প্রবাদ আছে, কথার চেয়ে কাজের গুরুত্ব বেশি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এ কথা অনেক সময় শুধু বইয়ের পাতায় বা মুখের কথায় সীমাবদ্ধ থাকে। বিশেষ করে আমাদের অঞ্চলের মানুষ প্রায়ই অতিরিক্ত কথায় সময় নষ্ট করেন। কোনো বিষয় পেলেই গসিপ, ট্রল বা অপ্রয়োজনীয় আলোচনা শুরু হয়। এতে মূল্যবান সময় নষ্ট হয় এবং গুনাহের পাল্লা ভারী হয়, যা অনেকেই খেয়াল করেন না।
মহান আল্লাহ বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।’ (সুরা ক্বাফ, আয়াত: ১৮)
প্রতিটি কথা, ভালো হোক বা মন্দ, রেকর্ড করা হয়। কিছু কথা আমলনামার পুণ্য নষ্ট করে, আবার ভালো কথায় সওয়াব অর্জন হয়। কিন্তু অনেকে কাউকে খোঁচা দিয়ে কথা বলে তৃপ্তি পান।
মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে, তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার নিকটেই রয়েছে।সুরা ক্বাফ, আয়াত: ১৮
অথচ মহানবী (সা.) বলেছেন, কোনো মুসলিমের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলা বা ভালো কথা বলা সাদাকার সমতুল্য। অপ্রয়োজনীয় কথা, মিথ্যা, পরনিন্দা বা গিবত দুনিয়া ও আখিরাতে বিপদ ডেকে আনে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও পক্ষে মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এতটুকু যথেষ্ট যে সে যা শোনে তা–ই বলে বেড়ায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫)
এ হাদিস আমাদের সতর্ক করে, যাচাই না করে কোনো সংবাদ বা কথা ছড়ানো মিথ্যার শামিল হতে পারে, এমনকি যদি নিজে বানিয়ে না বলা হয়। আজকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে, কোনো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বা দুর্ঘটনা ঘটলেই ভুল, মিথ্যা বা বানোয়াট তথ্য, ছবি ও ভিডিও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর উদ্দেশ্য হতে পারে ভাইরাল হওয়া, মানুষকে বিভ্রান্ত করা বা সত্য গোপন করা। মহান আল্লাহই এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে ভালো জানেন।
গুজব, ভুয়া খবর বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্রুত ছড়ায়, যেমন বলা হয়, ‘দুঃসংবাদ বাতাসের আগে ছড়ায়।’ কেউ জেনেবুঝে, আবার কেউ না বুঝে এমন কাজ করেন। অস্থির সময়ে বা বিপদের মুহূর্তে গুজব মানুষের ক্ষতি করে, বিশৃঙ্খলা ও অনাস্থা তৈরি করে। মিথ্যা পোস্ট মানুষের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করতে, সম্মানহানি করতে বা এমনকি জীবন বিপর্যস্ত করতে পারে।
গুজব, ভুয়া খবর বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দ্রুত ছড়ায়, যেমন বলা হয়, ‘দুঃসংবাদ বাতাসের আগে ছড়ায়।’
যাচাই না করে কথা বলা বা তথ্য ছড়ানো কিয়ামতের দিন জবাবদিহির কারণ হবে। যারা মিথ্যা বিশ্বাস করে প্রচার করে, তারাও অপরাধে অংশীদার হয়, যদিও তারা শুরুতে তা না করে থাকে।
সব মানুষের মানসিক সক্ষমতা এক রকম নয়। দুর্ঘটনার খবরে কেউ অতিরিক্ত আতঙ্কগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তাই কোনো সংবাদের সত্যতা যাচাই করার সুযোগ না থাকলে চুপ থাকাই নিরাপদ। কারণ, যেখানে কথা বলা ও চুপ থাকা সমান, সেখানে চুপ থাকা সুন্নাহ। এমনকি বৈধ কথাও কখনো হারাম বা মাকরুহের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যে মহান আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, তার উচিত ভালো কথা বলা অথবা চুপ থাকা।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬,০১৮; সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৪৭)
যে চুপ থাকে, সে পরিত্রাণ পায়।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৫০১
ইসলামে অপ্রয়োজনীয় কথা এড়িয়ে চুপ থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, ‘যে চুপ থাকে, সে পরিত্রাণ পায়।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২,৫০১
উপকারী কথা ছাড়া অপ্রয়োজনীয়, মিথ্যা বা পরচর্চার কথা থেকে বিরত থাকতে হবে। মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কথা বলা বা সংবাদ শেয়ারের আগে যাচাই-বাছাই করা। এতে অন্যদের নিরাপদ রাখার পাশাপাশি নিজেদেরও নিরাপদ রাখা যায়। চুপ থাকা যখন উপকারী, তখন তা ইবাদত। এ অভ্যাস আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ বয়ে আনবে, ইনশা আল্লাহ।
ইসমত আরা: লেখক ও শিক্ষক