Thank you for trying Sticky AMP!!

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা ১০ ইনিংস

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অভিষেক ১৯৯৯ টুর্নামেন্ট দিয়ে। এই পথে পাঁচটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ দল। আর বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরাও ক্রিকেট বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন মনে রাখার মতো কিছু ইনিংস

বিশ্বকাপে বিশ্ব কাঁপে? তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও বাংলাদেশ তো কাঁপছেই। ক্রিকেট নিয়ে তেমন আগ্রহ না থাকা মানুষটিও বিশ্বকাপ এলে আশাবাদী হয়ে ওঠেন জাতীয় দল নিয়ে। বিশ্বকাপ যত দিন চলবে তত দিন থাকবে এ জ্বর। চায়ের কাপে উঠবে আলোচনার ঝড়, আর তাতে স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসবে হিরণ্ময় কিছু ইনিংসের গল্প। বিশ্বকাপে মনে রাখার মতো কিছু ইনিংস খেলেছেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সেখান থেকে বেছে নেওয়া হলো সেরা ১০ ইনিংস:

১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মনে রাখার মতো ইনিংস খেলেছেন মিনহাজুল আবেদিন। ছবি: টুইটার

মিনহাজুল আবেদিন নান্নু (৬৮ রান, বিপক্ষ স্কটল্যান্ড, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ)

বাংলাদেশের অভিষেক বিশ্বকাপ। প্রথম দুই ম্যাচ হেরে বসেছিল আমিনুল ইসলামের দল। তৃতীয় ম্যাচে প্রতিপক্ষ ছিল স্কটল্যান্ড। আগে ব্যাট করতে নেমে ২৬ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে ছিল বাংলাদেশ দল। পুরো ৫০ ওভার খেলতে পারবে কি না, তা নিয়েই শঙ্কা ছিল। ছয়ে নেমে লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে সেই শঙ্কা দূর করেন মিনহাজুল আবেদিন। তাঁর অপরাজিত ৬৮ রানে ভদ্রস্থ (১৮৫/৯) স্কোর তুলতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ। পরে ধরা দেয় জয়ও।

সতীর্থদের আটজনই যেখানে দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেননি, মিনহাজুল সেখানে ১১৬ বলে ৬৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে এনে দিয়েছিলেন লড়াইয়ের স্কোর। আর এই ইনিংস দিয়েই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতে নেন মিনহাজুল।


খালেদ মাহমুদ (২৭ রান, বিপক্ষ পাকিস্তান, ১৯৯৯ বিশ্বকাপ)

বাংলাদেশের বিশ্বকাপ ইতিহাসে অন্যতম সেরা দিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ৬২ রানের সেই জয়ের নায়ক ছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ১৪৮ রানে ৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর মিনহাজুল আবেদিন ও নাইমুর রহমান দুর্জয়ের সঙ্গে দারুণ দুটি জুটি গড়েন খালেদ মাহমুদ। ৩৪ বলে তাঁর ২৭ রানের ইনিংসটি আকারে ছোট হলেও বাংলাদেশের দুই শ পার করার বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল। আর তাতে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে যায় আমিনুল ইসলামের দল। পরে বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে দুর্দান্ত ভূমিকাও রাখেন খালেদ মাহমুদ। এ ম্যাচ নিয়ে কথা উঠলে বেশির ভাগের স্মৃতিতেই খালেদ মাহমুদের বোলিংয়ের কথা উঠে আসে। কিন্তু ওয়াকার ইউনিস, শোয়েব আখতার, ওয়াসিম আকরাম ও সাকলায়েন মুশতাকদের বিপক্ষে ব্যাট হাতে তাঁর ছোট্ট ইনিংসটিরও বড় অবদান ছিল জয়ে।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুর্দান্ত ইনিংসটি দিয়ে বাংলাদেশের জয়ে ভিত গড়েন আশরাফুল। ছবি: টুইটার

মোহাম্মদ আশরাফুল (৮৭ রান, বিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০০৭ বিশ্বকাপ)

