
ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালগঞ্জে নিহত চারজনের দাফন ও শেষকৃত্য সম্পন্নের ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির নেতারা বলেছেন, এ সরকারের সময় গুলি করে মানুষ হত্যার মতো ঘটনা কেউ প্রত্যাশা করেনি, অথচ তা ঘটেছে। এমনকি নিহতদের ময়নাতদন্ত ছাড়াই কবর দেওয়া ও সৎকারের মতো অনিয়মের খবর পাওয়া যাচ্ছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা শুধু আইনশৃঙ্খলার চরম লঙ্ঘনই নয়, বরং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারেরও মারাত্মক অবনতি।
জুলাই অভ্যুত্থানে রাজধানীর উত্তরায় পুলিশের গুলিতে নিহত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের উত্তরা থানা কমিটির সদস্য শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আয়োজিত সমাবেশে এ কথাগুলো বলেন সিপিবির নেতারা। শুক্রবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শহীদ রিজভীর প্রতি শ্রদ্ধা জানান তাঁরা।
সমাবেশে নেতারা গোপালগঞ্জের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং নাগরিকদের সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করার দাবি জানান। সমাবেশে বক্তব্য দেন সিপিবির সভাপতি মো. শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স), ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন শুভসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। সভা পরিচালনা করেন সিপিবির ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল।
সমাবেশে নেতারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান কোনো আকস্মিক ঘটনা ছিল না। এটা ছিল এক যুগের বেশি সময় ধরে স্বৈরাচারবিরোধী, কর্তৃত্ববাদবিরোধী সংগ্রামের ধারাবাহিক ফলাফল। এই অভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্ক্ষা ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন।
নেতারা আরও বলেন, দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে সরকারি দল বলে পরিচিতদের আর্মির সাঁজোয়া বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর পাহারায় সমাবেশ করতে সহায়তা করা হচ্ছে আর অন্যদিকে সরকারি ট্রেন ভাড়া দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলোর জনসভায় লোক আনার জন্য। মব সন্ত্রাস চলছে। নতুন নতুন রূপে ভয়ের রাজত্ব আবির্ভূত হচ্ছে। এ অবস্থা দেখার জন্য দেশের মানুষ গণ-অভ্যুত্থান করেনি।
সিপিবির নেতারা আরও বলেন, রাজনীতির অনেক ডামাডোলের মধ্যে এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে রাখাইনে করিডর, চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশিদের কাছে লিজ দেওয়া, অন্য দেশকে সমরাস্ত্র তৈরির কারখানার অনুমতি দেওয়া, আমেরিকার সঙ্গে গোপন ও অসম বাণিজ্য চুক্তি এবং জনগণের সম্মতি না নিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘকে মানবাধিকার কমিশন কার্যালয় স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটে চলেছে; যা দেশকে সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যবাদী শক্তির আধিপত্য বিস্তারের আরও বেশি সুযোগ করে দেবে।
গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে সিপিবির নেতারা বলেন, বৈষম্য দূর করার কথা সামনে এলেও এসব নিয়ে কোনো আলোচনা নেই। ২০২৪-এর আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসন সুনিশ্চিত করা যায়নি।
নেতারা বলেন, গণ-আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও হতাহতদের মধ্যে বেশিসংখ্যক হলো শ্রমজীবী সাধারণ মানুষ। কিন্তু সাধারণ মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ঘোষিত হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় কর্মহানি হচ্ছে। গ্রামের কৃষক-খেতমজুরেরা ফসলের লাভজনক দাম না পেলেও উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। অথচ উৎপাদন খরচ কমানো আর সাম্প্রতিক সময়ে জলাবদ্ধতায় অসহায় মানুষের পাশে ও বীজতলা নির্মাণে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
নেতারা বলেন, অনেক দলের দায়িত্বহীন আচরণ, কথাবার্তা পুরো রাজনৈতিক পরিবেশ ও সংস্কৃতিকে কলঙ্কিত করছে। এ অবস্থা থেকে এসব দলকে সরে আসতে হবে। তাহলে না হলে এর ফলে উদ্ভূত ঘটনার দায় তাদের নিতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে দলনিরপেক্ষভাবে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।