বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি

জামায়াত-এনসিপি আসন সমঝোতার আলোচনায়, আছে ভিন্নমতও

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে দলের অনেকের সম্মতি থাকলেও একটি অংশের ভিন্নমতও আছে। জামায়াতের সঙ্গে এনসিপির সমঝোতা হবে কি না, তা দু-এক দিনের মধ্যেই পরিষ্কার হবে।

এর আগে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের বোঝাপড়া হয়নি। এরপর জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

যদিও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর তাঁর সঙ্গে আসন সমঝোতার বিষয়ে আবার আলোচনার সম্ভাবনা দেখছেন এনসিপির শীর্ষ নেতারা। তাঁরা তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী। অবশ্য বিএনপির দিক থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো আভাস পাওয়া যায়নি।

এর আগে বিএনপির সঙ্গে এনসিপির আসন সমঝোতার বিষয়টি আলোচনায় এসেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের বোঝাপড়া হয়নি। এরপর জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচকভাবে এগোচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে।

এনসিপির দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এরই মধ্যে জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা করছেন। এনসিপি অন্তত ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর দিক থেকে এ সংখ্যাকে বেশি মনে করা হচ্ছে। যদিও জামায়াতের দিক থেকে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আবারও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার ব্যাপারে এনসিপির একটি অংশের সমর্থন আছে। তবে আরেকটি অংশের আছে ঘোর আপত্তি। জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা সামনে আসার পর দলটির একাংশের মধ্যে প্রতিক্রিয়াও হয়েছে। গতকাল এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক। তিনি এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ছিলেন।

এদিকে এনসিপি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে নির্বাচনী আসন সমঝোতায় যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির অন্যতম নেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের। তিনি বলেন, জামায়াতের কাছে এনসিপি ৫০টি আসন চেয়েছিল, দর-কষাকষির পর ৩০ আসনে রফা হয়েছে। এ শর্ত অনুযায়ী এনসিপি বাকি ২৭০ আসনে কোনো প্রার্থী দিতে পারবে না। এসব বিষয় উল্লেখ করে আবদুল কাদের গতকাল সকালে এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, সবকিছু ঠিক থাকলে শুক্রবার (আজ) এই জোটের ঘোষণা আসতে পারে।

এনসিপি অন্তত ৫০টি আসনে ছাড় চেয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামীর দিক থেকে এ সংখ্যাকে বেশি মনে করা হচ্ছে। যদিও জামায়াতের দিক থেকে এখনো এ বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে দু-এক দিনের মধ্যে জামায়াত ও এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের আবারও আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

অবশ্য জামায়াতের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে এনসিপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে দলটির গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে মাঠপর্যায়ে ঘুরেছেন, গণসংযোগ করেছেন। তাঁদের বেশির ভাগই বলেছেন, জিতে আসতে হলে বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে জোট বা সমঝোতায় যাওয়ার বিকল্প নেই। তাই জামায়াতের সঙ্গে যেমন আলোচনা হচ্ছে, বিএনপির সঙ্গেও আলোচনার পথ খোলা রাখছেন তাঁরা। বিএনপির প্রধান নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের সরাসরি দেখা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বলে এই নেতা জানান।

অন্যদিকে এনসিপি ও জামায়াতের আসন সমঝোতা হবে কি না; হলে কীভাবে হবে, তা কয়েক দিনের মধ্যে পরিষ্কার হবে বলে গতকাল এনসিপির একজন শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদককে জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ গতরাতে প্রথম আলোকে বলেন, এনসিপির সঙ্গে আলোচনা চলমান।

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার ব্যাপারে এনসিপির একটি অংশের সমর্থন আছে। তবে আরেকটি অংশের আছে ঘোর আপত্তি। জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা সামনে আসার পর দলটির একাংশের মধ্যে প্রতিক্রিয়াও হয়েছে। গতকাল এনসিপি থেকে পদত্যাগ করেছেন জামায়াতবিরোধী অংশের নেতা হিসেবে পরিচিত মীর আরশাদুল হক।

জোটে ভাঙনের সুর

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এনসিপি, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন—এই তিন দলের সমন্বয়ে ৭ ডিসেম্বর একটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটে। এই জোটের নাম ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট’।

এই জোট গঠনের প্রক্রিয়া যখন শুরু হয়, তখন বলা হয়েছিল যে বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় একটি শক্তিশালী জোট হয়ে ওঠার চেষ্টা করবে গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট। এখন এনসিপি ও এবি পার্টি বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় যাওয়ার যে চেষ্টা করছে, তাতে ক্ষুব্ধ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন।

এ বিষয়ে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার ভুঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক সংস্কার জোট বিএনপি ও জামায়াতের বাইরে তৃতীয় একটি শক্তিশালী জোট হয়ে উঠবে, তিন দলের আলোচনায় এই ঐকমত্য হয়েছিল। কিন্তু দুই দিকেই (বিএনপি ও জামায়াত) আলোচনা করে সেই বোঝাপড়া ইতিমধ্যে লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমরা শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানাব।’