Thank you for trying Sticky AMP!!

একাডেমি ভবনে এভাবেই বিচ্ছিন্ন জীবন কাটছে আবু জায়েদের।

‘মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কা সফর আমার জন্যই পেছাচ্ছে’

মুখে কদিনের না কামানো দাঁড়ি, গায়ে ধূসর রাঙা টি-শার্ট আর হাতে চাকু। কাল বিকেলে বিসিবি একাডেমি ভবনের ঝুলবারান্দায় দাঁড়িয়ে সেই চাকু দিয়ে আমড়া কাটছিলেন আবু জায়েদ। এখন তাঁর আমড়ার মতো ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফলই বেশি খেতে হচ্ছে। এক সপ্তাহ হলো ২৭ বছর বয়সী পেসার  করোনায় আক্রান্ত, বিচ্ছিন্ন হয়ে আছেন বিসিবি একাডেমি ভবনের তিন তলার একটি কক্ষে।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে আবু জায়েদ যখন আমড়া কাটছিলেন, অদূরে শেরেবাংলা স্টেডিয়াম থেকে ভেসে আসছিল সতীর্থদের অনুশীলন আর হইচইয়ের শব্দ। সেই শব্দ শুনে মনটা তাঁর ডুবে যাচ্ছিল বিষাদে। মুঠোফোনে বলছিলেন, ‘করোনার কারণে দরজার বাইরেও যেতে পারছি না। ২০১২ সালে একবার বড় চোটে পড়েছিলাম। তখন তবু ইচ্ছেমতো এখানে-ওখানে যেতে পারতাম। আর এখন... করোনার কারণে অনেকে বাঁকা চোখেও তাকাচ্ছে।’

আবু জায়েদের বেশি খারাপ লাগছে, গত ছয় মাস এত সাবধান থেকেছেন, অথচ করোনায় আক্রান্ত হলেন দলীয় অনুশীলনে যোগ দেওয়ার ঠিক আগে! কীভাবে এই অদৃশ্য ক্ষতিকর অণুজীবটা শরীরে প্রবেশ করেছে, কিছুতেই বুঝতে পারছেন না বাংলাদেশ পেসার, ‘গত ছয় মাসে বাসা থেকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হইনি। অনুশীলন করেছি একা একা। কীভাবে যে হলো বলা মুশকিল। আমার এটা হলো খুব বাজে সময়ে, ঠিক ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার আগ মুহূর্তে। পরীক্ষার পর শুনলাম শরীরে করোনা বর্ডার লাইনে আছে। চিকিৎসকেরা বলছিলেন ২২ তারিখের পরীক্ষায় নেগেটিভ হয়ে যাব। কিন্তু পরের পরীক্ষার পর চিকিৎসকেরা বললেন, এটা বাড়তে শুরু করেছে। উপসর্গের মধ্যে ২২ তারিখে ঘ্রাণশক্তি হারিয়েছি, সর্দি আছে। আর তেমন কোনো উপসর্গ নেই।’

বোলিংয়ের ক্ষুধা আগের মতোই তীব্র। ওটা মাথায় নিয়ে ঘুমাই। মনে মনে তামিম-মুমিনুল হকদের বোলিং করি।
আবু জায়েদ

আবু জায়েদের সংস্পর্শে যে ক্রিকেটাররাই এসেছিলেন, সবাই কিছুদিন সঙ্গনিরোধ (আইসোলেশন) ছিলেন একাডেমি ভবনে। করোনা নেগেটিভ হয়ে তাঁরা এরই মধ্যে যোগ দিয়েছেন অনুশীলনে। এখন আবু জায়েদকেই শুধু বিচ্ছিন্ন থাকতে হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে এভাবে বন্দিজীবন কাটানো কত কঠিন, সেটিই বলছিলেন তিনি, ‘প্রথম যখন পজিটিভ হয়েছিলাম, অত চিন্তা করিনি। ভেবেছি দ্রুত সেরে যাবে। তবে মানুষ বেশি ভয় দেখিয়েছে। ভয় এখনো আছে। একা থাকি, খারাপ লাগছে। আবার ভাবি অনুশীলন করার আগে শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়াটা জরুরি। সাত বছর কষ্ট করেছি। এখন যদি তিন সপ্তাহ অনুশীলন না করি, ফিটনেস একেবারে শেষ হয়ে যাবে না। হয়তো মাঠে ফিরে দুই সপ্তাহ বেশি অনুশীলন করতে হবে ফিটনেস ফিরে পেতে।’

গত দুই বছরে টেস্টে বাংলাদেশ দলের সবচেয়ে সফল পেসার আবু জায়েদ।

বদ্ধ ঘরে মিরপুরের নিঃসঙ্গ দিনগুলো আবু জায়েদ কাটাচ্ছেন নানা উপায়ে। নামাজ পড়ছেন, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করছেন, বারবার চা বানিয়ে খাচ্ছেন, ঘর পরিষ্কার করছেন। ৯ টেস্ট খেলা এই পেসার বলছিলেন, ‘মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে। জীবনে কখনো এমন অভিজ্ঞতায় পড়তে হয়নি। আবার ভাবি কিছু তো করার নেই! একই জিনিস বারবার করে সময় কাটাচ্ছি। যাতে মাথায় টেনশন না ঢোকে, একঘেয়েমি না লাগে।’ আবু জায়েদ আরও একটা কাজ করছেন, শুনুন তাঁর কাছেই, ‘বোলিংয়ের ক্ষুধা আগের মতোই তীব্র। ওটা মাথায় নিয়ে ঘুমাই। মনে মনে তামিম-মুমিনুল হকদের বোলিং করি।’

গত দুই বছরে বাংলাদেশ দলের পেসারদের মধ্যে আবু জায়েদই সবচেয়ে সফল, এ সময়ে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৪ উইকেট।

জায়েদের আবার করোনা পরীক্ষা হবে ৩০ সেপ্টেম্বর। এই পরীক্ষায় নেগেটিভ হলেই যোগ দিতে পারবেন অনুশীলনে। কঠিন এই দিনগুলোয় আবু জায়েদ শিখছেন মানসিকভাবে কীভাবে শক্ত থাকতে হয়। তবে শক্ত কত দিন থাকতে পারবেন, সেটি নিয়ে আছেন সংশয়ে, ‘এখনো শক্ত আছি। তবে এটি আর এক সপ্তাহের বেশি হলো মানসিকভাবে শক্ত থাকা কঠিন হয়ে যাবে।’

গত দুই বছরে বাংলাদেশ দলের পেসারদের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সফল, এ সময়ে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৪ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও পেসারদের মধ্যে টিম ম্যানেজমেন্টের প্রথম পছন্দ তিনিই। অথচ তাঁরই এখন সময় কাটছে চার দেয়ালের মাঝে। অবশ্য বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফর নিশ্চিত হয়নি এখনো। সিরিজটা হলেও মুমিনুলদের রওনা দিতে হবে ৮-১০ অক্টোবর। রসিকতা করে আবু জায়েদ বলছেন, ‘মনে হচ্ছে শ্রীলঙ্কা সফর আমার জন্যই পেছাচ্ছে!’