বুমরার তিন উইকেটে এগিয়ে থেকে প্রথম দিন শেষ করল ভারত
বুমরার তিন উইকেটে এগিয়ে থেকে প্রথম দিন শেষ করল ভারত

দিনে স্পিন, রাতে পেস—১৬ উইকেটের এক দিন

ওই মুহূর্তের ব্যাখ্যা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসই ভালো দিতে পারবেন। ভয়ংকর এক উইকেটে দারুণ ব্যাট করছিলেন। টিকে থাকা কঠিন, এমন উইকেটেও ছুটে টিকেছিলেন দুই ঘণ্টা। ব্যাটের গা ঘেঁষে বল গেছে, আচমকা বাউন্সে ব্যাটের হাতলে বল লেগেছে, বল নিচু হয়ে চমকে দিয়েছে—এর সবই সামলে নিয়ে ৮৪ বল খেলেছেন। ৮৫তম বলটি ছিল সে তুলনায় অনেক নিরীহ। প্রথম দিনের খেলা শেষ হতে মাত্র ১২ বলের অপেক্ষা।

২৯তম ওভারের প্রথম বলে ওয়ানডেতে ১ রান বের করার ঢঙে খেললেন ম্যাথুস। ওয়ানডেতে মাঝের ওভারে সে শটে নিশ্চিন্তে ১ রান এসে যেত। কিন্তু টেস্টে দিনের অন্তিম মুহূর্তের জন্য বড় ভুল শট ছিল। দ্বিতীয় স্লিপে রোহিত শর্মার হাতে ধরা পড়লেন ম্যাথুস। হতাশার এক দিনের শেষটাও হতাশামাখা হলো সফরকারীদের। বেঙ্গালুরু টেস্টের প্রথম দিনে ৬ উইকেটে ৮৬ রান তুলেছে শ্রীলঙ্কা। ভারতের চেয়ে এখনো পিছিয়ে ১৬৬ রান।

শতকের অপেক্ষা বাড়ছে কোহলির

খেলা না দেখে থাকলে এটুকু পড়লে একটি বিস্ময়জাগা অস্বাভাবিক নয়। একটি দল প্রথম দিনে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলতে পারে। প্রতিপক্ষ তার আগেই অলআউটও হতে পারে। কিন্তু তেমন কিছু ঘটলে প্রতিপক্ষের তো এত বেশি এগিয়ে থাকার কথা নয়। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের উইকেট তেমন বিস্ময়ই উপহার দিয়েছে।

নিজেদের মাঠে মাত্র তৃতীয়বারের মতো গোলাপি বলে দিবারাত্রির টেস্ট খেলছে ভারত। ২০১৯ সালে কলকাতায় বাংলাদেশ-ম্যাচ টেনেটুনে সোয়া দুই দিন হয়েছিল। ২০২১ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আহমেদাবাদের ম্যাচ শেষ হয়েছে পৌনে দুই দিনে। আজ বেঙ্গালুরু যে ইঙ্গিত দিচ্ছিল, তাতে দেড় দিনের পক্ষে অনেকেই বাজি ধরতে শুরু করতে পারতেন।

কঠিন উইকেটে আক্রমণই সেরা অস্ত্র ছিল ভারতের

উইকেট বুঝতে একটু ভুল করেছিল শ্রীলঙ্কা। তাই দুই প্রান্তেই পেসার দিয়ে শুরু করেছিল তারা। দ্বিতীয় ওভারেই রানআউট মায়াঙ্ক আগারওয়াল। রোহিত শর্মা বিদায় নিলেন বাঁহাতি স্পিনার এমবুলদেনিয়ার বলে। দশম ওভারেই উইকেটে ধুলো উড়ছিল, বলে বাঁক নিচ্ছিল বড় বড়। আর সে সঙ্গে প্রায়ই বল নিচু হয়ে আসছিল। বিরাট কোহলিকে ধনঞ্জয়া যে বলে আউট করেছেন, তাতে এর তিনটিরই প্রভাব দেখা গেছে। ২৩ রানে থাকা কোহলি অনেকটা বাঁক নেওয়া অফ স্পিন শত চেষ্টাতেও ঠেকাতে পারেননি বল হঠাৎ নিচু হয়ে যাওয়ায়।

