খেলা এখন আর শুধু খেলা নয়, অনেক বড় ব্যবসাও। আইপিএল যেমন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) জন্য ভীষণ অর্থকরি টুর্নামেন্ট। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এবার আইপিএল মাঝপথেই স্থগিত হয়ে যাওয়ায় ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৮৮১ কোটি টাকা) লোকসানের সম্মুখীন হয়েছে বিসিসিআই। বিসিসিআই প্রধান সৌরভ গাঙ্গুলী জানালেন, এবার আইপিএল শেষ করতে না পারলে কত ক্ষতি হবে তাঁদের।
করোনার মধ্যে আইপিএল আয়োজন করায় এমনিতেই অনেক সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। সব সমালোচনা উপেক্ষা করেই আইপিএল চালিয়ে নিচ্ছিল বিসিসিআই। কিন্তু দিল্লি পর্ব শুরু হওয়ার পর চারটি ফ্র্যাঞ্চাইজিতে চার ক্রিকেটারসহ সাতজনের করোনা ধরা পড়ায় স্থগিত করে দেওয়া হয় আইপিএল। এরপরই আইপিএল আয়োজন করায় বিসিসিআইয়ের বিরুদ্ধে এক হাজার কোটি রুপির জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছে। দ্য টেলিগ্রাফের সঙ্গে কথোপকথনে এত সমালোচনার মুখেও আইপিএল আয়োজনের পেছনের কারণ জানিয়েছেন গাঙ্গুলী।
করোনার মধ্যেই আইপিএল চালানো নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল ভারতীয় বোর্ড। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোয় খেলোয়াড় ও স্টাফদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত আইপিএল অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিসিসিআই। দুটি ভেন্যুতে জৈব সুরক্ষাবলয় লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে। গত কয়েক দিন বেশ ভালোই ঝামেলার মধ্য দিয়ে গেছে গাঙ্গুলী ও তাঁর বোর্ড।
এর মধ্যেই আইপিএল যেকোনোভাবেই হোক শেষ করার চিন্তাভাবনা করছেন গাঙ্গুলী, ‘অনেক কিছু বদলাতে হবে। আইপিএল স্থগিত করা হয়েছে মাত্র এক দিন হলো। আমাদের অন্য বোর্ডগুলোর সঙ্গে কথা বলতে হবে এবং দেখতে হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে কোনো ফাঁকা আছে কি না। অনেক কিছুই এর সঙ্গে জড়িত এবং ধীরে ধীরে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ করব। যদি আইপিএল আয়োজন করতে না পারি, তাহলে প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি রুপি (৩৪ কোটি ডলার) হারাব। এটাও প্রাথমিক হিসাব।’
গত বুধবার অবশ্য ক্ষতির পরিমাণ আরেকটু কম হবে বলে জানিয়েছিল ভারতীয় বোর্ড। বিসিসিআইয়ের কোষাধ্যক্ষ অরুণ সিং ধুমাল আর্থিক ক্ষতির প্রসঙ্গে রয়টার্সকে বলেছিলেন, ‘আনুমানিক দুই হাজার কোটি রুপি হারাতে পারি আমরা। ডলারে অঙ্কটির মূল্যমান প্রায় ২৭ কোটি ডলার।’ বিসিসিআই কোষাধ্যক্ষ ব্যাখ্যা করেন, ‘নানা রকম চুক্তির বাধ্যবাধকতা থাকায় এখনো আমরা (লোকসানের) সঠিক অঙ্কটা হিসাব কষে বের করতে পারিনি।’
আইপিএলের আটটি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলের মালিকপক্ষ অনেক বড় ধনকুবের এবং বলিউডের সংযোগ থাকায় টুর্নামেন্টটি ব্র্যান্ড হিসেবে দাঁড়াতে সময় লাগেনি। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ হিসেবে আইপিএলকে দেখা হয়। বিদেশি ক্রিকেটাররা অনেক সময় দেশের দায়িত্ব থেকে ছুটি নিয়ে এ টুর্নামেন্টে খেলেন। তবে আইপিএল চলার সময় আন্তর্জাতিক সূচি পারতপক্ষে রাখা হয় না।
২০১৮-২২ সাল পর্যন্ত আইপিএলের টিভি ও ডিজিটাল সম্প্রচারস্বত্ব ১৬ হাজার ৩৪৮ কোটি রুপিতে কিনেছে স্টার স্পোর্টস। বিসিসিআইকে এ টুর্নামেন্টে প্রতি ম্যাচে ৫৪ কোটি ৫০ লাখ রুপি দিচ্ছে স্টার স্পোর্টস। এবার ৬০ ম্যাচের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে ২৯ ম্যাচ। ভারতে খেলাধুলার বাণিজ্যিক বিষয়গুলো দেখভাল করা স্পোর্টজপাওয়ারের যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা থমাস আব্রাহামের এ নিয়ে ব্যাখ্যা, ‘আপনি যতটুকু সরবরাহ করতে পারবেন, ততটুকু হিসাবের টাকাই তো পাবেন।’ অর্থাৎ আইপিএলে যে ২৯ ম্যাচ হয়েছে, বিসিসিআই স্টার স্পোর্টসের কাছ থেকে শুধু এই টাকাই পাবে।
আইপিএল স্থগিত করা সমর্থন করেছে স্টার স্পোর্টস। কিন্তু রয়টার্সের পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতির বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে চ্যানেলটির কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি। এদিকে অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ প্রতিষ্ঠান ডাফ অ্যান্ড ফিলিপসের মতে, করোনা মহামারিতে আইপিএলের ব্র্যান্ডমূল্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছর ৬.১৯ বিলিয়ন ব্র্যান্ডমূল্য থেকে এবার ৩.৬ শতাংশ মূল্য কমেছে।