মাহমুদউল্লাহর ব্যাট মুখ ফুটে কথা বলতে পারছে না অনেকদিন হলো
মাহমুদউল্লাহর ব্যাট মুখ ফুটে কথা বলতে পারছে না অনেকদিন হলো

‘সাইলেন্ট কিলার’ মাহমুদউল্লাহই এখন ‘সাইলেন্ট’

টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা কেমন হওয়া উচিত?

যেহেতু ২০ ওভারের ম্যাচ, তাই মার-মার কাট-কাট মানসিকতাই থাকা উচিত—এটা সাধারণ ভাবনা। কিন্তু সাধারণ ভাবনা দিয়ে ক্রিকেট চলে না। সব বলেই ছক্কা মারতে গেলে কে জানে, ১০ বলের মধ্যেই ইনিংস শেষ হয়ে যেতে পারে!

বলতে পারেন, টি-টোয়েন্টি তো ঝুঁকি নেওয়ারই খেলা। পাল্টা প্রশ্ন হতে পারে, টি-টোয়েন্টিতে এই মুহূর্তে বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেট যাঁর—আন্দ্রে রাসেল কতটা ঝুঁকি নেন? সব বলেই তেড়েফুঁড়ে মারেন? নাকি একটু বুঝেশুনে খেলে ছক্কা, চার, দুই, এক করে নেওয়াতেই তাঁর স্ট্রাইকরেট ১৫৬?

মূল পার্থক্যটা মানসিকতা আর বুদ্ধিমত্তায়। এই যুগের তারকা ক্রিকেটার শ্রেয়াস আইয়ার কাল ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’য় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটিং নিয়ে নিজের দর্শন ব্যাখ্যা করেন, ‘ব্যাটসম্যান হিসেবে প্রতি বলেই রান করাটা মাথায় থাকতে হবে। আমার মনে হয় ডট বল খেলাটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।’

শ্রেয়াস টি-১০ যুগের ব্যাটসম্যানদের প্রতিনিধি। তিনিও বলে বলে ছক্কা মারার কথা বলেননি। তা না করেও তো স্ট্রাইকরেট ১৩০ ছুঁই ছুঁই রাখছেন অনেকে!

বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাটসম্যানের ক্ষেত্রে বাস্তবতা ভিন্ন। দেখা যায়, একটা ওভারে ৩-৪ বল ডট দিয়ে শেষ দুই বলে ছক্কা মারতে মরিয়া হয়ে আউট হচ্ছেন। স্ট্রাইক অদলবদল সেভাবে হচ্ছে না। অভিজ্ঞরা এগিয়ে আসতে পারেন।

ঘন্টা কয়েক পর আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হচ্ছে। বাংলাদেশ দলে সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ১১৩ ম্যাচ খেলা ৩৬ বছর বয়সী মাহমুদউল্লাহ—তিনি আবার দলের অধিনায়কও। দায়িত্ব তাঁর-ই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তাঁর এই দায়িত্বের মোড়ক ফুঁড়ে ‘দায়’ও বেরিয়ে আসছে। সেই দায় স্ট্রাইকরেটের, সেই অতৃপ্তি চেনা মাহমুদউল্লাহর অচেনা হয়ে ওঠায়।

মাহমুদউল্লাহর ব্যাটেই বাংলাদেশের অনেক জয়ের গল্প লেখা

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ব্যাপ্তি আলাদা, মেজাজও। তবু উদাহরণে শেষ ওয়ানডেকে টানা যায়। সংস্করণ যা-ই হোক, নতুন ম্যাচে মাঠে নামার আগে সবশেষ ম্যাচে খেলার ছাপটা এড়ানো তো সহজ নয়!

সেদিন ৫৩ বলে ২৯ রানে অপরাজিত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ত্রিশতম ওভার থেকে বাংলাদেশের ইনিংসের শেষ (মোট ১৬.৫ ওভার) পর্যন্ত ছিলেন। কোনো বাউন্ডারি নেই! তাঁর সামনেই বাকি ৫ উইকেট পড়েছে, যখন হাতে শেষ দুই উইকেট তখনও বোলারদের আগলে রেখে ব্যাট করেননি।

ওভারের প্রথম দুই-তিন বলের মধ্যে সিঙ্গেল নিয়ে তাসকিন-শরীফুলদের ঠেলে দিয়েছেন রশিদ খান-মুজিব উর রেহমানদের সামনে। তাতে ক্ষতিটা হয়েছে দলের। পুরো ৫০ ওভার খেলা যায়নি, ৪৬.৫ ওভারেই অলআউট বাংলাদেশ।

এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহকে তখন আর লড়াকু ‘নিঃসঙ্গ শেরপা’ মনে হয়নি। উল্টো মনে হয়েছে, বয়সের ভারে চাপ সামলাতে ব্যর্থ একজন। অথচ এই মাহমুদউল্লাহই চাপ সামলে বাংলাদেশের বেশ কিছু স্মরণীয় জয়ের ‘নিউক্লিয়াস’, এই মাহমুদউল্লাহই ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে শেষ ওভারে মারা ছক্কায় বাংলাদেশের ফাইনালে ওঠার নায়ক।

আইয়ারের কথায় ফেরা যাক। ‘প্রতি বলেই রান করার মানসিকতা’—এটুকু করতে সব বলে চার-ছক্কা মারতে হয় না। ক্রিকেটে একটা প্রচলিত কথা হলো, সিঙ্গেলস-ডাবলস ফিল্ডারদের চাপে ফেলে। তাতে মারার বল সীমানার বাইরে পাঠানোর পাশাপাশি ফিল্ডিং ব্যর্থতায় ‘বোনাস’ বাউন্ডারিও পাওয়া যায়। শেষ ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ে বলে বলে রান নেওয়ার তাড়ণা একেবারেই দেখা যায়নি।

হ্যাঁ, উইকেট পড়ায় চাপে ছিলেন বটে, কিন্তু অন্য প্রান্তে লিটন দাস, মেহেদী হাসান ও আফিফ হোসেনদের মতো স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা থাকার সময়েও তাঁর স্ট্রাইকরেট ছিল ৫৩.৮৪। বোলাররা এসে অলআউট হওয়ার পর তা বেড়ে ৫৪.৭১। কোনো পরিস্থিতিতেই মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের সুর এতটুকু বদলায়নি।

কেন—সে প্রশ্নের উত্তর শুধু মাহমুদউল্লাহই দিতে পারবেন। বাইরে থেকে শুধু আন্দাজ আর বিশ্লেষণের চেষ্টাই করা যায়। যেমন ধরুন, মাহমুদউল্লাহ সাধারণত ছয়-সাতে ব্যাট করেন। শেষ ওয়ানডেতে তিনি ব্যাটিংয়ে নামার পর ম্যাচটা কিন্তু টি-টোয়েন্টি সংস্করণ হয়ে গিয়েছিল। হাতে ছিল ২১ ওভার ও ৬ উইকেট—যেখানে লিটন, আফিফ ও মিরাজ ছিলেন।

এমন জায়গা থেকে ইনিংস ‘ফিনিশ’ করায় যাঁর অভিজ্ঞতা প্রায় ১৫ বছরের, সেই মাহমুদউল্লাহ শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকলেও বাংলাদেশ বাকি পথে ১৭.৫ ওভার পর্যন্ত গিয়ে ৬৭ রান তুলতেই অলআউট। টি-টোয়েন্টির ব্যাটিংটাও হয়নি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে শেষদিকে মোস্তাফিজদের সঙ্গে নিয়ে মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংয়ের ধরন ও কৌশল সমালোচনা কুড়িয়েছে

চাইলে চিত্রটা আরেকটু বড় করা যায়। আগের দুই ম্যাচ জেতায় সিরিজ এর মধ্যেই বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টি সিরিজ সামনে রেখে শেষ ওয়ানডেতে অমন জায়গা থেকে টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেললে ‘ম্যাচ প্র্যাকটিস’-এর প্রস্তুতিটাও হয়ে যেত।

হয়নি। কারণ, যাঁর কাঁধে এই দায়িত্ব বর্তায়—মাহমুদউল্লাহ—তিনি দুই বছর ধরে স্ট্রাইকরেট বাড়াতে পারছেন না। পাঁচ, ছয় কিংবা সাত বছর আগের সেই মাহমুদউল্লাহকে দেখা যাচ্ছে না। পাল্টা প্রশ্ন হতে পারে, মাহমুদউল্লাহর কাছে চাওয়া একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না? বয়স হয়েছে, সবকিছু একটু ঢিমেতালেই হবে। স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারও ক্যারিয়ারের শেষ দিকে ইচ্ছেমতো শট খেলতে পারেননি। তাই বলে টেন্ডুলকারের বলে বলে রান নেওয়ার মানসিকতাও কিন্তু পাল্টায়নি। ওই তো আইয়ারের কথাটাই—‘মানসিকতা।’

সেখানেই মাহমুদউল্লাহর খামতিটুকু এখন স্পষ্ট। অন্তত দুই বছর ধরে।

টি-টোয়েন্টি সংস্করণে গত দুই বছরে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ ম্যাচ খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। স্ট্রাইকরেট ১০৬.২৫—যা তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ার স্ট্রাইকরেটের (১১৭.৮৮) চেয়ে কম। ১২৪.২৪ স্ট্রাইকরেট নিয়ে শীর্ষে থাকা তামিম ইকবাল এ সময় মাত্র ১ ম্যাচ খেলায় তাঁকে হিসেবে না রাখাই যৌক্তিক।

