
প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠান কি শুধুই পুরস্কারজয়ীদের জন্য! অনুষ্ঠানের নাম এমন কিছু বোঝাতে পারে, তবে আসলে যে তা নয়, এটা বোধ হয় বাংলাদেশে ক্রীড়াঙ্গনে এখন আর কারও অজানা নেই। হ্যাঁ, পুরস্কার কারা পাচ্ছেন—অবশ্যই এটা সবচেয়ে বড় কৌতূহল হয়ে থাকে অনুষ্ঠানে। পুরস্কারজয়ীদের আনন্দও সবার চেয়ে বেশিই হয়। হয়তো পুরো আয়োজনের মধ্যমণিও হয়ে থাকেন তাঁরা।
তবে সেটি তো পুরস্কারজয়ীদের নাম ঘোষণা করার পর। এর আগপর্যন্ত তো সবাই সমান। কেউ জানেনই না, কে পুরস্কার পাচ্ছেন, কে পাচ্ছেন না। প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার এই একটা জায়গায় একেবারেই ব্যতিক্রমী। অন্য সব পুরস্কারে যেমন থাকে, এখানে কখনোই তেমন কোনো মনোনয়ন তালিকা থাকে না। পুরস্কারজয়ীদের নাম আগাম অনুমান করার চেষ্টা তো চলেই। কেউ আগের বছরের খেলার খোঁজখবর রেখে থাকলে তা মিলেও যেতে পারে। তবে মনোনয়ন তালিকা না থাকায় সম্ভাব্য পুরস্কারজয়ীদের নাম নিয়ে যখন জল্পনা–কল্পনা চলে, সেটি নির্দিষ্ট কয়েকজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না।
৯ আগস্ট সোনারগাঁও হোটেলের ওয়েসিসে ২০২৪ সালের কৃতীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া উপলক্ষে বসবে মিলনমেলা। অনেক দিন পর চেনা মুখ দেখে আবেগাপ্লুত হওয়ার ঘটনা ঘটবে। অনেকে ফিরে যাবেন অতীতের স্বর্ণালি দিনের স্মৃতিচারণায়। এসবের আকর্ষণেই এই পুরস্কার অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকেন বাংলাদেশের খেলার মানুষেরা।
ভেবেচিন্তেই এমন করা হয়েছে। ২০০৪ সালে এই পুরস্কার শুরুর দিনেই ঠিক করে নেওয়া হয়েছিল, এই ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানের মূল সুর হবে সর্বজনীন উদ্যাপন। খেলার উদ্যাপন। খেলার মানুষদের নিয়ে উদ্যাপন। এই ক্রীড়া পুরস্কারকে ঘিরে যা হয়, তা আসলে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের মিলনমেলা।
এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। ৯ আগস্ট সোনারগাঁও হোটেলের ওয়েসিসে ২০২৪ সালের কৃতীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া উপলক্ষে বসবে মিলনমেলা। অনেক দিন পর চেনা মুখ দেখে আবেগাপ্লুত হওয়ার ঘটনা ঘটবে। অনেকে ফিরে যাবেন অতীতের স্বর্ণালি দিনের স্মৃতিচারণায়। এসবের আকর্ষণেই এই পুরস্কার অনুষ্ঠানের অপেক্ষায় থাকেন বাংলাদেশের খেলার মানুষেরা। খেলার মানুষ মানে শুধু ক্রীড়াবিদেরা নন, কোচ–রেফারি–আম্পায়ার–সংগঠক সবাই।
উপলক্ষ যেহেতু পুরস্কার, সেসবও একটু মনে করিয়ে দেওয়া ভালো। মোটাদাগে পুরস্কার দেওয়া হয় তিন ক্যাটাগরিতে—বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়, বর্ষসেরা নারী ও বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ। এর বাইরে খেলাধুলায় সার্বিক অবদানের জন্য একজন পান আজীবন সম্মাননা। বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ তো একজনই হন (একবার অবশ্য যুগ্মভাবে দুজনও হয়েছিলেন), দুজন পান বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ রানারআপের স্বীকৃতি। দেশের সাবেক নামী খেলোয়াড়, সাংবাদিক, ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের জুরিবোর্ড আগের বছরে সব খেলায় খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে নির্বাচন করে বিজয়ীদের। ২০১২ সাল থেকে পাঠকের ভোটেও একজন বর্ষসেরা নির্বাচিত হন। কখনো তা জুরিদের নির্বাচনের সঙ্গে মিলে যায়, কখনো–বা মেলে না।
বিজয়ীদের জন্য ট্রফি থাকে। সঙ্গে অর্থ পুরস্কারও। এসবের চেয়েও বেশি তাৎপর্য সম্ভবত সম্মানটার। আলাদা আলাদা খেলার বদলে সব খেলা মিলিয়ে সেরা বেছে নেওয়া হয় বলে অনেক দিনই এ দেশের খেলোয়াড়দের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত হয়ে উঠেছে এই পুরস্কার।
২০২১ সাল থেকে এই পুরস্কারের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আছে সিটি গ্রুপ। এই পুরস্কারের পৃষ্ঠপোষক বদলেছে, তবে একটা জিনিস কখনোই বদলায়নি। কে পুরস্কার পাচ্ছেন, কেন পাচ্ছেন—এসব ব্যাপারে প্রভাব খাটানো দূরে থাক, বিন্দুমাত্র কৌতূহলও প্রকাশ করেন না পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানের কেউ। আর প্রথম আলো তো বরাবরই এই পুরস্কারকে পক্ষপাতহীন রাখার নীতিতে অটল। দিন দিন এই ক্রীড়া পুরস্কারের সর্বজনগ্রাহ্যতা আরও বাড়ার রহস্যও এটাই।