৭ এপ্রিল, ২০০৭ গায়ানার প্রভিডেন্স গার্ডেনে বিশ্বকাপে সুপার এইটের সেই ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রায় একাই হারিয়ে দেন মোহাম্মদ আশরাফুল। শন পোলক, মাখায়া এনটিনি, জ্যাক ক্যালিস, আন্দ্রে নেলদের পাড়ার বোলার বানিয়ে আশরাফুল খেলেন ৮৩ বলে ৮৭ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস। ২৫২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রাজ্জাক, রফিক, সাকিবের ঘূর্ণিতে মাত্র ১৮৪ রানেই গুটিয়ে যায় স্মিথ, ভিলিয়ার্স, ক্যালিস, হার্শেল গিবস, মার্ক বাউচারদের নিয়ে গড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বিখ্যাত ব্যাটিং লাইনআপ। ৬৭ রানে জয় পাওয়া ঐতিহাসিক সেই ম্যাচে ম্যাচসেরা হন আশরাফুল।

মুশফিক শেষ পর্যন্ত থেকে এনে দিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে জয়। ছবি: টুইটার

মুশফিকুর রহিম (৫৬ রান, বিপক্ষ ভারত, ২০০৭ বিশ্বকাপ)

এক ম্যাচে তিনটা অসাধারণ ইনিংস। পোর্ট অব স্পেন এ ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন জীবনের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামা তিন তরুণ। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম। তবে মুশফিকের ইনিংসকে তিনটার মধ্যে সেরা বলার কারণ, তিনে নেমে ম্যাচ শেষ করে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন তিনি। তাঁর ধীরস্থির ব্যাটিং দেখে কারও মনে হয়নি, বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেছেন। ৭৯ রানে তিন উইকেট পড়ে যাওয়ার পর সাকিবকে নিয়ে গড়েছিলেন ৮৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। এই জুটি বাংলাদেশকে জয় এনে দেয়।


শফিউল ইসলাম (২৪ রান, বিপক্ষ ইংল্যান্ড, ২০১১ বিশ্বকাপ)

ব্যাটসম্যানের নাম দেখে চমকে যাওয়ারই কথা, শফিউল আবার ব্যাটসম্যান হলেন কবে? ঠিক আগের ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৫৮ রানে অলআউট হওয়ার সমালোচনাও তখনো শেষ হয়নি। ইংল্যান্ডের দেওয়া ২২৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৯ ওভারে ৮ উইকেটে ১৬৯ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ দেখতে আসা চট্টলাবাসী ধীরে ধীরে গ্যালারি ছাড়তে শুরু করেছে। আরেকটি পরাজয়ের সাক্ষী হতে চায়নি তারা। সেই ম্যাচই মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন শফিউল। বোলার পরিচয় ছাপিয়ে গিয়ে ২৪ বলে ২৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন, নবম উইকেট জুটিতে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে গড়েন ৫৮ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি। ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যারা গ্যালারি ছেড়েছিলেন, জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের বাইরে থেকে তাদের আক্ষেপ শোনা গিয়েছিল সেদিন। ইতিহাস গড়ার সাক্ষী হওয়ার সুযোগ এত কাছ থেকেই হাতছাড়া করলেন তাঁরা!

ইমরুল কায়েস (৭৩ রান, বিপক্ষ হল্যান্ড, ২০১১ বিশ্বকাপ)

ঘরের মাঠে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে টিকে থাকতে হলে সেই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের। তবে ১৬১ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে, শূন্য রানেই তামিমের ফিরে যাওয়া কিছুটা ভীতিও জাগিয়ে দিয়েছিল। জুনায়েদ সিদ্দিকি এবং শাহরিয়ার নাফিসকে সঙ্গে নিয়ে সেই ভয় আর সত্যি হতে দেননি ইমরুল। ১১৩ বলে ৭৩ অপরাজিত ইনিংস খেলে ৫২ বল হাতে থাকতেই ৬ উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়েন ইমরুল। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ড এর বিপক্ষে ৬০ রান করে ম্যাচসেরা ইমরুল সেদিনও ম্যাচসেরা হন। বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে পরপর দুই ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়ার সেটাই প্রথম নজির।

মুশফিকুর রহিম (৭১ রান, বিপক্ষ আফগানিস্তান, ২০১৫ বিশ্বকাপ)