কিন্তু তামিমের পর স্ট্রাইকরেট বিচারে নামগুলো যথাক্রম দেখুন—সৌম্য সরকার (১৮ ম্যাচে ১২২.৪২), মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন (১৬ ম্যাচে ১১৭.৩৩), আফিফ হোসেন (২৯ ম্যাচে ১১৬.৪১), শামীম হোসেন (১০ ম্যাচে ১১১.৭১), লিটন দাস (১৯ ম্যাচে ১০৮.২৭), নুরুল হাসান (২১ ম্যাচে ১০৭.৪৩), সাকিব আল হাসান (১৮ ম্যাচে ১০৬.৮৬) এবং তারপর মাহমুদউল্লাহ।

টি-টোয়েন্টি খেলাটা এ সময় যেভাবে এগিয়েছে, বাকি দেশগুলো যেভাবে খেলে, সে অনুযায়ী ওপরে কারও স্ট্রাইকরেটই তেমন সন্তোষজনক নয়। আর এই বিন্দু বিন্দু অসন্তোষের মাঝে মাহমুদউল্লাহর স্ট্রাইকরেট আরও দুশ্চিন্তার। এই আফগানিস্তান সিরিজেই তিনি যে পজিশনে ব্যাট করবেন, সেখান থেকে তো দ্রুত রান তোলার সঙ্গে ইনিংসও শেষ করে আসতে হবে। কিন্তু রশিদ-মুজিবদের সামনে এই স্ট্রাইকরেটের ব্যাটিং দলের জয়ে কতটুকু কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে?

প্রশ্নটা তাঁর সামর্থ্য নয়, মানসিকতা নিয়ে।

মাহমুদউল্লাহর ব্যাট আবার ছন্দে ফিরবে?

যেমন ধরুন, এই দুই বছরে টি-টোয়েন্টিতে স্ট্রাইকরেটে বাংলাদেশের শীর্ষ দশ ব্যাটসম্যানের মধ্যে সর্বোচ্চসংখ্যক চার (৩৬) এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ (১২) ছক্কা মেরেছেন মাহমুদউল্লাহ। তবু স্ট্রাইকরেট ১০৬ কেন? ওই তো, স্ট্রাইক অদলবদল করে খেলায় অরুচি।

সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্নটা তোলা যাচ্ছে না। তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টির আগে যেমন সংবাদ সম্মেলনে ওয়ানডে সিরিজে মাত্র এক বাউন্ডারি এবং স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মাহমুদউল্লাহর কন্ঠে অভিমানসুলভ ক্ষোভ ঝরল, ‘ইনশা আল্লাহ কাল প্রথম বল থেকেই মারব। চার মারার চেষ্টা করব, ছয় মারার চেষ্টা করব।’

মাহমুদউল্লাহ দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তারওপর অধিনায়ক। ১৫ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে দলের জন্য কত রকম চাপ সামলে এসেছেন। সব সময় উত্তর দিয়েছেন ব্যাটেই। কিন্তু আজ, তাও ম্যাচের আগের দিন তাঁর মুখ থেকে এমন কথা বেরোনোয় একটা বিষয় আন্দাজ করা সহজ—বাইশ গজের রান করার চাপের পাশাপাশি মাইক্রোফোনের সামনেও চাপ সামলাতে গিয়ে কূটনৈতিক (এক-দুই রান) না হয়ে মেজাজ (চার-ছক্কা) হারাচ্ছেন অধিনায়ক। দলের জন্য, বাকি সতীর্থদের জন্য এসব কি আদৌ-ও কোনো মঙ্গলবার্তা?

আচ্ছা, মাহমুদউল্লাহর অতীত অবদানে তাকিয়ে এসব বিতর্ক না হয় তুলে রাখা হলো। তাই বলে পরিসংখ্যানের মুখে কুলুপ এঁটে দেওয়া সম্ভব? পরিসংখ্যান কখনো যেমন আস্ত গাধা, তেমনি নির্মম সত্যবাদীও।

দুই বছর থেকে গত এক বছরের হিসেবে আসা যাক। স্ট্রাইকরেটের হিসাবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেই নয় নম্বরেই থাকবেন মাহমুদউল্লাহ, সংখ্যার বিচারে স্ট্রাইকরেট আরও কমেছে—১০৫.৩০। শীর্ষ দশের মধ্যে চার মারায় শীর্ষে, ছক্কায় দ্বিতীয়। তবু স্ট্রাইকরেট ছয়-সাতে নামা ফিনিশারের মতো না হওয়ার কারণটা আগেই বলা হয়েছে।

