Thank you for trying Sticky AMP!!

মুস্তাফিজ, দ্য ফিজ!

সন্ধ্যা হতে না-হতেই অস্থির পায়চারি করেন মাহমুদা খাতুন। আড়চোখে ঘড়ির দিকে তাকান। আগে সময় বুঝতে দিনের আলো দেখেই কাজ চলত। এখন নতুন অনেক কিছুই শিখে নিচ্ছেন। ঘড়ি দেখাটাও। ঠিক ছয়টা বাজলে যে ফোন আসে। অনেক দূর থেকে ভেসে আসে সেই কণ্ঠস্বর, ‘মা, কেমন আছ?’
গত পরশু শুক্রবার। ছয়টা পেরিয়ে আরও মিনিট ১০। তখনো আসেনি ফোন। সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাতক্ষীরায় ঝপঝপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। বাড়ির সেজো ছেলে মোখলেছুর রহমান তখন সদ্য বানানো দোতলা বাড়ির ছাদে। ছাদে গেলেই কেবল ভালো নেটওয়ার্ক মেলে। কপাল ভালো থাকলে ভিডিও কলও করা যায়। বৃষ্টির ছাটে ভিজে যাওয়া রেলিংবিহীন সিঁড়ি বেয়ে উঠে এলেন মাহমুদা খাতুন। সেজো ছেলের কাছে জানতে চাইলেন, ‘ফোন আসিছে?’
এল! ভারতের ছত্তিশগড় থেকে ফোন করে মায়ের কাছে দোয়া চাইলেন মুস্তাফিজুর রহমান। কিছুক্ষণ পরে মাঠে যাবেন। তাঁর দল হায়দরাবাদ সানরাইজার্সের গুরুত্বপূর্ণ খেলা দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের সঙ্গে। ম্যাচ থাকলে রুটিন কিছু কাজ সব খেলোয়াড়কেই করতে হয়। মুস্তাফিজের রুটিনের মধ্যে অবশ্যকর্তব্য হিসেবে আছে মা ও বাবাকে ফোন করে দোয়া নেওয়া। ব্যাকুল মায়ের কণ্ঠস্বরটা ঠিক বোঝা যায়, ‘বাবা, ঠিকমতো খাচ্ছ তো? একদম তো শুকায় গেছ বাবা!’

টেলিভিশনে আইপিএলে মুস্তাফিজের খেলা দেখছেন তাঁর বাবা-মা ও ভাই। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে মুস্তাফিজের বাড়ি থেকে গত শুক্রবার তোলা ছবি l সাহাদাত পারভেজ

