চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম
চরমোনাই পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ রেজাউল করীম

কর্মীদের অপরাধের দায়ভার বিএনপিকে নিতে হবে: চরমোনাইর পীর

প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর সমালোচনা করার ক্ষেত্রে শিষ্টাচার লঙ্ঘন না করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির, চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি সবাইকে হুঁশিয়ার করে বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেওয়ার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে চরমোনাইর পীর এই আহ্বান জানান। কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন বিক্ষোভ সমাবেশে রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষে-বিপক্ষে উত্তেজনাকর ও আক্রমণাত্মক স্লোগান শোনা যাচ্ছিল। এ নিয়ে রাজনীতিতে অস্থিরতা বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

এমন একটা প্রেক্ষাপটে আজ চরমোনাইর পীর এক বিবৃতিতে বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে এবং সে জন্য পরস্পর সমালোচনা থাকে। কখনো কখনো তা তীব্রও হতে পারে। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। কারণ, বাংলাদেশ একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ১৫ বছরের পতিত ফ্যাসিবাদের বিষাক্ত ছোঁয়া এখনো দেশকে অনিরাপদ করে রেখেছে। তিনি বলেন, পতিত স্বৈরাচার দেশকে অস্থিতিশীল করে সুযোগ নেওয়ার পাঁয়তারা করে যাচ্ছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ দলের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, একই সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনায়, বক্তব্যে ও মন্তব্যে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। কারণ, কোনো অবস্থাতেই পতিত ফ্যাসিবাদকে কোনো সুযোগ করে দেওয়া যাবে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ৫ আগস্টের পরে দেশ গঠনের জন্য সংস্কার প্রয়োজন বলে ঐকমত্য তৈরি হয়েছে। সেই সংস্কার হতে হবে রাষ্ট্রের কাঠামোতে, আইনে এবং রাজনৈতিক দলের চরিত্র ও সংস্কৃতিতে। রাষ্ট্রের কাঠামো ও আইনি সংস্কারের কাজ কিছুটা অগ্রগতি হলেও রাজনৈতিক চরিত্র ও সংস্কৃতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।

সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ৫ আগস্টের পরে রাজনৈতিক হানাহানিতে নিহত-আহত মানুষের সংখ্যা শুনে আঁতকে উঠতে হয়। চাঁদাবাজি কোনো অর্থেই কমেনি। সন্ত্রাসও কমেনি। বরং রাজনৈতিক পরিচয়ে ধর্ষণের মতো ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে যে বর্বরতায় মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, তার প্রতিবাদে জনতা ফুঁসে উঠেছেন স্বাভাবিক কারণেই। জনতার সেই প্রতিবাদকে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে বর্বর সেই হত্যাকাণ্ডকে আড়াল করে ফেলা হয়েছে।

চরমোনাইর পীর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে মানুষ এই ধরনের রাজনীতি দেখতে চায় না। এই ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের একটা বড় অংশ বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিএনপি কর্তৃক তাদের বহিষ্কারের মাধ্যমে এটা প্রমাণিতও বটে। তিনি বলেন, ‘তাই বিএনপি নেতৃবৃন্দকে বলব, কর্মীদের অপরাধের দায়ভার দল হিসেবে আপনাদের বহন করতেই হবে। চাঁদাবাজেরা বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ততা দেখিয়েই জনতার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে। তাই জনতার ক্ষোভ বিএনপির প্রতি হবে, এটা স্বাভাবিক। জনতার এই প্রতিবাদকে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে দলের ভেতরে থাকা অপরাধীদের চিহ্নিত করুন। অপরাধ ঘটার আগে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। প্রকাশ্যে একজন মানুষকে পিশাচের নির্মমতায় হত্যা করার পরে আপনি জনতার কাছ থেকে মার্জিত ক্ষোভ আশা করতে পারেন না।’

চরমোনাইর পীর বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পরে ১৪ জুলাই ছিল দেশের রাজনীতির জন্য সবচেয়ে কলঙ্কময়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সর্বদা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর কিন্তু মার্জিত সমালোচনা করে আসছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সিনিয়র নায়েবে আমির তাঁর এক বক্তব্যে বিএনপির প্রতি পরামর্শ হিসেবে বলেছেন, এই এই স্লোগান মানুষ দিচ্ছে। আপনারা সতর্ক হোন। তাঁর সেই বক্তব্য খণ্ডিত আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই খণ্ডিত বক্তব্যকে কেন্দ্র করে দেশের ঐতিহাসিক সুফি ও সংস্কার ধারা চরমোনাইকে কেন্দ্র করে রাজপথে নোংরা স্লোগান দেওয়া হয়েছে। চরমোনাইয়ের মতো একটি আধ্যাত্মিক ধারাকে শায়েস্তা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিএনপির মঞ্চ থেকে। জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিকে কেন্দ্র করে পতিত ফ্যাসিবাদের ভাষায় ও ঢঙে স্লোগান দেওয়া হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। রাজনীতিকে এভাবে কলুষিত করা এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ করা বিএনপির মতো দলের পক্ষে শোভা পায় না।’

ইসলামী আন্দোলনের আমির গত ১০ মাসের আইনশৃঙ্খলা পরিসংখ্যানকে ভয়াবহ আখ্যা দিয়ে বলেন, সরকার কেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না, তা জাতিকে ব্যাখ্যা করতে হবে। কোনো অদৃশ্য শক্তি যদি সমস্যা তৈরি করে, তাহলে তা মোকাবিলা করতে হবে। কিন্তু সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে মোতায়েন থাকা অবস্থায় রাজনীতির এই পরিবেশ মেনে নেওয়া যায় না।