মসজিদুল হারাম, মক্কা
মসজিদুল হারাম, মক্কা

হজ

আগে কোথায় যাবেন, মক্কা না মদিনা

আপনার গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায়, তা জেনে নিন। যদি মদিনায় হয়, তাহলে এখন ইহরাম করতে হবে না।  যখন মদিনা থেকে মক্কায় যাবেন, তখন ইহরাম করতে হবে। বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। যদি মক্কায় যেতে হয়, তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগে ইহরামের নিয়ত করা ভালো। কারণ, জেদ্দা পৌঁছানোর আগেই ‘মিকাত’ (ইহরাম বাঁধার নির্দিষ্ট স্থান) পাবেন।

বিমানে যদিও ইহরামের নিয়ত করার কথা বলা হয়, কিন্তু ওই সময় অনেকে ঘুমিয়ে থাকেন; আর বিমানে পোশাক পরিবর্তন করাও দৃষ্টিকটু। বিনা ইহরামে মিকাত পার হলে এ জন্য দম বা কাফফারা দিতে হবে। 

হজ তিন প্রকার—তামাত্তু, কিরান ও ইফরাদ। হজের মাসগুলোয় (শাওয়াল, জিলকদ, জিলহজ) ওমরাহর নিয়তে ইহরাম করে, ওমরাহ পালন করে, পরে হজের নিয়ত করে হজ পালন করাকে হজে তামাত্তু বলে।

পবিত্র হজের সময় একই সঙ্গে হজ ও ওমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম করে ওমরাহ ও হজ করাকে হজে কিরান বলে। আর শুধু হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদনকে হজে ইফরাদ বলে।

ঢাকা বিমানবন্দরে যা করতে হবে

উড্ডয়নের সময় অনুযায়ী বিমানবন্দরে পৌঁছাতে হবে। বিমানবন্দরে লাগেজে যে মালপত্র দেবেন, তা ঠিকমতো বাঁধা হয়েছে কি না, তা দেখে নেবেন। বিমানের কাউন্টারে মালপত্র রেখে এর টোকেন দিলে তা যত্ন করে রাখবেন। ইমিগ্রেশন, নিরাপত্তা চেকিংয়ের পর নিজ মালপত্র  যত্নে রাখুন।

●      রোড টু মক্কার অধীনে সৌদির ইমিগ্রেশন ঢাকা থেকেই হয়ে যাবে। ১০ আঙুলের ছাপ, ছবি তুলে পাসপোর্টে সিল দিয়ে দেবে।

●      বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র, বিমানের টিকিট, টিকা দেওয়ার কার্ড, অন্য কাগজপত্র, টাকা, বিমানে পড়ার জন্য ধর্মীয় বই ইত্যাদি গলায় ঝোলানোর ব্যাগে যত্নে রাখুন। সময়মতো বিমানে উঠে নির্ধারিত আসনে বসুন।

জেদ্দা বিমানবন্দরে

●      বিমান থেকে নামার পর লাল-সবুজ পতাকা অনুসরণ করে ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ পৌঁছাবেন। হজ টার্মিনাল শুধু হজযাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিমানবন্দর টার্মিনালের চারদিক খোলা। সৌদি আরবের ঐতিহ্যবাহী তাঁবুর নকশায় করা ছাদ। এই হজ টার্মিনালের স্থপতি একজন  বাংলাদেশি। তাঁর নাম ফজলুর রহমান খান। তিনি এফ আর খান নামে পরিচিত। 

● জেদ্দা থেকে মক্কায় পৌঁছাতে দুই ঘণ্টা সময় লাগবে। চলার পথে তালবিয়া (লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্​দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্​ক, লা শারিকা লাক) পড়ুন।

মক্কায় পৌঁছানোর পর

মক্কায় পৌঁছে আপনার থাকার জায়গায় মালামাল রেখে ক্লান্ত থাকলে বিশ্রাম করুন। আর যদি নামাজের সময় হয়, নামাজ আদায় করুন। বিশ্রাম শেষে দলবদ্ধভাবে ওমরাহ পালন করুন।

●      মসজিদুল হারামে (কাবা শরিফ) অনেক প্রবেশপথ রয়েছে। সব কটি দেখতে একই রকম। কিন্তু প্রতিটি প্রবেশপথে আরবি ও ইংরেজিতে ১, ২, ৩ নম্বর ও প্রবেশপথের নাম আছে। যেমন ‘কিং আবদুল আজিজ গেট, নাম্বার ওয়ান’। আপনি আগে থেকে ঠিক করবেন, কোন প্রবেশপথ দিয়ে ঢুকবেন বা বের হবেন। সফরসঙ্গীকেও স্থান চিনিয়ে দিন। তিনি যদি হারিয়ে যান, তাহলে নির্দিষ্ট নম্বরের গেটের সামনে থাকবেন। এতে ভেতরে ভিড়ে হারিয়ে গেলেও নির্দিষ্ট স্থানে এসে সঙ্গীকে খুঁজে পাবেন।

●      কাবা শরিফে জুতা-স্যান্ডেল রাখার ক্ষেত্রে খুব সতর্ক থাকবেন, নির্দিষ্ট স্থানে জুতা রাখুন। যেখানে-সেখানে জুতা রাখলে পরে খুঁজে পাওয়া কঠিন। প্রতিটি জুতা রাখার র​্যাকেও নম্বর দেওয়া আছে। এই নম্বর মনে রাখুন। চাইলে জুতা বহন করার ব্যাগ সঙ্গে রাখতে পারেন। 

●      কাবাঘরের চারটি কোণের আলাদা নাম আছে: হাজরে আসওয়াদ, রুকনে ইরাকি, রুকনে শামি ও রুকনে ইয়েমেনি। হাজরে আসওয়াদ বরাবর কোণ থেকে শুরু হয়ে কাবাঘরের পরবর্তী কোণ রুকনে ইরাকি (দুই কোণের মাঝামাঝি স্থান মিজাবে রহমত ও হাতিম)। তারপর যথাক্রমে রুকনে শামি ও রুকনে ইয়েমেনি। এটা ঘুরে আবার হাজরে আসওয়াদ বরাবর এলে তাওয়াফের এক চক্কর পূর্ণ হয়। এভাবে একে একে সাত চক্কর দিতে হয়।

●      রুকনে ইয়েমেনি থেকে হাজরে আসওয়াদের মাঝখানে ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাওঁ, ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাওঁ, ওয়াকিনা আজাবান্নার। ওয়া আদখিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার, ইয়া আজিজু, ইয়া গাফফার, ইয়া রাব্বুল আলামিন’ বলুন। অতঃপর হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত এসে প্রথম চক্কর পুরো করুন।

●      পুনরায় হাজরে আসওয়াদ বরাবর দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে দ্বিতীয় চক্কর শুরু করুন। এভাবে সাত চক্করে তাওয়াফ শেষ করুন। হাতে সাত দানার তসবিহ অথবা গণনাযন্ত্র রাখতে পারেন। তাহলে সাত চক্কর ভুল হবে না।

●      এ সময় যে দোয়া, সুরা, আয়াত মনে আসে, তা দিয়ে দোয়া করবেন।

●      তাওয়াফ শেষে সাফা–মারওয়ায় গিয়ে সাঈ করুন। সাঈ সাফা থেকে শুরু করে মারওয়ায় ​গিয়ে শেষ হয়। সাফা থেকে মারওয়া প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন দৌড়। এভাবে সাতটি দৌড় সম্পূর্ণ হলে একটি সাঈ পূর্ণ হয় (মনে রাখার জন্য মারওয়াতে ১, ৩, ৫, ৭ নম্বর দৌড় বা চক্করগুলো হবে)।