। তো এটাতে এক দিন লাগে। কাজেই এটা উনি যদি আজকে বলেন যে উনি আসবেন, আগামীকাল হয়তো আমরা এটা দিলে পরশু দিন প্লেনে উঠতে পারবেন। কোনো অসুবিধা নাই। এটা আমরা দিতে পারব।’
তারেক রহমানের ফেসবুক পোস্টের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘স্ট্যাটাস স্পর্শকাতর বিষয়...এটা উনি নিজে বলেছেন, পত্রিকায় এসেছে, সেটা আমরা সবাই দেখেছি। আমার জ্ঞান যে পর্যন্ত আমি শুধু এটুকু বলতে পারব যে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিধিনিষেধ নেই যে উনি আসতে পারবেন না।’
বাইরের কোনো দেশের চাপ আছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘একটা দেশের নাগরিককে তার দেশে ফিরতে দেওয়া যাবে না বা দেওয়া হবে না—এটা তো আমার কাছে একটু অস্বাভাবিক লাগছে যে বাংলাদেশ যদি তার নাগরিককে ফেরত আসতে দিতে চায়, আরেকটি দেশ সেটা কী করে নিষেধ করবে।’
খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য আবার বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, তাঁকে বিদেশ নেওয়ার ব্যবস্থা তাঁর দল করলে সরকার সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া খুব অসুস্থ। এই মুহূর্তে উনি আসলে বিদেশে নিয়ে যাওয়ার মতো অবস্থায় নেই। যদি একটু উন্নতি হয়, তাহলে নিয়ে যাওয়া হবে। সে জন্য ব্যবস্থা দলের পক্ষ থেকে করা হয়েছে, আমরা সহায়তা করতেছি। যেটুকু যেখানে সহায়তা প্রয়োজন, আমরা করব।’
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ভারতে পালিয়ে থাকা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে প্রথমে প্রত্যর্পণ করা হবে—এ ধরনের কোনো অফিশিয়াল তথ্য নেই।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম লিখেছেন, তিনি মোটামুটি নিশ্চিত যে ভারত আসাদুজ্জামান খানকে শিগগিরই বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ করবে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করলে সম্পর্কে প্রভাব পড়বে কি না, জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত না দিলে শুধু একটি ইস্যুতে সম্পর্ক আটকে থাকবে না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান ওয়ান–ইলেভেনের পর ২০০৮ সালে কারাগার থেকে বেরিয়ে সপরিবার যুক্তরাজ্যে যান। তারপর আর তিনি দেশে ফেরেননি। বিদেশে থেকেই দল পরিচালনা করে আসছেন তিনি।
গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় বিভিন্ন মামলায় তারেক রহমানের সাজার রায় বাতিল হওয়ার পর তাঁর দেশে ফেরার আলোচনা শুরু হয়। তারেক রহমান শিগগিরই ফিরবেন, এমন কথা বললেও সুনির্দিষ্ট দিন তারিখ জানাচ্ছেন না বিএনপির নেতারা।
এর মধ্যে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর জীবন সংকটাপন্ন হয়ে উঠলে গত শুক্রবার শোনা যাচ্ছিল, তারেক রহমান দ্রুতই দেশে ফিরছেন।
তবে বাংলাদেশ সময় গতকাল সকালে লন্ডনে থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দেন তারেক রহমান। সেখানে তিনি লেখেন, ‘এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ–স্পর্শ পাবার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।’
বাধা কোত্থেকে, পোস্টে তা স্পষ্ট না করে তিনি লেখেন, ‘স্পর্শকাতর বিষয়টির বিস্তারিত বর্ণনার অবকাশও সীমিত। রাজনৈতিক বাস্তবতার এ পরিস্থিতি প্রত্যাশিত পর্যায়ে উপনীত হওয়ামাত্রই স্বদেশপ্রত্যাবর্তনে আমার সুদীর্ঘ উদ্বিগ্ন প্রতীক্ষার অবসান ঘটবে বলেই আমাদের পরিবার আশাবাদী।’
পরে গতকাল বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ফেসবুক পোস্টে তারেক রহমানের দেশে ফেরা নিয়ে লেখেন, ‘এ ব্যাপারে সরকারের তরফ থেকে কোন বিধিনিষেধ অথবা কোনো ধরনের আপত্তি নেই।’