Thank you for trying Sticky AMP!!

মহানবী (সা.)–র কোন জীবনী পড়ব

বাজারে নবীজি (সা.)–এর জীবনী তো কম নেই। কোন জীবনীটা পড়ব? নবীজি (সা.)–র কোন জীবনীটা উত্তম, এমন প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়। একেক সময় একেকজনকে একেক বইয়ের কথা বলতে হয়। প্রশ্নকর্তার অবস্থা বুঝে উত্তর দেওয়া হয়।

তবে কোন জীবনীটা পড়ব—এই প্রশ্নের আগে নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত, আমি নবীজীবনী কেন পড়তে চাই? কীভাবে পড়তে চাই? তাঁর ধারাবাহিক জীবনী জানতে? তিনি কেমন ছিলেন সেটা জানতে? তাঁর মোজেযা বা অলৌকিক ঘটনাবলি জানতে? নাকি আরও গভীর কিছু?

নবীজি (সা.)–কে জানার জন্য মোটা দাগে পাঁচ ধরনের বই আছে।

  ১. ধারাবাহিক জীবনী

এ ধরনের জীবনীকে বলে সিরাত। একসময় বলা হতো ‘মাগাজি’ বা ‘সিয়ার’। নবীজি (সা.)–এর জন্মপূর্ব সময়, জন্ম ও বংশ পরিচয়, বেড়ে ওঠা, বিয়ে, নবুয়ত, মক্কাত্যাগ, মদিনা, সন্ধি, যুদ্ধ, মক্কা বিজয়—এই ধারাক্রমে যেসব বই লেখা তাকে ‘সিরাত’ গ্রন্থ বলে। যদি এভাবে জানা আপনার উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আপনি পড়তে পারেন নীচের যে-কোনওটি:

Also Read: যে ১২টি আমলে রিজিক বাড়ে

ক. সফিউর রহমান মোবারকপুরির লেখা আর রাহিকুল মাখতুম। দারুল হুদা কুতুবখানা থেকে প্রকাশিত মীযান হারুনের অনুবাদ অথবা আয-যিহান পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত কাজী আবুল কালাম সিদ্দিকের অনুবাদ পড়তে পারেন।

খ. আবুল হাসান আলি নদভির লেখা নবীয়ে রহমত। বাংলায় এর একটা অনুবাদই আছে আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলীর করা। মাকতাবাতুল হেরা থেকে প্রকাশিত।

গ. মওলানা আবুল কালাম আজাদের লেখা রসুলের রহমত। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ।

৪. মাজিদ আলী খানের লেখা মুহাম্মাদ: দ্য ফাইনাল মেসেঞ্জার। গার্ডিয়ান প্রকাশনীর এ নামে একটা অনুবাদ নতুন প্রকাশ পেয়েছে। শেষ নবী নামে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদও আছে।

উপরের সবগুলো বিদেশি লেখকদের লেখা বই। আপনি যদি বাংলাভাষায় লেখা বাংলাদেশি কারও নবিজীবনী খোঁজেন, তাহলে একটা গ্রন্থের কথা বলা যায়—শাইখুল হাদিস মাওলানা মুহম্মদ তোফাজ্জল হোসাইনের লেখা হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা (স.) সমকালীন পরিবেশ ও জীবন। ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত।

Also Read: অকালমৃত ও গর্ভপাত হয়ে যাওয়া শিশুরা হবে নাজাতের উপায়

২. ব্যক্তি নবী সম্পর্কিত

নবীজি ব্যক্তি হিসেবে কেমন ছিলেন, এটি সে ধরনের বই। একে বলে শামায়েল। এ ধরনের দুই রকমের হয়।

প্রথমত, নবীজি (সা.) দেখতে কেমন ছিলেন, তাঁর হাঁটাচলা–হাসি কেমন, তাঁর আকার ও শারীরিক গড়ন কেমন, তাঁর জীবনাচরণ ইত্যাদি কেমন—সে বিষয়ে। এসব বইয়ে তাঁর আত্মীয় ও পরিবারবর্গের স্মৃতিও অনেক লেখক নিয়ে আসেন।

তিরমিজি শরিফের লেখক ইমাম তিরমিজির লেখা শামায়েলে তিরমিজি এ বিষয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ। বাংলায় পড়তে চাইলে আশরাফিয়া বুক হাউস থেকে প্রকাশিত মুফতী তাওহীদুল ইসলামের অনুবাদটা নিতে পারেন।

