জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে

জোটের পক্ষে যে-ই প্রার্থী থাকুক, তার পক্ষে আমরা কাজ করব: নাহিদ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে ৪৭ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এটা এখনো চূড়ান্ত নয় বলে জানিয়েছেন দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। ভুলত্রুটি হওয়াসহ বিভিন্ন চিন্তা মাথায় রেখে বাড়তি কিছু মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে মোট কতজন প্রার্থী হচ্ছেন, তা কয়েক দিনের মধ্যেই স্পষ্ট হবে।

আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম।

জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১১–দলীয় নির্বাচনী জোটভুক্ত দলগুলোর মধ্যে আসন সমঝোতার ভিত্তিতে এনসিপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এনসিপি প্রাথমিকভাবে ১২৫ আসনে প্রার্থী মনোনীত করলেও চূড়ান্তভাবে তাদের প্রার্থীর সংখ্যা সেটা থাকছে না।

এ প্রসঙ্গ তুলে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, এনসিপির প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তাঁদের বিষয়গুলো দলের পক্ষ থেকে কীভাবে সামলানো হবে।

জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এনসিপির সারা দেশের নেতা-কর্মীরা এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা গণভোটে “হ্যাঁ” ভোটের পক্ষে কাজ করবে এবং জোটের পক্ষ থেকে যে-ই প্রার্থী থাকুক না কেন, আমরা তার পক্ষে সবাই মিলে কাজ করব। এটা দলের স্বার্থে এবং এই সময়ে আমরা যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেটা আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই। ফলে দলের স্বার্থে এবং এই সময়ের রাজনীতির বৃহত্তর স্বার্থে সবাই বিষয়টি মেনে নেবে এবং তাদের যে ব্যক্তিগত আত্মত্যাগ, সেটা দল পরবর্তী সময়ে মূল্যায়ন করবে।’

এনসিপির পক্ষ থেকে বাড়তি কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কারণ উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এনসিপি কয়টি আসনে প্রার্থী দিচ্ছে, তা আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই আলাপ–আলোচনার মাধ্যমে পরিষ্কার হবে।’

এই সংবাদ সম্মেলনেই অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার এনসিপিতে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের ‘সম্মুখসারির যোদ্ধা’ আসিফ মাহমুদের যোগ দেওয়া এনসিপির জন্য ঐতিহাসিক বলে উল্লেখ করেন নাহিদ ইসলাম। আসিফের এই যোগদান এনসিপির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়ক হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নাহিদ ইসলাম জানান, দলে যোগ দেওয়ার পর এখন থেকে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এনসিপির মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করবেন। পাশাপাশি দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদের পাশে বসে থাকা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া বলেন, আগামী নির্বাচনে তিনি অভ্যুত্থানের ‘সহযোদ্ধাদের’ জয়ী করতে কাজ করবেন।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমি একজনের সংসদে যাওয়ার থেকে আমাদের জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সহযোদ্ধাদের আরও অসংখ্য সংখ্যায় সংসদে যাওয়ার ক্ষেত্রে যদি অবদান রাখতে পারি, আমার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে পারি, তাহলে এর থেকে বড় সাফল্য আর কিছু হতে পারে না।’ জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপিতে যোগ দিয়ে দলটির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের দায়িত্বে এসেছেন সাবেক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজ সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে

কোনো সহিংসতা ছাড়া বাংলাদেশ সফলতার সঙ্গে গণতান্ত্রিক পথে উত্তরণ করবে বলে আশা প্রকাশ করেন আসিফ মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘এই গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে আমি কাজ করে যাব।’

নির্বাচনে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘নির্বাচনে দুটি ব্যালট থাকবে। আমি মনে করি, একটি ব্যালটে আপনারা এমপি নির্বাচন করবেন, সরকার নির্বাচন করবেন। সেই সরকার ও এমপি থাকবে পাঁচ বছর। তাদের কমিটমেন্ট (প্রতিশ্রুতি) রাখবে কি রাখবে না, সেটা আমরা জানি না। তবে আপনারা যদি গণভোটে “হ্যাঁ”ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, এই সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আমি মনে করি যে এক শ বছর এগিয়ে যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানান, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী এনসিপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটি থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন। তাঁর পরিবর্তে আসিফ মাহমুদ এই দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁকে এনসিপির সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পরিষদেও যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান নাহিদ ইসলাম।