প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঘুমের সঠিক আদবকেতা

ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভালোভাবে পবিত্র হওয়া জরুরি। ডান কাত হয়ে শোয়ার অভ্যাস ভালো। বারা ইবনে আজিজ (রা.)-এর কাছ থেকে একটি হাদিসটি জানা যায়। তিনি বলেছেন, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে বললেন, রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতির সময় নামাজের অজুর মতো অজু করে ডান কাতে শুয়ে বলবে, ‘হে আল্লাহ! আমি নিজেকে আপনার কাছে সমর্পণ করলাম এবং অনুগত হলাম। আমার কাজ আপনার ওপর ন্যস্ত করলাম, আমার পিঠ আপনার কাছে সোপর্দ করলাম এবং আপনার প্রতি আগ্রহে ও ভয়ের সঙ্গে আপনার সাহায্যের প্রতি ভরসা করলাম। আপনি ছাড়া অন্য কোথাও মুক্তি ও নিরাপত্তার স্থান নেই। আমি আপনার সেই কিতাবে বিশ্বাস করি, যা আপনার প্রেরিত নবীর ওপর অবতীর্ণ করেছেন।’ এরপর নবী (সা.) বলেন, ‘এভাবে (ওই রাতে) যদি তোমার মৃত্যু হয়, তাহলে তুমি ইসলামের ওপরেই মারা গেলে। এটাই হবে তোমার সর্বশেষ কথা।’ (বুখারি, হাদিস: ২৪৭, মুসলিম, হাদিস: ২,৭১০)

কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তাঁর আরও একটি নিদর্শন হলো রাত ও দিনে তোমাদের ঘুম এবং আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে তোমাদের (জীবিকা) অন্বেষণ।’ (সুরা রুম, আয়াত: ২৩)

আল্লাহ আরও বলেন, ‘তোমাদের ঘুমকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী, রাত্রিকে করেছি আবরণ।’ (সুরা নাবা, আয়াত: ৯-১০)

ঘুম মানুষের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ঘুমানোর ক্ষেত্রেও সুন্নত থেকে শিষ্টাচারের নির্দেশনা পাওয়া যায়। ঘুমাতে যাওয়ার আগে বেশ কিছু আমল আছে, যা নিয়মিত অনুশীলন করা উচিত।

বিছানায় শোয়ার আগে ভালোমতো গায়ের পোশাক এবং শোয়ার বিছানা দুটো ভালোভাবে ঝেড়ে নিতে হবে। আবু হুরায়রা (রা.)-র কাছ থেকে একটি হাদিস পাওয়া যায়। রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ তার বিশ্রাম নেয় সে যেন তার পরিধেয় বস্ত্রের ভেতরের দিক দিয়ে বিছানা ঝেড়ে নেয়। কেননা, সে জানে না তার চলে যাওয়ার পর বিছানায় কী এসেছে। (মুসলিম, হাদিস: ২,৭১৪, আহমাদ, হাদিস: ৭,৭৫২)

আমর ইবনে শোয়াইব (রহ.) তাঁর দাদার কাছ থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের সন্তানদের বয়স সাত বছর হলে তাদের নামাজের জন্য নির্দেশ দাও। যখন তাদের বয়স ১০ বছর হয়ে যাবে তখন (নামাজ না পড়লে) তাদেরকে শাসন করবে এবং তাদের বিছানা আলাদা করে দেবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯৫)

ক্লান্তি বা অন্য কারণে রাতের নামাজ পড়ার সময় কারও ঘুম আসতে পারে। সেই সময় অনেকে জোর করে জেগে থেকে নামাজ আদায় করেন, যা কাম্য নয়। এতে নামাজের হক নষ্ট হয়। বরং ঘুম এলে ঘুমিয়ে নেওয়াই উচিত। হজরত আয়িশা (রা.)-র কাছ থেকে একটি হাদিসে পাওয়া গেছে যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন নামাজ পড়া অবস্থায় তোমাদের কারও ঘুম আসবে, তখন তার ঘুমিয়ে যাওয়া উচিত, যতক্ষণ না তার ঘুম চলে যাবে। কারণ, তোমাদের কেউ যদি তন্দ্রা অবস্থায় নামাজ পড়ে, তাহলে সে বুঝতে পারবে না যে সম্ভবত সে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে প্রকৃতপক্ষে নিজেকে যেন গালি দিয়ে দিচ্ছে।’ ( বুখারি, হাদিস: ২১২, মুসলিম, হাদিস: ৪৮৬)

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.)-র কাছ থেকে পাওয়া এক হাদিসে পাওয়া যায় যে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা (রাতে ঘুমানোর আগে) ঘরের দরজাগুলো বন্ধ কোরো, পানির পাত্রের মুখ ঢেকে বা বেঁধে দাও, থালাগুলো উপুড় করে রেখো বা ঢেকে দিয়ো এবং আলো নিভিয়ে দিয়ো। কেননা, শয়তান বন্ধ দরজা খুলতে পারে না, পাত্রের বন্ধ মুখ খুলতে পারে না এবং উপুড় করা বা ঢেকে দেওয়া থালাও খুলতে পারে না। আর (বাতি না নেভালে) দুষ্ট ইঁদুর মানুষের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে পারে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

হুযাইফা (রা.) বলেছেন, ‘নবী (সা.) ঘুমানোর সময় বলতেন, হে আল্লাহ। আমি আপনার নামে মরি ও বাঁচি। তিনি যখন জাগতেন তখন বলতেন, সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদের মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করবেন।’