এই ম্যাচেও সেই মধুর সমস্যা আবার। কোনটি সেরা? মুশফিকের ৫৬ বলে ৭১ নাকি সাকিবের ৫১ বলে ৬৩। ১১৯ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে সাকিব-মুশফিকের ১১৪ জুটিতে ভর করে আফগানিস্তানকে ২৬৮ রানের লড়াকু টার্গেট দেয় বাংলাদেশ। মাশরাফির আগুন ঝরানো বোলিংয়ে আফগানদের ১৬২ রানেই বেঁধে ফেলে টাইগাররা। ১০৫ রানের বিশাল জয় দিয়ে নিজেদের বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে তারা। ৯ ওভারে ২০ রানে ৩ উইকেট নেন মাশরাফি। এই ম্যাচটি ২০০৭–এ ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পুনরাবৃত্তিই যেন মনে হয়, সাকিব-মুশফিকের জুটি, মাশরাফির আগুন ঝরানো বোলিং, দুটি বিশ্বকাপে এ দুটোই আবার বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ। শুধু পোর্ট-অব-স্পেনের জায়গায় ক্যানবেরা, আর প্রতিপক্ষ ভারতের জায়গায় আফগানিস্তান। আর ম্যাচসেরার পুরস্কার? ২০০৭ সালে মাশরাফি হলে এবার তো মুশফিককে দিতেই হয়!

স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি পাননি তামিম। ছবি: টুইটার


তামিম ইকবাল (৯৫ রান, বিপক্ষ স্কটল্যান্ড, ২০১৫ বিশ্বকাপ)

নেলসনে সেদিন ইতিহাস গড়েই জিতেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জয়। ৩১৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৫ রানেই ওপেনার সৌম্য সরকারকে হারায় বাংলাদেশ। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিকের সঙ্গে ১৯৬ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান তামিম। ১০০ বলে ৯৫ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তামিম। মাহমুদউল্লাহ ৬২ বলে ৬২ এবং মুশফিক ৪২ বলে ৬০ রান করে জয়ের পথে রানের চাকা সচল রাখেন। সেই ম্যাচে আরও একটি রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। এক ম্যাচে চার ব্যাটসম্যানের ফিফটি। ৪১ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকা সাকিব আল হাসান সাব্বিরকে সঙ্গে নিয়ে তুলির শেষ আঁচড় দেন। ৪০ বলে ৪২ রানে অপরাজিত সাব্বিরও সেদিন যোগ্য দেন সাকিবকে। ৬ উইকেটের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।


মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১০৩ রান, বিপক্ষ ইংল্যান্ড, বিশ্বকাপ ২০১৫)

বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্নপূরণে অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচ অলিখিত ফাইনালেই রূপ নিয়েছিল বাংলাদেশের জন্য। মাত্র ৮ রানেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে ধুঁকতে থাকা দলকে একাই টেনে তোলেন রিয়াদ। দলীয় ৯৪ রানে সৌম্য বিদায় নিলে, মুশফিকের সঙ্গে গড়েন ১৪১ রানের জুটি। তুলে নেন বিশ্বকাপে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এবং নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। পরে রুবেল হোসেনের বিধ্বংসী বোলিংয়ে ১৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার পান মাহমুদউল্লাহ। পূরণ হয় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার স্বপ্ন!

গত বিশ্বকাপে অসাধারণ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। ছবি: টুইটার


মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১২৮* রান, বিপক্ষ নিউজিল্যান্ড, বিশ্বকাপ ২০১৫)

হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরও একটি রেকর্ড গড়েন রিয়াদ। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বকাপে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরির রেকর্ড। বিশ্বকাপে যেখানে প্রথম কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৬ বছর! সেখানে মাত্র ৫ দিনের ব্যবধানে পর পর দুটি সেঞ্চুরি করে নতুন নজির গড়েন মাহমুদউল্লাহ। তবে সেই রেকর্ড গড়ার দিনে মন খারাপ করার মতো কারণও আছে মাহমুদউল্লাহর, বাংলাদেশ সেদিন হেরে যায় মার্টিন গাপটিলের এক দানবীয় ইনিংসের কাছে। গাপটিলের সেঞ্চুরিতে ভর করে ৭ বল বাকি থাকতেই বাংলাদেশের দেওয়া ২৮৯ রানের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। তবে ১২৩ বলে ১২৮ রানে অপরাজিত থাকা মাহমুদউল্লাহ সেদিন গাপটিলের কাছে ম্যাচ সেরার পুরস্কার হারালেও, জিতে নিয়েছিলেন ১৬ কোটি মানুষের মন।