এর আগের ওভারেই জয়াবিক্রমার বাঁহাতি স্পিন হনুমা বিহারিকে (৩১) তুলে নিয়েছে। ফলে কোহলি যখন ফিরছেন, ভারতের স্কোর তখন ৮৬/৪। এ উইকেটে টিকে থাকার চেষ্টা করে লাভ নেই দেখে আক্রমণকে আশ্রয় মেনেছেন ঋষভ পন্ত। তাই তাঁর ও কোহলির বিদায়ের মধ্যে মাত্র ৫ ওভারের ব্যবধান থাকলেও এই সময়ে রান উঠেছে ৪০। ২৬ বলে ৩৯ করে এমবুলদেনিয়ার বলে বিভ্রান্ত হয়ে ফিরেছেন পন্ত।

পঞ্চাশের পর আইয়ার

বাকিটা শ্রেয়াস আইয়ারের গল্প। পন্তের মতো আক্রমণকেই অস্ত্র মেনেছেন। অন্য প্রান্তে কেউই তাঁকে সঙ্গ দিতে পারেননি। সর্বোচ্চ ১৩ রান করেছেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন। তবু শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন ফিরছেন আইয়ার, ভারতের রান তখন পন্তের বিদায়ের সময়কার ঠিক দ্বিগুণ। ৯৮ বলে ১০ চার ও ৪ ছক্কায় ৯২ করেছেন আইয়ার। অক্ষর প্যাটেলই শুধু সুরঙ্গা লাকমলের বলে ফিরেছেন। ভারতের আট উইকেট ভাগাভাগি করে নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার তিন স্পিনার। কিন্তু কঠিন এক উইকেটেই ভারতের ২৫২ রানকে ম্যাচ জেতানো স্কোর বলেই মনে হচ্ছে।

ম্যাথুস আশা দেখাচ্ছিলেন শ্রীলঙ্কাকে

দিনের শুরুতে শ্রীলঙ্কা উইকেট বুঝতে ভুল করেছে, আর সন্ধ্যায় ভারত বুঝতে ভুল করেছে কন্ডিশন। সারা দিন যে উইকেটে স্পিনাররা দাপট দেখালেন, সন্ধ্যায় সে উইকেটে রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজাই দাপট দেখাবেন ভাঁবা হচ্ছিল। তাই নতুন বল যশপ্রীত বুমরার সঙ্গে পেয়েছিলেন অশ্বিন। কিন্তু সন্ধ্যায় উইকেট থেকে দিনের সাহায্য আর দেখা গেল না। বরং ভারতের দুই পেসারই ত্রাস ছড়ালেন। বুমরার জোড়া আঘাত দেখে মোহাম্মদ শামিকেও ডেকে আনা হলো। ৩১ বলের মধ্যে ৩ উইকেট হারিয়ে বসল শ্রীলঙ্কা। ১৬ রান নিয়ে চা-বিরতিতে গেল সফরকারীরা।

বিরতি কাটিয়ে ফিরতে না ফিরতেই শামির আঘাত। টেনেটুনে স্কোর ৫০ ছুঁতেই অক্ষর প্যাটেলের বলে বিদায় নিলেন আসালাঙ্কাও। এর মাঝেও অবিচল ছিলেন ম্যাথুস (৪৩)। সাবেক অধিনায়ক আগামীকাল দলকে ভরসা দেবেন, সে আশাও জাগছিল। কিন্তু শেষভাগের ওই ভুল শ্রীলঙ্কাকে দ্বিতীয় দিন নিয়ে ভয়ই দেখাচ্ছে।