Thank you for trying Sticky AMP!!

রমজানে অসুস্থ অক্ষম ও মুসাফিরের বিধান

শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ ও সক্ষম, স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, সাবালক সব মুসলিম নারী ও পুরুষের জন্য রমজানে পূর্ণ মাস রোজা পালন করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমাদান মাস! যে মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে মানবের দিশারি রূপে ও হেদায়েতের সুস্পষ্ট নিদর্শন। সুতরাং তোমাদের যারা এ মাস পাবে, তারা যেন তাতে রোজা পালন করে। আর তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তবে অন্য সময়ে তা এর সমপরিমাণ সংখ্যায় পূর্ণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তিনি তোমাদের প্রতি কঠিন করতে চান না; যাতে তোমরা আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা করো যে তিনি তোমাদিগকে হেদায়েত দিয়েছেন সে জন্য এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

অসুস্থ ও ভ্রমণরত বা সফরে থাকা ব্যক্তি এবং যাঁরা রোজা পালনে সক্ষম নন, তাঁদের জন্য রয়েছে বিকল্প ব্যবস্থা। মাজুর–অক্ষম ব্যক্তিদের জন্যও রয়েছে বিশেষ ছাড়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সিয়াম বা রোজা নির্দিষ্ট কয়েক দিন (রমজান মাস মাত্র)। তবে তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তারা অন্য সময়ে এর সমপরিমাণ সংখ্যায় পূর্ণ করবে। আর যাদের রোজা পালনের সক্ষমতা নেই, তারা এর পরিবর্তে ফিদিয়া দেবে (প্রতি রোজার জন্য) একজন মিসকিনকে (এক দিনের নিজের) খাবার দেবে। অন্তর থেকে যে ব্যক্তি অধিক দান করবে, তবে তা তার জন্য অতি উত্তম। আর যদি তোমরা পুনরায় রোজা পালন করো, তবে তা তোমাদের জন্য অধিক উত্তম’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।

সফরে বা ভ্রমণে থাকা ব্যক্তি সম্ভব হলে রোজা পালন করবেন; এটাই উত্তম। আর কষ্ট হলে রোজা ছাড়তে পারবেন; তবে এই রোজা পরে সুবিধামতো নিকটতম সময়ে কাজা আদায় করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো এক রমজানে রোজা অবস্থায় মক্কা শরিফের পথে যাত্রা করলেন। কাদিদ নামক স্থানে পৌঁছার পর তিনি রোজা ছেড়ে দিলে সব লোক রোজা ছেড়ে দিলেন (বুখারি, হাদিস: ১৮২০)। অনুরূপ মুসাফির বা ভ্রমণকারীর জন্য নামাজেও ছাড় রয়েছে। চার রাকাত ফরজ নামাজগুলো কসর (সংক্ষিপ্ত), অর্থাৎ দুই রাকাত আদায় করবেন। সুন্নাতগুলো নফলের পর্যায়ে চলে যাবে। আদায় করলে সুন্নাতের সওয়াব পাবেন; তরক করলে নফল তরক হবে।

রোজা পালনে অক্ষম ব্যক্তির রোজার পরিবর্তে যে দান করেন, তাকে ফিদিয়া বলে। ফিদিয়া শব্দের অর্থ হলো বিনিময়, মূল্য, পণ বা মুক্তিপণ; বিকল্প বা স্থলাভিষিক্ত; সম্মানজনক প্রতিদান। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন মুসলমান বার্ধক্যজনিত কারণে বা অসুস্থতা অথবা অন্য যেকোনো কারণে রোজা পালনে অক্ষম বা অপারগ হলে এবং পুনরায় সুস্থ হয়ে বা সক্ষমতা ফিরে পেয়ে রোজার কাজা আদায় করার মতো সম্ভাবনা না থাকলে, প্রতিটি রোজার জন্য একটি সদকাতুল ফিতরের সমপরিমাণ ফিদিয়া প্রদান করবেন। ফিদিয়া প্রদানে অসমর্থ ব্যক্তির জন্য তা–ও জরুরি নয়। ফিদিয়া প্রদান করার পর (এবং যিনি রোজা রাখায় অক্ষম ও ফিদিয়া প্রদানেও অসমর্থ ছিলেন) যদি পরবর্তী রমজানের আগে ওই ব্যক্তি রোজা পালনে সক্ষমতা লাভ করেন, তবে ওই রোজাগুলো কাজা আদায় করতে হবে। যদি সক্ষমতার দিনগুলো রমজান মাস অপেক্ষা কম হয়, তবে শুধু সেই দিনগুলো রোজা আদায় করবেন। ফিদিয়া দেওয়া রোজার কাজা কোনোভাবেই পরের রমজান বা তার পরবর্তী সময়ের জন্য প্রযোজ্য হবে না, ওই ব্যক্তি নির্দায় থাকবেন।

জাকাত ও সদকার হকদারদের ফিদিয়া প্রদান করা যায়। এক দিনের ফিদিয়া একাধিক ব্যক্তির মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া যাবে, আবার একাধিক দিনের ফিদিয়া এক ব্যক্তিকে দেওয়া যাবে। একাধিক দিনের রোজার ফিদিয়া একত্রেও আদায় করা যায় এবং অগ্রিমও প্রদান করা যায়। এক ব্যক্তির ফিদিয়া একাধিক ব্যক্তিকে এবং একাধিক ব্যক্তির ফিদিয়া এক ব্যক্তিকে প্রদান করা যাবে।

যাঁকে ফিদিয়া দেওয়া হবে, তাঁর রোজাদার হওয়া জরুরি নয়, যেমন: মিসকিন শিশু বা অতিবৃদ্ধ দুর্বল–অক্ষম–অসুস্থ–অসহায় গরিব ব্যক্তি, যিনি নিজেও রোজা পালনে অক্ষম। একজনের রোজা আরেকজন রাখতে পারেন না। তাই ফিদিয়া রোজার পরিবর্তে রোজা নয়; ফিদিয়া হলো রোজার পরিবর্তে খাদ্য বা তার মূল্য প্রদান করা।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ও আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজমের সহকারী অধ্যাপক

smusmangonee@gmail,com