বিএনপি নিজেরা বিপদে আছে, তারা পথহারা পথিকের মতো দিশাহারা—এই মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিপদে নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের স্থিতিশীলতার প্রতীক। শেখ হাসিনার হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ, দেশ নিরাপদ, অর্থনীতি নিরাপদ, ভাবমূর্তি নিরাপদ।
বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে কৃষক লীগ।
আলোচনা সভায় বিএনপি ‘সাম্প্রদায়িক শক্তির ঠিকানা’ বলে অভিযোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, মির্জা ফখরুল (বিএনপির মহাসচিব) বলেন, বাংলাদেশ মহাবিপদে। আসলে মহাবিপদে আছে বিএনপি। নেতা লন্ডনে, কর্মীরা হতাশ। কী করবে? হাল ধরার কেউ নেই। বিএনপি পথহারা পথিকের মতো দিশাহারা। এই দলের ভবিষ্যৎ আছে বলে দলটির কর্মীরাও বিশ্বাস করেন না।
দেশের উন্নয়ন, নিরাপত্তা, গণতন্ত্র, সার্বিক অগ্রগতির পথে প্রধান অন্তরায় বিএনপি, এই অভিযোগ তোলেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘সেমি ডেমোক্রেসি’ ছিল না বলেও দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, এত দিনে প্রমাণিত হয়েছে যে এবারের নির্বাচন কোনো সেমি–ডেমোক্রেসি নয়। এটা একটা ডেমোক্রেটিক ইলেকশন (গণতান্ত্রিক নির্বাচন)। তারা (বিএনপি ও যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল) আসেনি, তারপরও ৪২ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। অনেক উন্নত দেশেও এত লোক ভোটাধিকার প্রয়োগ করে কি না সন্দেহ।
এই আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন দল ও সংগঠনের নেতারা বক্তব্যের সময় এবং সঞ্চালক সঞ্চালনার সময় ওবায়দুল কাদেরসহ একে অপরকে নানা ধরনের প্রশংসাসূচক নানা বিশেষণে বিশেষায়িত করেন। এতে ‘উষ্মা’ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিশেষণ শুনতে শুনতে যা অবস্থা... ।’ ঢাকা শহরে ও বিদেশে কৃষক লীগের বিভিন্ন শাখা থাকার বিষয়েও সমালোচনা করেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কৃষক লীগকে শহরের মধ্যে আটকে না রেখে গ্রামের দিকেই নিয়ে যাওয়া ভালো। আমি তো মনে করি না কৃষক লীগের ধানমন্ডি, বনানী, গুলশান, বারিধারা—এসব শাখার কোনো প্রয়োজন আছে। একসময় শুনতাম কুয়েতে কৃষক লীগ, কাতারে কৃষক লীগ, সৌদি আরবে কৃষক লীগ, আমেরিকায় কৃষক লীগ! কারা কৃষক—ওই যে বিদেশে থাকে জায়গা হয় না, সব সংগঠনে ঢুকেছে। নতুন নতুন দোকান খুলে, নতুন লোক আসে। সেখানে একত্র হয়। এ রকম আরও নানান বিষয় আছে। এখন কৃষক লীগ সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই আলোচনা সভার মঞ্চে নানা ধরনের সবজি সাজানো ছিল। এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মঞ্চে অনেক লোভনীয় সবজি। জানি না এগুলোর উৎপাদকদের কেউ এখানে আছে কি না। দেখলাম, ছাদবাগান করেন অনেকে।’
ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেওয়ার আগে কৃষক লীগের বেশ কয়েকজন নেতা–কর্মীকে ছাদবাগান করায় পুরস্কার দেন তিনি।
গত এক বছরে দেশে কোনো প্রকারের খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়নি বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর বছর পার করতে সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কোনো দুর্যোগ–দুর্বিপাক না হলে সুন্দরভাবে বোরো ফসল ঘরে তোলা যাবে। এ বছর যে উৎপাদন হয়েছে, তা খুবই ভালো। এর মধ্য দিয়ে আগামী বছর দেশের মানুষের জন্য সুন্দর ও সম্ভাবনার সৃষ্টি হবে। যেখানে খাদ্যসংকটের জন্য বাড়তি চাপ সরকারের ওপর থাকবে না।’
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে শেখ হাসিনা গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছেন বলে উল্লেখ করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও চেষ্টার ফলে সব (জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র) ব্যর্থ করে দিয়েছেন। নতুন ফর্মুলা আবিষ্কার করেছেন।
মির্জা আজম আরও বলেন, ‘একটা সময় সবাই জানত, সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণই হলো সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন, কোনো রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করল কি করল না, সেটা প্রশ্ন না। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গেল কি না, সেটা হলো প্রশ্ন।’ শেখ হাসিনা সেই নির্বাচনের নৌকা মার্কা আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ—নিজের দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে ৪২ শতাংশ ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে এসেছেন।
আন্তর্জাতিকভাবে ২৫ শতাংশ ভোটার ভোটকেন্দ্রে গেলে সেটাই গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।
নির্বাচনের পরদিন থেকে আন্তর্জাতিক চক্র ‘ফুস হয়ে গেছে’ বলেও মন্তব্য করেন মির্জা আজম। তিনি বলেন, তাদের (আন্তর্জাতিক চক্র) সাড়াশব্দ নেই। কিন্তু এখনো জাতীয়ভাবে যারা ষড়যন্ত্র করছে, তারা বসে নেই।
কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীসহ সংগঠনটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। আলোচনা সভা শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় সেখানে।