জবাবে মুস্তাফিজ কী বলেন শোনার সুযোগ হয় না আমাদের। এতটুকু বুঝি, মাকে ফেলে দূর থেকে পড়ে থাকতে তাঁরও অনেক কষ্ট! ছয় সন্তানের মধ্যে বাড়ির সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে আদরের ছেলেটা যে কখনোই এত দিন বাড়ি ছেড়ে থাকেনি। তবু এই কষ্ট মেনে নিয়েছেন মা।
বুঝে গেছেন, তাঁর কোলের ছেলেটা, এই সেদিন মুখে ভাত তুলে খাইয়ে না দিলে মুখ ফুলিয়ে বসে থাকা ছেলেটা এখন শুধু তাঁর একার নয়। এই ছেলেটার ওপর এখন সারা বাংলাদেশের অধিকার। এ ছেলেটার জন্য শুধু তিনি নামাজ শেষে মোনাজাতে বিশেষ প্রার্থনা করেন না; করে বাংলাদেশের মানুষ। আইপিএল, হোক না সেটা শুধুই ভারতের ঘরোয়া এক টুর্নামেন্ট; সেখানেও মুস্তাফিজের ভালো বোলিংকে বাংলাদেশের ক্রিকেটপাগল মানুষ নিজেদের গর্ব হিসেবেই দেখে। মুস্তাফিজ নামটা এবারের আইপিএলে সবচেয়ে বেশিবার উচ্চারিত। আর তাঁর নামের সঙ্গে সঙ্গে যে উচ্চারিত হয় বাংলাদেশের নামটাও!
মাত্র এক বছরের একটু বেশি সময় হলো আবির্ভাবের। তাতেই কী করে যেন এই ছেলেটা বাংলাদেশের সবার মন জিতে এবার হেলায় জয় করতে চলেছেন ক্রিকেট-বিশ্ব! না হলে হায়দরাবাদ, যে শহরের ভাষাও বড্ড অচেনা, খাবার কিংবা সংস্কৃতি; সেখানেও কেন মুস্তাফিজকে নিয়েই সবচেয়ে বেশি ব্যানার-ফেস্টুন উড়বে গ্যালারিতে? মুস্তাফিজ বিশেষ ডাকনামে পরিচিত হবেন—দ্য ফিজ! মুস্তাফিজ বোলিংয়ে এলেই বা কেন গ্যালারির দৈত্যপর্দায় ভেসে উঠবে, ‘আনলিশ দ্য ফিজ!’ যে কথায় লুকিয়ে তাঁর বোলিং দেখার জন্য সবার সে কী ব্যাকুলতা!
মুস্তাফিজের সেই ৪ ওভার, ধাঁধার চেয়েও জটিলতর সেই চারটি ওভার! ব্যাটসম্যানদের প্রবল দাপটের খেলা এই টি-টোয়েন্টিতে, চার-ছক্কা হই হইয়ের খেলা যে একটা বোলারের প্রতিটি বলও এমন উপভোগ্য হতে পারে, মুস্তাফিজই তো নতুন করে জানালেন।
সারা বাংলাদেশ সেই চারটি ওভার দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে বসে টিভি পর্দার সামনে। তাহলে মুস্তাফিজের বাড়িতে কী হয়?

মুস্তাফিজ

সেটা দেখার জন্যই ঢাকা থেকে অনেক দূরে, সাতক্ষীরা থেকেও প্রায় এক ঘণ্টার গাড়িপথ পেরিয়ে কালীগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামে আমাদের আসা। টানা কয়েক দিনের প্রবল দাবদাহের মধ্যে স্বস্তির বৃষ্টিই স্বাগত জানিয়েছে আমাদের, মুস্তাফিজ যেমন একপশলা চোখজুড়ানো বৃষ্টি হয়েই এসেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটে। কালীগঞ্জ উপজেলা থেকে সরু পথ বেয়ে আশাশুনি উপজেলার পথ ধরে এগোলে তবেই তেঁতুলিয়া গ্রামটা। আশাশুনি? মুস্তাফিজের বোলিংয়েই তো আমরা এখন নতুন আশার গান শুনি!
চারদিকে চোখজুড়ানো সবুজ। সেই প্রচ্ছদপটে প্রকৃতি যেন আয়না বানিয়ে রেখেছে বিস্তীর্ণ চিংড়িঘের। এখানকার সবচেয়ে অবস্থাপন্ন চিংড়িঘেরের মালিকদের একজন আবুল কাশেম গাজী। খুব করে চেয়েছিলেন বাড়ির ছোট ছেলেটা যেন ডাক্তার হয়। পড়াশোনায় মন বাড়াতে একজনের বদলে দুজন গৃহশিক্ষকও রেখেছিলেন। কিন্তু পারেননি! ভাগ্যিস পারেননি, বাঁ হাতে মায়াবী কাটারের বদলে মুস্তাফিজ রোগীর বুকে স্টেথো চেপে ধরছেন—এই দৃশ্যটা এখন ভাবতেও বেমানান লাগে!
ছোটবেলায় মাকে যেমন করে জড়িয়ে ধরতেন, মুস্তাফিজ নাকি তেমন করে ছোট্ট বলটা জড়িয়ে ধরে ঘুমাতেন। বলের প্রতি এমনই ছিল তাঁর ভালোবাসা। এই গল্প শোনালেন সেজো ভাই মোখলেছুর, যে ভাইয়ের পুরোনো মোটরসাইকেলে চেপে ক্রিকেট খেলতে এসে সাতক্ষীরা টু খুলনা টু ঢাকা হয়ে ক্রিকেট-সাম্রাজ্যেই মুস্তাফিজ কী করে তাঁর গৌরবপতাকা ওড়ালেন, সেই গল্পও তো এখন ক্রিকেটীয় রূপকথা।
তাঁর কাছেই জানা গেল, এলাকাবাসীর চাওয়া পূরণ করতে বাজারে বড় পর্দায় খেলা দেখাতে হয়েছে। হায়দরাবাদের ম্যাচ থাকলে যেন সেটা হয়ে উঠত ছোট্ট একটা গ্যালারি। বাড়িতে আগে টিভি ছিল না। পরিবারের কর্তা, একই সঙ্গে ভীষণ রাশভারী আর অতিথিপরায়ণ মৃদুভাষী আবুল কাশেম পরে সেই অলিখিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে নিজেই কিনে দিয়েছেন ২১ ইঞ্চি একটা টিভি। সেই টিভিতে পরিবারের সবাই মিলে খেলা দেখা হয়। আশপাশের প্রতিবেশীরাও ভিড় করেন। আমরাও মিশে যেতে যাই সেই দর্শকের ভিড়ে। ম্যাচ শুরুর আগে সবার অবশ্য একটাই টেনশন—কারেন্ট থাকবে তো! খুব বিদ্যুৎ-বিভ্রাট চলছে। লোডশেডিংয়ের কারণে মুস্তাফিজের পুরো ৪ ওভার বোলিং দেখার সৌভাগ্য খুব কম সময়ই মিলেছে তাঁর পরিবারের, তাঁর মায়ের।
যে মা শুধু ছেলের বোলিং দেখার জন্য টিভির দিকে ব্যাকুল নয়নে তাকিয়ে থাকেন না; দেখেন, ছেলেটা ভালো আছে তো! যে মা কখনো প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনাই শেখেননি, তিনিও খেলা দেখতে বসলে আঁক কষেন—কত হলো প্রতিপক্ষের রান, বাকি আছে কত। ছেলে কি পারবে এই রানের চাকা থামাতে?
নিচতলায় ছোট্ট একটা শোবারঘরেই টিভি। চারদিকে ছড়িয়ে আছে এরই মধ্যে জমে যাওয়া অজস্র স্মারক; ট্রফি, ডামি চেক, ম্যাচসেরা হওয়া ম্যাচের সেই বলগুলোও। আমরা বসে আছি নতুন বানানো দোতলার ঘরে। মুস্তাফিজের নতুন খাটটা পড়ে আছে, যে খাটে এখন খুব কমই শোয়া হয় তাঁর। ফাইভ স্টার হোটেলে হোটেলে কাটে জীবন। যে জীবনে একধরনের আনন্দ অবশ্যই আছে। তা তিনি উপভোগও করেন। কিন্তু কাঁটাচামচ দিয়ে খুব কেতা করে খাওয়ার চেয়ে তাঁর বেশি ভালো লাগে গরু আর মুরগির মাংসের ভুনা। সেটাও দেশি মুরগি হতে হবে অবশ্যই। বাড়ি ফিরলে তাঁর এই দুটি পদ রান্না করা বাধ্যতামূলক। টেবিলে আবার সাজিয়ে রাখতে হবে সেই রান্না। মুস্তাফিজ খাবেন কম, দেখবেনই বেশি। ভিনদেশি খাবার খেয়ে খেয়ে অরুচি ধরে যাওয়া চোখকেও যেন তৃপ্তি দিতে চান। সবচেয়ে বড় কথা, মায়ের হাতের রান্নার চেয়ে সুস্বাদু খাবার পৃথিবীতে আর আছে নাকি!
এই গল্প যখন শুনছিলাম মোখলেছুরের কাছে, সেই সময়ই তাঁর মুঠোফোনে কী একটা মেসেজ এল। ‘দেখিছেন’, বলে আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিলেন ফোন। মুস্তাফিজ সন্ধ্যার খাবারের একটা ছবি পাঠিয়েছেন মাত্রই—কী সব শাকসবজি! এসব খেয়ে মন ভরে!

মুস্তাফিজুর রহমান

তবু মুস্তাফিজ সেই জীবনের সঙ্গে অবিশ্বাস্যভাবে মানিয়ে নিয়েছেন। বাবা নিজে হিসাব করে বলে দেন, ‘ছেলেডার আর বয়স কত হবিনে? ২০ বছর ৫ মাস! কত কিছু নিজেরে নিজেরে করতি হয়।’ আর কী কী বদলেছে এ সময়টায়? চার শ মণ ধানের গোলা আর মহিষের বাথান সরিয়ে ফেলার ইতিবৃত্ত শোনাতে শোনাতেই আবুল কাশেম বলেন, ‘সে কী যে মাইনষের ভিড়! কী কব!’
দূরদূরান্ত থেকে, প্রত্যন্ত গ্রামে, যেখানে এখনো সাহেব-সুবোদের ২২ গজি খেলাটার চেয়ে ‘গেদন’ (দাঁড়িয়াবান্ধা) এখনো বেশি জনপ্রিয়; সেখানকার মানুষও ছুটে আসে। মুস্তাফিজের দেখা তো পরিবারের লোকেরাই এখন পান কপালগুণে, দর্শনার্থীদের যেন এই বাড়ির ইট-চুন-সুরকি দেখেও আনন্দ! ‘ও যেবার ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ খেইলে ফেরল, দুই দিনে তো মনে হয় কেবল পাঁচ হাজার টাকার মিষ্টিই খাইয়েছি বাড়িতে আসা মেহমানদের’—আবুল কাশেমের কণ্ঠে গর্ব খেলা করে।
আপনি নাকি পোস্ট অফিসে গিয়ে নিষেধ করে এসেছেন, বাড়িতে যেন চিঠি না আসে! বিশেষ করে মেয়ে ভক্তদের? মুস্তাফিজের বাবার মুখে হাসি। এত বিধিনিষেধের দরকার আছে বলে মনে করেন না। এও মনে করেন, কোটি টাকার আইপিএলে, নাচুনে কন্যা আর বলিউডি গ্ল্যামারের আইপিএলে গেলেও পথ হারাবে না তাঁর ছেলে। ক্রিকেটের প্রতি সৎ ভালোবাসা আর টাকার প্রতি নির্মোহ থাকার পারিবারিক শিক্ষাই পথ হারাতে দেবে না তাঁকে।
ছেলে একটা গাড়ি কিনেছে। সেটাও ঘরবন্দীই থাকে। এখনো বাড়ির লোকেরা মোটরসাইকেলেই স্বচ্ছন্দ। মুস্তাফিজের যাওয়া-আসার সুবিধা হয় ভেবেই গাড়িটা রাখা। ছেলেটা যে ঢাকায় থাকতেই চায় না। ইট-কাঠ-কংক্রিটে হাঁপিয়ে উঠলে এক দিনের ছুটি পেলেও ছুটে আসে সেই চেনা গ্রামে। এখানে পুকুরে ঝাঁপ দেওয়া যায়, কাকশিয়ালী নদীতে মাছ ধরতে যাওয়া যায়। মাছ ধরা মুস্তাফিজের ভীষণই নেশা। এখন অবশ্য মাছ ধরার চেয়ে ব্যাটসম্যানদের শিকার করতেই বেশি আনন্দ তাঁর। তবে বাড়ি এলে বড়শি নিয়ে ছুটে যান। সেখানেও নাকি তাঁর অবিশ্বাস্য সাফল্য!
কেউ একজন খবর দিল, টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছে হায়দরাবাদ। সবাই যেন একটু খুশিই। বিদ্যুৎ চলে গিয়ে আবার ম্যাচের শেষের দিকে এলেও মুস্তাফিজের বোলিং দেখা যাবে। একটু লো ভোল্টেজ বুকটা কাঁপিয়ে দিল। এত পথ মাড়িয়ে এসে কি আসল উদ্দেশ্যটাই বৃথা যাবে? আমরা যে দেখতে চাই মুস্তাফিজ একটা উইকেট পেলে কী করেন তাঁর মা!
দুটি রানআউটে পথ হারিয়ে হায়দরাবাদের সংগ্রহটা হলো মোটে ১৫৮। বোলিংয়ের শুরুটা হলো আরও পথ হারানো—একটা বৈধ বল হওয়ার আগেই ছয়টি অতিরিক্ত রান দিয়ে বসলেন ভুবনেশ্বর কুমার। আশিস নেহরাও নেই। ওদিকে আছেন দিল্লির ঋষভ পন্ত, মুস্তাফিজের বোলিং যে দু-তিনজন খেলতে পেরেছে ভালোমতো, তাঁদের একজন। মাহমুদা খাতুন নাকি ভিনদেশি খেলোয়াড়দেরও এখন চিনে গেছেন বেশ! মুস্তাফিজ বোলিংয়ে এলেন খানিকটা আগেভাগে। প্রথম বলটাই মায়ের চোখে আনন্দের ঝিলিক এনে দিল। বাবার চোখে গর্ব। একটুর জন্য ব্যাটের কানা লাগল না বলে বাকি সবার অস্ফুট ‘ইশ্’।
পন্ত একটা চারও মেরে দিলেন! ঘোমটার আড়ালে থাকা মায়ের চোখে তখন যেন অভিমান! মুস্তাফিজও মাথা নাড়তে নাড়তে বোলিং মার্কে। তিনি কি জানেন, কতটা ব্যাকুলতা নিয়ে খেলা দেখেন মা! নিশ্চয়ই জানেন। রক্তের সম্পর্কের অলৌকিক টেলিপ্যাথি ব্যাখ্যা করার সাধ্য কী!
দ্বিতীয় ওভারটাতেও উইকেট মিলল না। বোলিং কিন্তু করছেন সেই ঠাসবুনুনির। তৃতীয় ওভারটায় একটা ক্যাচ উঠল। কী সহজ ক্যাচটা ফেলে দিল ফিল্ডার! বিদ্যুৎ থাকে কি না সেই টেনশন ততক্ষণে উধাও। এ যে অন্য উত্তেজনা! ম্যাচটা বের করে নিচ্ছে দিল্লি। ১২ বলে দরকার মাত্র ১৬। শেষের আগের ওভারটা করতে এলেন মুস্তাফিজ। এইবার সেই জাদু!
মাত্র ৫ রান দিলেন, সঙ্গে একটা উইকেটও। অচেনা অতিথিদের কারণে আটপৌরে লাজুক মা তখনো খোলসে। তবু গর্বিত মায়েদের হৃৎস্পন্দন যেন ঠিকই টের পাওয়া যায়। প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া ম্যাচটায় নতুন আশার সলতে উসকে দিলেন মুস্তাফিজই। ভীষণ নাটকীয়তায় শেষ পর্যন্ত ১ বলে ২ রানের সমীকরণ মিলিয়ে জিতে গেল দিল্লি। তাতে এখনো শীর্ষে থাকা হায়দরাবাদের খুব বেশি ক্ষতি হলো না, তবু সবার মন খারাপ! ছেলের সঙ্গে সঙ্গে অচেনা এই দলটা, এই দলের ওয়ার্নার-মরগানদেরও যেন আপন সন্তান করে নিয়েছেন মা মাহমুদা, বাবা আবুল কাশেম।
মুস্তাফিজের বাড়িতে না গেলে, তাঁর বাবা-মায়ের হৃদয়ের এই বিশালতা না দেখলে; চারদিকের ছড়ানো প্রকৃতির ঔদার্য না দেখলে মুস্তাফিজকে বোঝা হয়তো সম্ভব নয়। বিশাল এই প্রকৃতিই যে মুস্তাফিজকে অনেক বড় স্বপ্ন দেখার একটা মানুষ বানিয়ে দিয়েছে; যাঁর কাছে আপাতত অসম্ভব বলে কিছুই নেই।
আর হয়তো এ কারণেই, গভীর রাতে, দুর্গম এক গ্রামে অচেনা একটা পরিবারকে ছেড়ে আসার সময়ও মন খচখচ করছিল আমাদের। মুস্তাফিজের মাকে যে ততক্ষণে আমরাও মা বলেই ডেকেছি। মুস্তাফিজের বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করার সময় আমাদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া প্রৌঢ় আঙুলগুলোয় ছিল আপন বাবারই স্নেহ!

আরও পড়ুন: 

মায়েরই দেখা হয় না মুস্তাফিজের খেলা!

মুস্তাফিজের বিশ্রামের পক্ষে রাইটও