দেওবন্দ দারুল উলুম দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বেসরকারি ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকের কাছে এটি ‘এশিয়ার আল-আজহার’ নামে পরিচিত। এটি ভারতের উত্তর প্রদেশের সাহারানপুর জেলার দেওবন্দ শহরে অবস্থিত।
১৮৬৬ সালের ৩০ মে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহের পর ভারতের মুসলমানরা যখন খুব অসহায় ও দিশাহারা অবস্থার মধ্যে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও ইসলামি পুনরুজ্জীবনবাদী চেতনা বিস্তারের লক্ষ্যে মওলানা কাসিম নানুতাবির (১৮৩২-৮০ খ্রি.) নেতৃত্বে দেওবন্দের সাত্তা মসজিদে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম শুরু হয়। এর প্রথম শিক্ষক ছিলেন মুল্লা মাহমুদ দেওবন্দী।
ব্রিটিশবিরোধী রেশমি রুমাল আন্দোলনের নায়ক মাহমুদ আল-হাসান ছিলেন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রথম ব্যাচের ছাত্র, যিনি পরবর্তীকালে শায়খ আল-হিন্দ নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনার ক্ষেত্রে যে আটটি মূলনীতি গ্রহণ করা হয়, তার উদ্দেশ্য ছিল মাদ্রাসাটিকে সরকার ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিদের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা। নিয়ম অনুযায়ী আট বছর মেয়াদি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনের পর এতে দাওরা-ই–হাদিস পর্যন্ত আরও আট বছর আরবি ভাষা ও সাহিত্য, ব্যাকরণ, অলংকারশাস্ত্র, তর্কশাস্ত্র, দর্শন, ফিকাহ, উসুল-ই-ফিকাহ, হাদিস, উসুল-ই-তফসির, ফারাইদ, আকাইদ, কালাম, মুলজারা, কিরাআত, তাজবিদ এবং ফারসি ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা দেওয়া হয়।
দাওরা-ই-হাদিসের পর এক বছর মেয়াদি তাকমিল-ই-তফসির, তাকমিল-ই-মাকুলাত, তাকমিল-ই-দীনিয়াত ও দওয়া প্রশিক্ষণ এবং দুই বছরের তাকমিল-ই-সাদার ও চার বছরের জন্য ইউনানি চিকিৎসাবিজ্ঞানে পাঠ্যক্রম নির্দিষ্ট আছে। একসময়ে এর সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম ছিল উর্দু। ভারতের মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের গ্রন্থাগারেই সর্বাধিক ইসলামবিষয়ক গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি সংরক্ষিত আছে। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান—উপমহাদেশের এই তিন দেশে দেওবন্দের অনুসারী বহু মাদ্রাসা রয়েছে, যেগুলো কওমি মাদ্রাসা নামে পরিচিত। এগুলোর মধ্যে যেগুলো সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত, সেগুলোকে সাধারণত খারিজি মাদ্রাসা বলা হয়।
সূত্র: ‘দেওবন্দ দারুল উলুম’, যার যা ধর্ম, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, প্রথমা প্রকাশন, ২০১৪