মিরপুর টেস্টে স্পিনিং উইকেট বানিয়েও নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গেছে বাংলাদেশ। খুব স্বাভাকিবভাবেই এখন আলোচনা ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়া না–নেওয়া নিয়ে। আসলে ঘরের মাঠে টেস্টের উইকেট কেমন হওয়া উচিত?
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট সিরিজের আগে বাংলাদেশ ক্রিকেটে বইছিল বিশ্বকাপে ব্যর্থতার বিষাদ সুর। সিলেটে স্মরণীয় টেস্ট জয়ে সেই সুর কিছুটা বদলেছে। মিরপুর টেস্টে সিরিজ জয়ের স্বপ্নে বিভোর বাংলাদেশ দল যখন জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও হেরে গেল, তখন আলোচনাটা মোড় নিল ঘরের মাঠের সুবিধা নেওয়া না–নেওয়ার বিতর্কে। টেস্ট দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন মনে করেন, ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের স্পিন স্বর্গেই খেলা উচিত। টেস্ট ক্রিকেটকে তিনি শেখার বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জায়গা হিসেবে দেখেন না। সে জন্য দুটি প্রথম শ্রেণির টুর্নামেন্ট জাতীয় ক্রিকেট লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ আছে।
ভিন্ন মতও আছে। ক্রিকেট বিশ্লেষক ও বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমূল আবেদীন তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের উইকেটে খেলাকে ব্যাখ্যা করেছেন পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পেয়ে যাওয়া নিয়ে। মিরপুর টেস্টে হারকে তিনি প্রতিপক্ষের জন্য খোঁড়া গর্তে নিজেরাই পড়ে যাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন, যা তাঁর কাছে, ‘হতাশার, মানহানিকর আর অসম্মানের’।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কেমন হওয়া উচিত, তার একটাও ব্যাখ্যাও আছে নাজমূল আবেদীনের কথায়, ‘ঘরের মাঠে জয়ের কোনো নিশ্চয়তা আগামীতে আর থাকবে না এবং এটি যেকোনো দলের বিরুদ্ধেই। অন্য সবাই আমাদের চেয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এই সত্য আমরা যত দ্রুত অনুধাবন করব, ততই মঙ্গল। এটি মাথায় রেখেই এখন থেকে কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।’
বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেনেরও মিরপুর উইকেটের অতিরিক্ত স্পিন পছন্দ হয়নি। সিলেট টেস্টের উইকেটের সঙ্গে তুলনা টেনে তিনি বলেন, ‘সিলেটে বাউন্স ধারাবাহিক ছিল। মিরপুরে সেটা ছিল না। আমি মিরপুরের উইকেটকে কোনোভাবেই ভালো বলব না।’
দুটি টেস্টই বাংলাদেশ দল খেলেছে এক পেসার নিয়ে। তিনি টেস্ট দলের বোলিং আক্রমণে স্পিন ও পেসের মিশেল দেখতে চান, ‘আমরা গত কয়েক বছর যেহেতু পেসারদের পেছনে অনেক বিনিয়োগ করেছি, আমরা তাদের সুযোগ দিতে পারতাম। আমরা যদি পেস ও স্পিন মিশিয়ে আক্রমণটা সাজাতে পারতাম, তাহলে ভালো হতো। মিরপুরের উইকেটটা আরেকটু ভালো হতে পারত।’
এ ধরনের উইকেটে খেলতে হলে যে ধরনের প্রস্তুতি দরকার, সেটাও খেলোয়াড়দের ছিল কি না, সে প্রশ্নও তুলেছেন আশরাফ, ‘যদি এ ধরনের উইকেটে খেলবেই, তাহলে খেলোয়াড়দের এ ধরনের উইকেটে খেলার যথেষ্ট প্রস্তুতির সুযোগ দিতে হবে। জাতীয় লিগে বা বিসিএলে তো ওরা এ ধরনের উইকেটে খেলে না। তিন সংস্করণের ব্যস্ততায় এ ধরনের উইকেটে খেলার জন্য যে মনোযোগ, শ্রম দেওয়া দরকার সেটাও নিশ্চিত দেওয়ার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে আমাদের ভাবনাটা পরিষ্কার হওয়া জরুরি।’
আরেক সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ মিরপুরে ব্যাটিং স্বর্গ দেখতে চেয়েছিলেন। তাঁর যুক্তি, ‘সিলেটের উইকেটের কথাই আগে বলি। সেখানে কিন্তু বাউন্স ছিল, তবে দুই দলই সেখানে রান করতে পেরেছে। মিরপুরে ভালো ব্যাটিং উইকেটে খেলতে পারত। ছেলেরা দুটি ইনিংস পেত রান করার জন্য। সেখানে ড্র হলেও বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের সুযোগ ছিল। ব্যাটসম্যানদেরও তো বাঁচাতে হবে, ওদের বড় ইনিংস খেলার একটা মঞ্চ তৈরি হতো।’
বিশ্বকাপ থেকেই বাংলাদেশের খেলাগুলো পেশাদার বিশ্লেষক হিসেবে দেখছেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তিনি ঘরের মাঠে স্পিন স্বর্গে খেলার পেছনে দলের ভাবনার পক্ষেই বললেন, ‘সিরিজ জয়ের জন্যই নিশ্চয়ই টিম ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্ত। দল যেহেতু ১-০ তে এগিয়ে ছিল, খেলাগুলোও টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ। এই টেস্ট জিততে পারলে আমরা তো এগিয়ে যেতাম। আসলে একেকজনের একেকটা মত। অনেকে চিন্তা করছেন, ভালো উইকেট করে ড্র করলে হয়তো সিরিজটা আমাদের হতো। ম্যানেজমেন্ট হয়তো ভেবেছে জেতার জন্য খেলবে।’