কখনো সিগারেট খাননি, এর স্বাদ কেমন সেটা জানার আগ্রহও জাগেনি কখনো। মানুষ কীভাবে এত সতর্কবাণী দেখেও নিকোটিনের স্বাদে মজেন, সেটা ভেবে একটু অবাকই হন সাকিব আল হাসান। আজ বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে লিখেছেন ওয়ানডের এক নম্বর অলরাউন্ডার—
ধূমপানে বিষপান। সেই বিষ মানুষের কতটা ক্ষতি করে, তা আমি বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি শপের তাকে সাজানো সিগারেটের প্যাকেট দেখেও বুঝতে পারি। কী বীভৎস সব ছবি থাকে সেসব প্যাকেটে! গলার মধ্যে ঘা হয়ে আছে। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি কালো হয়ে গেছে। হার্টের অবস্থাও খুব খারাপভাবে দেখানো হয় এসব ছবিতে।
এখন তো নাকি সব সিগারেটের প্যাকেটেই উল্লেখ থাকে, ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আমার কাছে অবাক লাগে, প্যাকেটের গায়ে ওসব ছবি দেখে, ও রকম সতর্কবাণী দেখেও কী করে একজন মানুষ ওই প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটে রাখে, আগুন ধরিয়ে সেটাতে সুখটান দেয়! এ আসলেই সুখটান, নাকি প্রতি টানে মৃত্যুকেই কাছে টেনে আনা!
চিকিৎসকের কথা নাহয় আমি–আপনি অনেক সময় গ্রাহ্য করি না। কিন্তু যখন খোদ সিগারেটের প্যাকেটের গায়েই উল্লেখ থাকে ধূমপান খারাপ, ক্যানসারের কারণ; তখনো ও রকম প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে খাওয়াটা আমার কাছে মনে হয়, গায়ে বিষ লেখা শিশির ছিপি খুলে ভেতরের তরলটা গলায় ঢেলে দেওয়ার মতোই কঠিন ব্যাপার।
আশপাশের অনেককেই আমি ধূমপান করতে দেখি। সত্যি বলতে কি, খেলোয়াড়েরাও এর বাইরে নয়। আমি নিজে অবশ্য জীবনে কখনোই আগ্রহবোধ করিনি সিগারেট খাওয়ার। আমি জানি না সিগারেট খেলে কী হয় বা কেন এটা মানুষ খায়। অনেককেই দেখি, ধূমপান করেও দিব্যি ভালো আছে।
লোকে বলে, সিগারেট খেলে দম কমে যায়। কিন্তু অনেক ক্রিকেটারকেই দেখেছি সিগারেট খায়, কিন্তু দম আমার চেয়ে ভালো। তাদের যেন এতে কোনো সমস্যাই হয় না! তবে এই সমস্যা না হওয়াটা যে সাময়িক, সেটা আমরা সবাই জানি। ধূমপান শেষ পর্যন্ত ভালো কিছু বয়ে আনে না। এটি মানবশরীরের যে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করে, তা নিয়ে তো আর কারোরই সন্দেহ নেই।
একজন খেলোয়াড় হিসেবে বুঝি, সুস্থ শরীরের জন্য চাই সুশৃঙ্খল জীবন। আর সুশৃঙ্খল জীবনে সিগারেট বা কোনো নেশাজাতীয় অথবা মাদকজাতীয় জিনিসেরই স্থান নেই। আপনি ধূমপান করে নিজেকে তিলে তিলে ধ্বংস করে শুধু নিজেরই ক্ষতি করছেন না, আশপাশের মানুষেরও ক্ষতি করছেন।
আপনার আদরের সন্তানেরা তাদের জীবনের যতটা সময়জুড়ে আপনাকে পেত, সেটা হয়তো পাবে না ধূমপান আপনার আয়ুর অনেকটাই কেড়ে নিচ্ছে বলে।
আপনার সন্তানের ক্ষতি করছেন। আপনাকে দেখে যখন একদিন আপনার সন্তানও এই পথে যাবে, সেটা দেখতে কি আপনার ভালো লাগবে? আর এই যে ধূমপান করে নিজেকে শেষ করে দেওয়া, আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর তো সেটারও প্রভাব পড়বে।
আপনার আদরের সন্তানেরা তাদের জীবনের যতটা সময়জুড়ে আপনাকে পেত, সেটা হয়তো পাবে না ধূমপান আপনার আয়ুর অনেকটাই কেড়ে নিচ্ছে বলে।
যেটা জীবনে আমি খাইনি, সেটা নিয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম। আসলে ধূমপান ব্যাপারটাই এমন। এর ক্ষতিকর দিক জানতে এটি খেয়ে দেখতে হয় না। বিষ যে বিষ, সেটি কি কেউ চেখে দেখে!