রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন

মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে বাধা সৃষ্টি করছে বিএনপিসহ কয়েকটি দল: এনসিপি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় মৌলিক সংস্কারের বিষয়গুলো এলে বিএনপিসহ কয়েকটি দল সেগুলোতে দ্বিমত পোষণ করে একরকম বাধাগ্রস্ত করছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ১৪তম দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

আখতার হোসেন বলেন, ‘মৌলিক সংস্কারের মোটাদাগের যে বিষয়গুলো আছে, সেই প্রশ্নটা উত্থাপিত হলেই বিএনপির তরফ থেকে এবং তাদের সঙ্গে আরও কতিপয় দল সেখানে বাধা তৈরি করছে। তারা ঐকমত্যের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে। সেই এজেন্ডাগুলো যাতে ঐকমত্যের আলোচনার মধ্যেই না থাকে, সে ধরনের একটা পরিবেশ (তারা) এখানে তৈরি করার চেষ্টা করছে।’

এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘যখন উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আসে, তখনই বিএনপি ও কয়েকটি দল সরাসরি আপত্তি তোলে। তারা সংস্কারের এজেন্ডাকে আলোচনার টেবিল থেকেই বাদ দিতে চায়।’

আখতার হোসেন বলেন, উচ্চকক্ষ গঠনের ক্ষেত্রে পিআর পদ্ধতি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। সেখানে অন্তত ১ শতাংশ ভোট পাওয়া দলগুলোরও প্রতিনিধিত্ব থাকলে ভিন্নমতের চর্চা ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

এনসিপির পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা মৌলিক সংস্কারের রূপরেখায় ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি ও বিকেন্দ্রীকরণ, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, প্রধান বিচারপতির নিয়োগ, উচ্চকক্ষের গঠন ও কার্যাবলি এবং সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সংসদীয় কাঠামোতে উচ্চকক্ষের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে শুধু নিম্নকক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয়, উচ্চকক্ষেও একই সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকতে হবে। বিশেষ করে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮, ৫৬, ১৪২ এবং ৫৮ ক, যেগুলো রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামো নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ; সেগুলোর পরিবর্তনে গণভোটের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে এনসিপি।

আখতার হোসেন বলেন, কিছু দল মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবগুলোকে সংখ্যায় ফেলে বলছে, সব মানতে হবে কেন? কিন্তু এই দৃষ্টিভঙ্গি সংস্কারের মূল উদ্দেশ্যকেই খর্ব করে। তিনি বলেন, ‘যেসব ছোটখাটো বিষয়ে সব দল একমত, তা নিয়ে সমস্যা নেই। কিন্তু যখন ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, উচ্চকক্ষের ক্ষমতা—এসব মৌলিক বিষয়ে আলোচনা হয়, তখনই বিএনপি পিছিয়ে আসে।’

এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির সদস্যসচিব বলেন, ‘সংস্কার বলতে আমরা বুঝি রাষ্ট্রের কাঠামোগত রূপান্তর—ক্ষমতার ভারসাম্য, ন্যায্য নিয়োগ, আইন প্রণয়নে সংসদের উভয় কক্ষের অংশগ্রহণ এবং জনগণের প্রত্যক্ষ মতামতের প্রতিফলন। এসব বাদ দিয়ে কেবল কয়েকটি নমনীয় বিষয়ে একমত হওয়া প্রকৃত সংস্কারের বিকল্প হতে পারে না।’

আজকের আলোচনায় অংশ নিয়েছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজের সভাপতিত্বে এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক, বদিউল আলম মজুমদার, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।