Thank you for trying Sticky AMP!!

মহানুভবতার মূল্য যখন বিশ্বকাপ থেকে বিদায়!

কপিল দেব ও কোর্টনি ওয়ালশ
ক্রিকেট বিশ্বকাপ দুয়ারে দাঁড়িয়ে। চলছে রোমাঞ্চমাখা অপেক্ষা, চলছে স্মৃতিচারণাও। ফিরে দেখা বিশ্বকাপ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইনের নতুন ধারাবাহিক। ষষ্ঠ পর্বে থাকছে সবচেয়ে বেশিবার বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের স্বাদ পাওয়া ক্রিকেটারের কথা। লিখেছেন সঞ্জয় বসাক


ক্রিকেট মাঠে খেলার চেতনা বজায় রাখাকে সব সময়ই প্রশংসনীয় হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু চেতনা বজায় রাখতে গিয়ে যদি দলের জয়টাই বিসর্জন দিতে হয়, তখন সেটা কেমন হয়? বিশ্বকাপে এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন দর্শকেরা, তা–ও আবার এমন দুজনের কাছ থেকে, যারা কিনা খেলাটির ইতিহাসেই কিংবদন্তিসম।

অধিনায়ক কপিলের ‘বদান্যতা’য় ভারতের পরাজয়:

ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে খেলতে নেমেছিল ভারত। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ, প্রতিপক্ষ অ্যালান বোর্ডারের অস্ট্রেলিয়া। বোলার মনিন্দর সিংকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে লং অন দিয়ে বল উড়িয়ে মারলেন ডিন জোন্স। লাফিয়েও বলটিকে সীমানাছাড়া হওয়া থেকে আটকাতে পারলেন না সীমানার কাছাকাছি থাকা ফিল্ডার রবি শাস্ত্রী।

বল সীমানা ছাড়িয়েছে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ ছিল না, কিন্তু বিপত্তি বাধল অন্য জায়গায়। জোন্স নিশ্চিত, বল কম করে হলেও সীমানার এক মিটার বাইরে পড়েছে। কিন্তু আম্পায়ার ডিকি বার্ড নিশ্চিত ছিলেন না, শটটি আসলেই ছয় হয়েছে কি না। উপায় না দেখে তাই ফিল্ডার রবি শাস্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন। শাস্ত্রী জানালেন, ছয় নয়, বরং চার হয়েছে। উইকেটরক্ষক কিরণ মোরেও বললেন, তাঁর কাছে ছয় মনে হয়নি সেটিকে।

শেষ পর্যন্ত ফিল্ডারের কথায় ভরসা করে আম্পায়ার বার্ড চারের সংকেত দিলেন। কিন্তু জোন্স এই সিদ্ধান্তে খুশি হতে পারলেন না, আম্পায়ারের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে গেলেন। ইনিংস বিরতিতে এ নিয়ে বিস্তারিত কথা বলবেন, এমন আশ্বাস দিয়ে জোন্সকে ব্যাটিংয়ে ফেরত পাঠান আম্পায়ার। নির্ধারিত ওভার শেষে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ দাঁড়াল ৬ উইকেটে ২৬৮।

মাঝবিরতিতে আম্পায়ারদের সঙ্গে তুমুল বিতর্ক হলো অস্ট্রেলিয়ার। ম্যানেজার অ্যালান ক্রম্পটন সরাসরিই বলে বসলেন, তিনি এই সিদ্ধান্ত মানেন না। কোচ ববি সিম্পসনও বললেন, তিনি বাউন্ডারি লাইনের খুব কাছেই ছিলেন। এটা যে ছক্কা, তা নিয়ে তাঁর কোনো সন্দেহ নেই।

মীমাংসায় আসতে না পেরে দুই আম্পায়ার ভারতীয় অধিনায়ক কপিল দেবের শরণাপন্ন হলেন। সব শোনার পর দারুণ ক্রিকেটীয় চেতনা দেখিয়ে কপিল সেটিকে ছয় হিসেবে মানতে রাজি হলেন। ফলাফল, ইনিংস বিরতিতেই অস্ট্রেলিয়ার দুই রান বাড়িয়ে দেওয়া হলো, ভারতের লক্ষ্য গিয়ে দাঁড়াল ২৭১ রান।

