সিরাত

মক্কায় নবীজির আগমনের ঘোষণা কতটা প্রাচীন

প্রিয় পাঠক, ‘মক্কা নবীজি আসবেন’ এটি ছিল একটি সুসংবাদ। কখনো কি ভেবেছেন এটি কতটা প্রাচীন ঘোষণা? আসুন আমরা সেটা খুঁজে দেখি।

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া, ইসা (আ.)-এর সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে। (মুসনাদে আহমাদ, ৫/২৬২; ফাতহুর রাব্বানি, ২০/১৮১-১৮৯)

জননীর স্বপ্ন মানে তিনি গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে তার পেট থেকে একটি নুর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জ্বল করতে দেখেছেন। ইসা (আ.)-এর সুসংবাদের অর্থ: পবিত্র কোরআনের বাণী, ‘এক নবীর সুসংবাদদাতা যিনি আমার পরে আসবেন, তার নাম আহমাদ।’ (সুরা সাফ, আয়াত: ৬)

আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া, ইসা (আ.)-এর সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে।
হাদিস, মুসনাদে আহমাদ, ৫/২৬২;

ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়ার অর্থ মক্কা উপত্যকায় বসতি স্থাপন করা ইসমাইল (আ.)-এর বংশধরদের মধ্য থেকে মুহাম্মদ (সা.)-কে প্রেরণের দোয়া, ‘হে আমাদের প্রতিপালক, আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসুল পাঠান, যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তেলাওয়াত করবেন; তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১২৯)

প্রশ্ন হচ্ছে, ইবরাহিম (আ.) ঠিক কতকাল পূর্বে মক্কার উপত্যকায় দাড়িঁয়ে এ দোয়াটি করেছিলেন? আসুন হিসেব বের করি:

সাহাবি সালমান ফারসি (রা.) বলেন, ইসা এবং মুহাম্মদের মাঝে নবুয়তের বিরতিকাল ছয়শত (৬০০) বছর। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩৭৩২)

কুরতবি বলেন, ইসা ও মুসা (আ.)-এর মাঝে সময়ের ব্যবধান বিষয়ে মতপাথর্ক্য আছে। ইবে সাদ ‘তাবাকাত’ গ্ৰন্থে ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে উদ্ধৃত করেন, মুসা ইবনে ইমরান ও ইসা ইবনে মরিয়মের মাঝে এক হাজার সাতশত (১৭০০) বছরের পার্থক্য।

ইহুদিদের সময়কাল থেকে নবীজির আবির্ভাব পর্যন্ত দুই হাজারের অধিককাল এবং নাসারাদের সময়কাল থেকে তা ছয়শত বছর।

এ সময়কাল নবুয়তের বিরতি ছিল না। বনি ইসরাইলের এক হাজার ছাড়াও অন্যান্য বংশে তখন অনেক নবী প্রেরিত হয়। নবী ইসার জন্ম এবং মহানবীর মাঝে ব্যবধান পাঁচ শত নিরান্নব্বই (৫৯৯) বছর। (কুরতবি, ৬/১২১)

ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) বলেন, বর্ণনাকারীগণ একমত যে ইহুদিদের সময়কাল থেকে নবীজির আবির্ভাব পর্যন্ত দুই হাজারের অধিককাল এবং নাসারাদের সময়কাল থেকে তা ছয়শত বছর। (ফাতহুল বারি, ৪/৪৪৯)

ইবনে আব্বাসের উদ্ধৃতি উল্লেখ করে ইমাম সুয়ুতি (রহ.) বলেন, আদম ও নুহের মাঝে এক হাজার বছর, নুহ ও ইবরাহিমের মাঝে এক হাজার বছর, ইবরাহিম ও মুসার মাঝে সাতশত বছর, মুসা ও ইসার মাঝে পাঁচশত বছর, আর ইসা ও মুহাম্মাদ (সা.)-এর মাঝে ছয়শত বছরের ব্যবধান। (দুররুল মানছূর, ৫/১৩৭)

এসকল বর্ণনার আলোকে নবীজির সময় থেকে ইসা ছয়শত (৬০০) বছর, ইসা থেকে মুসা সতেরশত (১৭০০), মুসা থেকে ইবরাহিম সাতশত (৭০০) বছর হিসেব করলে নবীজি (সা.) আর ইবরাহিম (আ.)-এর ব্যবধান তিন হাজার (৩০০০) বছর। প্রায় তিন সহস্রাব্দি মক্কা নবীজির আবির্ভাব সংবাদ বুকে ধরে ছিলো। সুবহানাল্লাহ।

হে মক্কা, নবীজি তোমাকে ভালোবাসতেন, আমরাও তোমাকে ভালোবাসি।

ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক : অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়