দ্বিতীয়ত, শামায়েল গ্রন্থকারেরা প্রথম দিকে কেবল নবীজির (সা.) দৈহিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে তাঁর প্রকৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করতেন। পরে আরও বিস্তৃতভাবে তাঁর ইবাদত-বন্দেগি, বিনয়, কোমলতা ইত্যাদি অন্যান্য দিক তুলে ধরা হতে থাকে। তাঁর নামাজ, তাকওয়া, আখলাক থেকে নিয়ে মানুষের সঙ্গে কিংবা স্রষ্টার সঙ্গে তাঁর আচরণ সঙ্কলন করতে থাকেন।

Also Read: কাবা শরিফের মাতাফে মার্বেল পাথরের কাহিনি

দুটি দিককেই অন্তর্ভুক্ত করে বইয়ের তালিকা দেওয়া যাক।

ক. সালেহ আহমদ শামীর লেখা মিন মায়িনিশ শামায়িল। ব্যক্তি ও নবী নামে আকিক পাবলিকেশন্স থেকে অনুবাদ বেরিয়েছে।

খ. আদিল সালাহির লেখা মুহাম্মাদ: ম্যান অ্যান্ড প্রফেট। আবু জাফরের অনুবাদে মানুষ ও রসুল মুহাম্মাদ নামে খোশরোজ কিতাব মহল এনেছে।

যারা কেবল শুধু দ্বিতীয় প্রকারে আগ্রহী, তাদের জন্য দুটি বইয়ের নাম বলা যাক।

ক. রাগিব সারজানির লেখা উসওয়াতুল লিল আলামিন। একই নামে শামীম আহমাদ অনুবাদ করেছেন। মাকতাবাতুল হাসান থেকে প্রকাশিত। নবীজি: যার আদর্শে বিমোহিত পৃথিবী নামে একই বইয়ের আরেকটি অনুবাদ প্রকাশ করেছে মুহাম্মদ পাবলিকেশন।

খ. সালেহ আল মুনাজ্জিদের লেখা কাইফা আমালাহুম। বাংলায় যেমন ছিলেন তিনি নামে রুহামা পাবলিকেশন এটি ২ খণ্ডে প্রকাশ করেছে।

 ৩. মুজিজা সম্পর্কিত

মুজিজা মানে অলৌকিক ঘটনাবলি। নবীজীবনের এই ধরনটি একসময় বেশ জনপ্রিয় ছিল। একে ‘দালায়িলুন নবি’ নামে শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এ বিষয়ে দুটো বইয়ের নাম বলা যায়।

ক. জালালুদ্দিন সুয়ুতির লেখা খাসায়েসুল কুবরা। মাওলানা মুহিউদ্দীন খান এর বাংলা অনুবাদ করেছেন। মদিনা পাবলিকেশান্স থেকে প্রকাশিত।

খ. মাওলানা হাবীবুর রহমানের লেখা লামিয়াতুল মুজিজাত। লেখক দেওবন্দের অধ্যক্ষ ছিলেন। কওমি মাদরাসায় এই বইটি পাঠ্য। কাব্যাকারে লেখা নবীজি (সা.)–র একশ মুজিজা এখানে সন্নিবেশিত হয়েছে। মাকতাবাতুল ফাতাহ, ইসলামিয়া কুতুবখানা, আল কাউসার প্রকাশনী এর বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেছে।

Also Read: রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে যা করা যায়

৪. বিষয়ভিত্তিক জীবনালেখ্য

নবীজীবনের বিভিন্ন অংশ নিয়ে রচিত গ্রন্থ। অজস্র বই আছে এই ধরনে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটা বইয়ের নাম তুলে দেওয়া হলো।

ক. আলী সাল্লাবির লেখা গাযওয়াতুর রসুল। নবীজির যুদ্ধ জীবন: পাঠ ও পর্যালোচনা শিরোনামে অনুবাদ করেছেন কাজী আবুল কালাম সিদ্দিক। আকিক পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত।

খ. ফয়সাল বিন আলী বাদানীর লেখা হাকাজা কানা-ন্নাবী (স.) ফি রমাদান। রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন শিরোনামে অনুবাদ করেছেন কাউসার বিন খালেদ। ইসলাম হাউস থেকে প্রকাশিত।

গ. সালেহ আল মুনাজ্জিদের লেখা নবীজির সংসার। প্রকাশ করেছে মাকতাবাতুল আসলাফ।

ঘ. ইবনুল কায়্যিম জাওযির লেখা আল্লাহর রসুল কিভাবে নামাজ পড়তেন। আবদুস শহিদ নাসিমের অনুবাদে বই প্রকাশ করেছে বর্ণালী বুক সেন্টার।