টেস্টে স্ট্রাইকরেটের হিসাব অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক, তবে সাদা বলে সর্বশেষ যে ম্যাচে ১০০‍+ স্ট্রাইকরেট ছিল মাহমুদউল্লাহর, সেটা গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, যে ম্যাচে বাংলাদেশ শেষ ওভারে গিয়ে ৩ রানে হারে। মাহমুদউল্লাহ-আফিফ শেষ ওভারে ১৩ রান করতে পারেনি। মাহমুদউল্লাহ ওই ওভারে শেষ চার বল খেলে ৬ রান করেছিলেন। এই তথ্যে তাঁকে সরাসরি দোষারোপ করা হচ্ছে না, তবে ‘ফিনিশার’ হওয়ায় দায় এড়ানোর সুযোগও তো নেই।

হতাশা বুকে চেপে রেখে উত্তরটা ব্যাটে দিলেই বিতর্কটা মাটিচাপা দিতে পারবেন মাহমুদউল্লাহ

শুধু আলাদা করে টি-টোয়েন্টির হিসেবও করা যায়। এ সংস্করণে মাহমুদউল্লাহর সর্বশেষ অর্ধশতক গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে। তারপর ৮ ইনিংসের মধ্যে মাত্র দুই ইনিংসে ১০০‍+ স্ট্রাইকরেট—টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯ বলে অপরাজিত ১০ এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ২৪ বলে অপরাজিত ৩১।

তারপর শেষ পাঁচ ম্যাচে তাঁর স্ট্রাইকরেট—৩৩.৩৩, (৯ বলে ৩), ৮৮.৮৮ (১৮ বলে ১৬), ৫৪.৫৪ (১১ বলে ৬), ৮০.০০ (১৫ বলে ১২) এবং ৯২.৮৫ (১৪ বলে ১৩)। আর এই পাঁচ ইনিংসে তাঁর বাউন্ডারি? সাকল্যে ৪টি চার, ছক্কা নেই।

পরিসংখ্যানের কচকচানি থাক। খালি চোখে যা দেখা যাচ্ছে তা নিয়েও বলা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে শেষ ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহর স্পিন খেলার ধরন বেশ অবাক করেছে।

বোলার লেগ স্পিনার হোক কিংবা অফ স্পিনার—প্রায় সব বলেই আগেভাগে সামনে পা নিয়ে দাঁড়াচ্ছেন মাহমুদউল্লাহ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সামনের পায়ে রক্ষণাত্মক খেলছেন কিংবা ব্যাটটা একটু এদিক-সেদিক করে রান বের করার চেষ্টা করছেন—সেটাও পয়েন্ট, কাভার, ফাইন লেগ এবং শর্ট মিডউইকেটে, যেখানে ফিল্ডারদের এমনিতেই রাখা হয়। তাতে এক-দুই করে রান বের করাটা আর হয়ে উঠছে না।

সমাধান?

শেষ ওয়ানডেতে মাহমুদউল্লাহ নিশ্চয়ই লিটন দাসের ব্যাটিং দেখেছেন। রশিদ-মুজিবরা বল ছাড়ার আগেই মাহমুদউল্লাহর মতো সামনে পা নিয়ে নিজের নড়াচড়ার জায়গাটা ‘লক’ করেননি লিটন। বলের লেংথ বুঝে পা সামনে নিয়ে আবার পেছনে এসেছেন, কিংবা তাঁর উল্টোটা করেছেন—তাতে বলটা ‘গ্যাপ’-এ খেলার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা ও সময় পেয়েছেন।

মাত্র ৭ চারের ৮৬ রানের সেই ইনিংসে এভাবে এক-দুই করে নিয়ে বাকি ৫৮ রান করেছেন লিটন। স্ট্রাইকরেট ৭৬.১০—বর্তমান ওয়ানডে খেলার ধরন হয়তো এর চেয়েও বেশি স্ট্রাইকরেটে খেলার দাবি রাখে, কিন্তু বাংলাদেশের মানদণ্ড এবং ম্যাচের পরিস্থিতি বুঝে তা কোনোভাবেই খারাপ বলা যাবে না।

কিন্তু মাহমুদউল্লাহ মনের ‘অসুখ’ সারাতে না পেরে কথা শোনার সুযোগ নিজেই করে দিচ্ছেন। ক্যারিয়ারের গোধূলিলগ্নে এসে আজ মেজাজ হারালেন। মেজাজ হারিয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সংবাদ সম্মেলনেও। অর্থাৎ অসুখটা স্পষ্ট। ‘সাইলেন্ট কিলারে’র ব্যাট মাঠে ‘সাইলেন্ট’, কিন্তু গলা আওয়াজ পাচ্ছে মাঠের বাইরে মাইক্রোফোনের সামনে।