নিরাপত্তার অংশ হিসেবে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ-বিজিবির অবস্থান
নিরাপত্তার অংশ হিসেবে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনের সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ-বিজিবির অবস্থান

‘প্রতিদিন মনে হয়, আজ বুঝি ম্যাডামকে নিয়ে ভালো খবর পাব’

‘প্রতিদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আসি। প্রতিদিন মনে হয়, আজ বুঝি ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভালো কোনো খবর পাব।’

দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁকে নিয়ে কথাগুলো বলেন মীর জসিম।

আজ রোববার সকালে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে কথা হয় মীর জসিমের সঙ্গে। তিনি নিজেকে বিএনপির একজন সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন।

এভারকেয়ার হাসপাতালের পাশের একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন বলে জানালেন মীর জসিম। তিনি বলেন, প্রতিদিন আশুলিয়া থেকে ঢাকায় আসেন। অফিসে ঢোকার আগে একবার হাসপাতালের সামনে আসেন।

মীর জসিম বলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নন, তবে খালেদা জিয়ার কারণে তিনি ছোটবেলা থেকে বিএনপিকে সমর্থন করেন।

মীর জসিম বলেন, ‘প্রতিদিন এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে আসি। প্রতিদিন মনে হয়, আজ বুঝি ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা নিয়ে ভালো কোনো খবর পাব। গণমাধ্যমে যেসব খবর প্রচার করা হয়, সেগুলো দেখি ঠিকই। কিন্তু মনকে বোঝাতে পারি না। তাই এখানে ছুটে আসি। না এলে ভালো লাগে না। মনের ভেতরে কেমন জানি করে।’

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে আজ এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে লোকজন ভিড় করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ছাড়াও সাধারণ মানুষ আছেন। তাঁরা এখানে এসে দোয়া করছেন। খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খবর নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে লোকজন ভিড় করছেন

যাঁরা এখানে আসছেন, তাঁরা বলছেন, তাঁদের প্রত্যাশা একটাই—খালেদা জিয়া যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন।

বিএনপির আরেক সমর্থক আনোয়ার হোসেন। তিনি এসেছেন নেত্রকোনা থেকে। আনোয়ার হোসেন বলেন, দুই দিন ধরে তিনি ঢাকায় আছেন। তিনি মূলত খালেদা জিয়ার খোঁজ নিতেই এসেছেন। তিনি জানেন, খালেদা জিয়াকে দেখার সুযোগ হবে না। তারপরও এসেছেন মনের টানে।

সকাল ৯টা থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে অবস্থান করে দেখা যায়, ধীরে ধীরে নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা এখানে জড়ো হচ্ছেন। তাঁরা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন। খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেছেন।

গত ২৩ নভেম্বর রাতে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো স্থিতিশীল নয়। এ কারণে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি বলে চিকিৎসক ও দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নেওয়ার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত আছে। তবে বিদেশে চিকিৎসার বিষয়টি নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার অর্থাৎ দীর্ঘ যাত্রার ধকল নিতে শারীরিকভাবে উপযোগী কি না, সেটার ওপর।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্যদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়ার নানা শারীরিক জটিলতার মধ্যে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদ্‌যন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা ওঠানামা করছে। এর কিছু কিছু কখনো নিয়ন্ত্রিত, আবার হঠাৎ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কিডনির সমস্যার কারণে খালেদা জিয়ার শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে গিয়েছিল, সেটি বেড়েছে। কিডনির কার্যকারিতা সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে, ফুসফুসেরও উন্নতি আছে। তবে তিনি এখনো আশঙ্কা মুক্ত নন।