কিন্তু কপিল তো আর জানতেন না, শেষ পর্যন্ত বাড়তি দুই রানই গড়ে দেবে ম্যাচের পার্থক্য! অবশ্য ম্যাচের একপর্যায়ে গিয়ে অতিরিক্ত সেই দুই রানকে ভারতের জন্য কোনো মাথাব্যথা বলে মনে হচ্ছিল না। ১৫ ওভার বাকি থাকতে ভারতের দরকার মাত্র ৬৪ রান, হাতে আছে ৮ উইকেট। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এত সহজে ছাড়লে তো। ক্রেগ ম্যাকডারমট এসে ধসিয়ে দিলেন ভারতের মিডল অর্ডার। শেষ পর্যন্ত সমীকরণ নেমে এল ২ বলে ২ রানে, হাতে মাত্র এক উইকেট। স্টিভ ওয়াহর বলে বোল্ড হয়ে গেলেন শেষ ব্যাটসম্যান মনিন্দর সিং, ভারত অলআউট হলো ২৬৯ রানে, ম্যাচও হারল ১ রানে! অথচ ইনিংস বিরতিতে কপিলের ‘বদান্যতা’য় অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ডে সেই ২ রান যোগ না হলে ভারতই ম্যাচটা জিতত ১ উইকেটে!

জেনে রাখা ভালো, পাঁচবারের রেকর্ড বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়া সেবারই প্রথম জিতেছিল এই ট্রফি। কিন্তু কপিল যদি তা সেদিন না মেনে নিতেন?

‘মানকাডিং’ না করে পরাজিত দলে ওয়ালশ:
ক্রিকেট মাঠে আপাদমস্তক ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিতি ছিল বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের পেস বোলিং কোচ ও ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি কোর্টনি ওয়ালশের। বিশ্বকাপের মঞ্চেও নিজের সেই ভাবমূর্তি ধরে রেখেছিলেন তিনি এবং তার খেসারত হিসেবে একটি ম্যাচ হারতে হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

এই ঘটনাটিও ১৯৮৭ বিশ্বকাপেরই। লাহোরে স্বাগতিক পাকিস্তানের মুখোমুখি দুবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ। চার উইকেট নিয়ে ইমরান খান ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ২১৬ রানে বেঁধে ফেলেন। রান তাড়ায় বেশ সুবিধাজনক অবস্থানেই ছিল পাকিস্তান, ৫ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলেছিল ১৮৩ রান। কিন্তু পরবর্তী ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে সহজ ম্যাচ কঠিন করে তোলে পাকিস্তানই।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ১৪ রান, হাতে ওই একটি উইকেট। বল হাতে যখন কোর্টনি ওয়ালশ, জয়ের পাল্লাটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকেই একটু বেশি হেলে ছিল। প্রথম তিন বলে চার রান নেওয়ার পর লক্ষ্য দাঁড়াল তিন বলে ১০ রান। চতুর্থ বলে ছয় মেরে বসলেন আবদুল কাদির। পরের বলে আরও দুই রান নিলে শেষ বলে পাকিস্তানের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় দুই রান।

শেষ বল করতে ওয়ালশ যখন ছুটে আসছিলেন, নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যান সেলিম জাফর ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন অনেকটাই। ওয়ালশ চাইলেই তাঁকে রানআউট করে দিতে পারতেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজও ম্যাচটা জিতে যেত ১ রানে। কিন্তু ওয়ালশ তা করলেন না, বরং জাফরকে সতর্ক করে দিয়ে আবার বল করার জন্য ফিরে গেলেন। শেষ পর্যন্ত ওই বলে ২ রান নিয়ে পাকিস্তানকে ম্যাচটা জিতিয়ে দিলেন কাদির।

স্পোর্টসম্যানশিপের জন্য অনেকেই তখন ওয়ালশের প্রশংসা করেছিলেন, স্থানীয় এক দর্শক তো তাঁকে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হাতে বোনা একটি কার্পেটও উপহার দিয়েছিল। কিন্তু ওয়ালশের ক্রিকেটীয় চেতনার মাশুল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে হয়েছিল মূল্যবান চারটি পয়েন্ট। শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডের চেয়ে চার পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে ওই আসরের সেমিফাইনালেই ওঠা হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের!

আরও পড়ুন: