টি-টো য়ে ন্টি বি শ্ব কা প

যমজ বোনের গল্প

কেসিয়া নাইট ও কেসোনা নাইট
কেসিয়া নাইট ও কেসোনা নাইট

প্রায় একই সময়ে পৃথিবীর আলো দেখেছেন দুজন। কেসিয়া নাইট একটু আগে, কয়েক মিনিট পরে কেসোনা নাইট।
খেলার সাথি হয়ে বেড়ে ওঠা দুই যমজ বোনের বন্ধুত্বই এখন তাঁদের কাছে বড় সম্পদ। একসঙ্গে চলতে চলতে দুজনই এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ মহিলা ক্রিকেট দলের সদস্য!
শুধু কি তাই? বার্বাডোজের জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলেন দুজনই। অ্যাথলেটিকসও করতেন একসঙ্গে। ক্যারিবিয়ানের চিরন্তন অ্যাথলেটিসিজমের রক্ত তাঁদের শরীরে। স্কুল পর্যায়ে হার্ডলসে ছোটজন প্রথম হতেন, বড়জন দ্বিতীয়। দুই বোন ছোট থেকেই পড়েন একসঙ্গে। বার্বাডোজের কমিউনিটি কলেজে শারীরিক শিক্ষার ওপর ডিগ্রি নিচ্ছেন। দুজনই বাঁহাতি ব্যাটার। কেসিয়া উদ্বোধন করেন, ছোট বোন নামেন তিনে।
যমজ বোনদের মধ্যে এসব মিল থাকা খুবই স্বাভাবিক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলতে আসা এই ক্যারিবিয়ান যমজ বোনেরাও ব্যতিক্রম নন। চেহারা দেখে কে কোন জন চেনা প্রায় অসম্ভব। হাসি, কথা বলার ভঙ্গিও আলাদা করা কঠিন। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২১তম জন্মদিন পেরিয়ে ২২-এ পা দেওয়া দুই বোনের চিন্তা, ব্যক্তিত্বের গঠনও প্রায় একই রকম।
দুজনকে আলাদা করার উপায় অবশ্য আছে। কেসোনা তুলনামূলক একটু লম্বা, পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি উচ্চতা। সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে কাল অনুশীলন শেষে দুই বোনের এই পার্থক্যটা প্রথম দেখায় অবশ্য চোখ এড়িয়েই গেল। উচ্চতায় সামান্য কম হলেও ক্যারিবিয়ান নারী ক্রিকেট দলে ছোট বোনের তুলনায় বড় বোন বেশ ‘সিনিয়র’। কেসিয়া বছর তিনেক খেলছেন জাতীয় দলে, উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে খেলে ফেলেছেন ২৫-৩০টি ম্যাচ। বছর খানেক হলো ক্যারিবিয়ান দলে বোনের সঙ্গী হলেন কেসোনা। জাতীয় দলে বোনের মতো জায়গা পাকা করাই এখন কেসোনার ধ্যানজ্ঞান।
পেছনে তাকিয়ে দুজনই তৃপ্ত। কষ্ট করেই যে এগিয়ে এসেছেন এত দূর। জন্মের পর বাবার সঙ্গে মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ায় দুজনই বেড়ে উঠেছেন মায়ের স্নেহ মেখে। সঙ্গী ছিল জন্মভূমি বার্বাডোজের আলো-বাতাস। বাবা আরেক বার্বাডিয়ান নারীকে বিয়ে করে স্থায়ী নিবাস গড়েছেন লন্ডনে। মাঝে মাঝে বার্বাডোজের বাড়িতে আসেন। তবে এই বোনদের জীবনে এখন আর বাবার প্রভাব নেই।
বাবাহীন জীবনটা সংগ্রামের। সেটিকে জয় করে খেলাতেই ক্যারিয়ার গড়ার ব্রত দুই বোনেরই। প্রিয় খেলা ফুটবল। ‘ফুটবল, ফুটবল..., ফুটবলই আমার প্রিয় খেলা’—উচ্ছ্বাস যেন ধরছিল না কেসিয়ার কণ্ঠে। কেসোনার প্রিয় খেলাও ফুটবল। তবে দুজনের পছন্দে হেরফের আছে। ‘আমার প্রিয় দল ম্যানইউ আর ওর বার্সা’—বলতে বলতে হাসিতে ফেটে পড়েন কেসিয়া।
কেসিয়াদের মতো পৃথিবীতে হাজারো যমজ বোন আছে। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলেই যমজ বোন আছেন আরেক জোড়া—আনিসা মাহমুদ ও আলিসা মাহমুদ। তবে আনিসা থাকলেও আলিসা সিলেটে আসা এই দলটিতে নেই। আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দলে খেলেন দুই যমজ বোন। তাঁরা দেখতে অবিকল একই রকম। একসঙ্গে খান, ঘুমান।
তবে নাইট বোনেরা এক কক্ষে ঘুমান না। বাড়িতে যেমন, এই সফরেও তাই। কেসিয়া বলছিলেন...‘এখানে ম্যানেজার আমাদের কক্ষ আলাদা করে দিয়েছেন, তাই আলাদাই থাকছি।’ পাশ থেকে কেসোনার সংযোজন, ‘টিম বন্ডিংয়ের ব্যাপার আছে তো তাই...( হাসি)।’
অনুশীলন শেষে টিম ফিরছে হোটেলে। দলের সঙ্গে যাওয়ার তাড়া দুই বোনের। যাওয়ার আগে কেসিয়া বললেন, ‘বাংলাদেশ থেকে কাপটা যেন নিয়ে যেতে পারি, সেই দোয়া চাই সবার।’ ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলটা বেশ শক্তিশালী। দুই বোন সেই দলের প্রাণ হয়ে থাকতে চান বহুদিন। জীবনের ক্যানভাসে তাঁরা আঁকতে চান অভিন্ন ছবি। কেউ কাউকে ছেড়ে যেতে চান না। কিন্তু বিয়ে-শাদি করে একদিন তো ছেড়ে যেতেই হবে।
এটাই জীবন!