Thank you for trying Sticky AMP!!

বিজয়ের জন্য চাই ধৈর্য ও সংহতি

ধর্ম

ধৈর্য ও দৃঢ়তা—শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলির মধ্যে অন্যতম। মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনের স্থানে স্থানে মহান আল্লাহ তাআলা নিজেকে ধৈর্যশীল ও পরম সহিষ্ণু হিসেবে পরিচয় প্রদান করেছেন। ধৈর্যের আরবি হলো ‘সবর’। সহিষ্ণুতার আরবি হলো ‘হিলম’। সবর ও হিলম শব্দ দুটির মধ্যে কিঞ্চিৎ তফাত রয়েছে। সবর বা ধৈর্য অপেক্ষা হিলম তথা সহিষ্ণুতা উন্নততর। তবে এ উভয় শব্দ কখনো কখনো অভিন্ন অর্থে তথা উভয় অর্থেও একে অন্যের স্থানে ব্যবহৃত হয়। হিলম তথা সহিষ্ণুতা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ তো সম্যক প্রজ্ঞাময়, পরম সহনশীল।’ (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৫৯)

সবর তথা ধৈর্যের বিষয়ে হজরত আইয়ুব (আ.) সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি তো তাকে পেলাম ধৈর্যশীল। সে কত উত্তম বান্দা! সে ছিল আমার অভিমুখী।’ (সুরা-৩৮ সদ, আয়াত: ৪৪)

‘নিশ্চয় ইহাতে তো নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক অতি ধৈর্যশীল ও পরম কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।’ (সুরা-১৪ ইব্রাহিম, আয়াত: ৫) 

সফলতার জন্য চাই ধৈর্য, দৃঢ়তা ও সংহতি। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কোরআন কারিমে বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা ধৈর্য ধারণ করো, ধৈর্যের প্রতিযোগিতা করো এবং সুসম্পর্ক স্থাপনে আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে অবিচল থাকো, আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফল হতে পারো।’ (সুরা-৩ আল–ইমরান, আয়াত: ২০০)

বিশ্বাসী মুমিনের সফলতার জন্য ধৈর্য ও দৃঢ়তা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পর একে অন্যকে সত্যের উপদেশ ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’

‘আমি তোমাদের অবশ্যই পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন”(আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী)।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৫-১৫৭) 

ইসলামের প্রধান বিষয় হলো ‘তাওহিদ’ তথা একত্ববাদ। মুসলিম মানেই এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী। মুসলিম ঐক্যের মূল বিষয় হলো আল্লাহ, রাসুলুল্লাহ ও কিতাবুল্লাহ। অর্থাৎ এক আল্লাহর প্রতি ইমান বা বিশ্বাস, আল্লাহর রাসুল হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি সর্বোচ্চ ভালোবাসা ও সম্পূর্ণ আনুগত্য এবং আল্লাহর কিতাব কোরআন মাজিদের পরিপূর্ণ অনুসরণ। 

মহাগ্রন্থ কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে (কোরআন) সম্মিলিতভাবে ধারণ করো, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না এবং তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত স্মরণ করো। যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের অন্তরগুলোয় প্রীতি দিয়েছেন, ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে ভ্রাতৃরূপ লাভ করেছ।’ (সুরা-৩ আল–ইমরান, আয়াত: ১০৩)

ইসলামি ঐক্যের প্রধান সূত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি বলবে, “আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই”, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি: ৪২)

মুমিন সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যারা আমাদের নামাজ মানে, আমাদের কিবলা মানে এবং আমাদের জবাই করা হালাল জন্তু হালাল মনে করে; তারা মুসলিম। তাদের জন্য আল্লাহ ও তার রাসুল (সা.) জিম্মাদার। সুতরাং তোমরা আল্লাহর জিম্মাদারির খিয়ানত করো না (তাদের অমুসলিম বলো না)।’ (বুখারি: ৩৮৪-৩৮৫)

কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল এবং তাঁর সঙ্গী-সাথি, অনুগামী-অনুসারীগণ অবিশ্বাসী-অকৃতজ্ঞদের বিরুদ্ধে কঠোর, নিজেদের (বিশ্বাসী-কৃতজ্ঞদের) মাঝে দয়ার্দ্র।’ (সুরা-৪৮ ফাত, আয়াত: ২৯) 

বিশ্বাসী মুমিনের সফলতার জন্য ধৈর্য ও দৃঢ়তা অপরিহার্য। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ! মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পর একে অন্যকে সত্যের উপদেশ ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়।’ (সুরা-১০৩ আসর, আয়াত: ১-৩) 

‘হে মুমিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে তোমরা সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৫৩) ‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো (আল্লাহর হুকুম পালন করো) তবে তিনি তোমাদের (প্রতিশ্রুত) সাহায্য করবেন এবং তোমাদের অবস্থান দৃঢ় করবেন (প্রতিশ্রুত বিজয় দান করবেন)।’ (সুরা-৪৭ মুহাম্মদ, আয়াত: ৭)

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী

যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম

smusmangonee@gmail.com