
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন অভিযোগ করেন, ইদানীং একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা গণভোটে ‘না’ ভোট দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এনসিপির এই নেতা বলেন, ঐকমত্য কমিশনে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ, গণভোট এবং সংবিধানের মৌলিক সংস্কারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে তাঁরা মোটাদাগে একমত হয়েছেন। কিন্তু ইদানীং একটি দলের নেতারা চূড়ান্তভাবে গণভোটের রায়কে প্রত্যাখ্যান করার মতামত ব্যক্ত করছেন। তাঁরা গণভোটে ‘না’ দেওয়ার জন্য ক্যাম্পেইন করছেন। কিন্তু দেশের জনগণ সেটাকে প্রত্যাখ্যান করেছে।
জাতীয় কৃষি দিবস উপলক্ষে ‘তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা: জাতীয় অর্থনীতির নতুন শক্তি’ শীর্ষক এক সেমিনারে আখতার হোসেন এ কথা বলেন। আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে (বার্ক) এই সেমিনারের আয়োজন করে এনসিপির ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারিস্টস অ্যালায়েন্স অব বাংলাদেশ (এনএএবি)। আয়োজনটি সঞ্চালনা করেন এনএএবির কৃষিবিদ মো. তৌহিদ আহমেদ।
দুটি বড় রাজনৈতিক দল কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম এবং সংস্কারের জন্য গণভোটকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে বলে অভিযোগ করেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, একটি দল কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম চাওয়ার কথা বলে জনগণের প্রত্যাশিত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার যে সংস্কার, সেটিকে গৌণ করে ফেলেছে। আবার আরেকটি দল ‘আলু না গণভোট’ স্লোগানের মধ্য দিয়ে আলুর যে ন্যায্য দাম, অর্থাৎ কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম যে কৃষকেরা পাচ্ছেন না, সেটাকে গৌণ করে ফেলেছে। কৃষিপণ্যের ন্যায্য দাম এবং সংস্কারের জন্য গণভোট—দুটিই একইভাবে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনীতিতে জুলাই সনদের বিষয় নিয়ে অনেকগুলো দল যে ধোঁয়াশা তৈরি করেছে, সেটাকে তাঁরা সন্দেহের চোখে দেখেন বলে জানান এনসিপির এই নেতা।
গণভোটের রায় মানা বাধ্যতামূলক হবে কি না, গণভোটের রায়ের মধ্য দিয়ে সংবিধানের সংশোধনী আনা যাবে কি না—এসব প্রশ্ন তোলা হচ্ছে উল্লেখ করেন আখতার হোসেন বলেন, গণভোটের ফলাফল বাধ্যতামূলকভাবে মানতে যাঁরা অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করছেন, তাঁরা প্রকারান্তরে জনরায়কে, জনগণের ম্যান্ডেটকে প্রত্যাখ্যান করছেন। যাঁরা জনগণের ম্যান্ডেটকে প্রত্যাখ্যান করবেন, জনগণও তাঁদেরকে প্রত্যাখ্যান করবেন।
জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারি করা হয়েছে, তার অনেকগুলো জায়গায় অস্পষ্টতা রয়েছে বলেও দাবি করেন আখতার হোসেন। তিনি বলেন, সংস্কারকে ভাগ করে ফেলা হয়েছে সরকারের মর্জিমতো। সংস্কারের বিষয়বস্তুগুলোকে রাজনৈতিক দলের আওতাধীন করে ফেলা হয়েছে, তাদের মতিগতির ওপরে, তাদের অভিরুচির ওপরে। এমন অস্পষ্ট অবস্থায় রেখে বাংলাদেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে জুলাই সনদের মধ্য দিয়ে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, সেই প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশে যেসব অস্পষ্টতা রয়েছে, সেগুলো সরকারকে অতি দ্রুত দূর করার আহ্বান জানান তিনি।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য জুলাই সনদের ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দল আপত্তি প্রদান করবে না, এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
‘এস্টাবলিশমেন্টের চাপে আত্মসমর্পণ করেছেন ইউনূস’
এই সেমিনারে এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, তাঁরা চান, দেশের কৃষকেরা জাতীয় সংসদে জায়গা করে নিক। বরং তাঁরা দেখছেন, রাজনৈতিক দলগুলো সেই তথাকথিত চাঁদাবাজ, দুর্নীতিবাজ, দখলদার, খুনিদের প্রার্থীর তালিকায় জায়গা করে দিচ্ছে। এনসিপি একজন যোগ্য কৃষককে যিনি তাঁর আইন প্রণয়নের ভূমিকা রাখতে চান, তাঁকে সংসদ পর্যন্ত নিয়ে আসতে চায়।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশ একটি আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র হবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র বা ভারত কারও প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ থাকবে না। সেই ভাবনা থেকে চব্বিশপরবর্তীতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি সেই আগেকার বিদ্যমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর জনগণকে ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, ‘দেখা গিয়েছে, এস্টাবলিশমেন্টের চাপে তিনি (প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) নিজেই আত্মসমর্পণ করেছেন।’