ঙ. মাওলানা মুস্তফা খন্দকার সঙ্কলিত নবীজি (সা.) বয়ান’। প্রকাশক মাকতাবাতুল ইসলাম।

চ. বুলবুল সরোয়ার লিখিত নবিজীবনের শত বিষয়। প্রকাশক চমনপ্রকাশ।

৫. নবীজীবনের বিশ্লেষণ

নবীজি (সা.) বিভিন্ন কর্মতৎপরতা আধুনিক সময়ের ভাষায় বিশ্লেষণ করা হয় এই বিভাগে। যেমন হিশাম আওয়াদির বি স্মার্ট উইথ মুহাম্মাদ, অনুবাদক মাসুদ শরীফ। রামাজান আল বুতির ফিকহুস সিরাহ, তারিক রামাদানের ফুটস্টেপ অব প্রোফেট, মির্জা ইওয়ার বেগের লিডারশিপ লেসনস ইত্যাদি। সবগুলো বইয়েরই একই নামে অনুবাদ আছে।

বাদশাহ ফয়সাল পুরস্কারপ্রাপ্ত একমাত্র বাংলাদেশি লেখক মোহর আলী রচিত একটি অসামান্য গ্রন্থ সিরাতুন্নবি অ্যান্ড দ্য ওরিয়েন্টালিস্ট। ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত সীরাত বিশ্বকোষ অষ্টম ও নবম খণ্ড এই বইটিরই অনুবাদ।

  আরও কিছু ভালো বই

এ ছাড়াও নবীজীবন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষামূলক বইপুস্তক আছে। যেমন, মওলুদুন্নবি ধরনের কিছু বই আছে। এটি নবীজি (সা.)–এর জন্মবৃত্তান্তের বিবরণ। নবীজিকে নিয়ে বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থও আছে—যেমন কাজী নজরুল ইসলামের মরুভাস্কর বা ফররুখ আহমদের সিরাজাম মুনীরা—যার কোনো কোনোটা ধারাবাহিক জীবনীর মতো, কোনোটা পুঁথির মতো।

Also Read: তিনজন লোকের কাহিনি

শিশু-কিশোরদের নবীজীবনী

নবীজীবন নিয়ে শিশু-কিশোরদের উপযোগী বেশ কয়েটি ভালো বই এখন বাজারে আছে। যেমন:

ক. আবু তাহের মিসবাহের লেখা শিশু সীরাত সিরিজ। দারুল কলম থেকে প্রকাশিত।

খ. ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভির লেখা প্রিয় নবী। মাকতাবাতুল আশরাফ থেকে প্রকাশিত।

গ. আবদুল আযীয আমানের লেখা একগুচ্ছ কিশোর-সীরাত সাহিত্য: নবীজীবনের নিউক্লিয়াস। বইকেন্দ্র থেকে প্রকাশিত।

  শুরু থেকে জানতে হলে

কেউ যদি নবীজিকে প্রথম থেকে জানতে চান, তাহলে ওপরের ধরনগুলো সামনে রেখে একের পর এক ধারবাহিক পড়তে পারেন। অর্থাৎ, প্রথমে এক নম্বর বইগুলো, তারপর দ্বিতীয়—এভাবে।

একেবারে নতুন হলে প্রথমে সংক্ষিপ্ত সিরাত গ্রন্থ থেকে পড়লে ভালো। দুটি সংক্ষিপ্ত সিরাত বইয়ের নাম বলছি, যা এক বসায় আনন্দ নিয়ে পড়ে শেষ করা যায়।

ক. জুবাইর আহমদ আশরাফের লেখা সংক্ষিপ্ত সিরাত। দারুত তিবয়ান থেকে প্রকাশিত।

খ. মুসা আল হাফিজের মহানবীর জীবনপঞ্জি। মুহাম্মদ পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত।

এরপর পূর্ণাঙ্গ সিরাতগ্রন্থ পড়ুন। এরপর শামায়েল ধরুন। ব্যক্তি ও নবী পড়ুন। এরপর ফিকহুস সিরাহ পড়ুন। এই পর্যায়ে এসে একটা বইয়ের কথা বলি, যার কথা আগে বলা হয়নি। সেটি হলো ড. ইয়াসির কাজির সিরাত লেকচারের অনুবাদ মহানবি মুহাম্মদের (স) জীবন ও সময় (মাওলা ব্রাদার্স)। তিন খণ্ডে লেখা এই বইটা পড়ুন। সবশেষে পড়ুন অন্যান্য বিশ্লেষণধর্মী বই।

ওপরের উল্লেখ করা বইগুলোর চেয়েও ভালো, দরকারি ও উন্নত বই থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের জানাশোনা মতে প্রকাশনার মান, সহজপাঠ্য, সহজবোধ ও সহজলভ্য যে-বাংলা বইগুলো প্রথম পর্যায়ে পাঠকদের বলা যায় বলে মনে হয়েছে, সেগুলো প্রস্তাব করা হয়েছে।

আল্লাহ আমাদের তৌফিক দিন।

Also Read: জুমার খুতবা শুনে গাছের গুঁড়ি কেঁদেছিল