বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাই রান রেটের দিক থেকে সবার পেছনে
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাই রান রেটের দিক থেকে সবার পেছনে

টি–টোয়েন্টির ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কাই কেন সবচেয়ে বাজে

এশিয়া কাপের শুরুটা নিয়ে সন্তুষ্ট হতেই পারে বাংলাদেশ। শুধু জয়ের জন্য নয়, রান রেটের কারণেও। বৃহস্পতিবার আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে হংকংয়ের ১৪৩ রান তাড়ায় বাংলাদেশ রান তুলেছে ওভারপ্রতি ৮.১৫ হারে।

তবে হিসাবটা যদি হয় এক দশকের, যাতে ফুটে ওঠে একটি দলের টি–টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের সাধারণ প্রবণতা—তাতে অস্বস্তিতেই পড়তে হবে। ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত টি–টোয়েন্টি রান রেটে শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে সবার পেছনে বাংলাদেশ দল। শুধু বাংলাদেশ নয়, একই দুরবস্থা শ্রীলঙ্কারও। প্রশ্ন হচ্ছে, রান রেটের তলানিতে এ দুই দলই কেন? একটা অভিযোগ দুই দেশেই শোনা যায়—পিচ টি–টোয়েন্টিসুলভ নয়। আসলেই কি বিষয়টি তা–ই?

পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৫ সালের প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত ১৫৭টি টি–টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ দল। এই ম্যাচগুলোতে ওভারপ্রতি রান উঠেছে ৭.৫৭ হারে। একই সময়ে শ্রীলঙ্কার খেলা ১৪২ ম্যাচে রান হয়েছে ওভারপ্রতি ৭.৬৬। র‍্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ১০ দলের মধ্যে রান রেটের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান দশ নম্বরে, শ্রীলঙ্কা নয়ে।

এটি যে কতটা কম, তা বোঝা যায় অন্য দলগুলোর দিকে তাকালে। আটে থাকা আফগানিস্তান (৭.৯৩) বাদে বাকি সাত দলই গত এক দশকে প্রতি ছয় বলে গড়ে ৮ রানের বেশি করেছে। ভারতের ওভারপ্রতি রান তো প্রায় নয়ের কাছাকাছি (৮.৯১)।

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ব্যাটিংয়ের হতশ্রী চেহারা শুধু রান রেটেই সীমাবদ্ধ নয়, দুই দলের ব্যাটিং গড়ও নিম্নমানের। একটি ম্যাচের পাওয়ারপ্লে, মিডল ওভার এবং ডেথ ওভার—প্রতিটি পর্যায়েই দুই দলের দুর্বলতা লক্ষণীয়। যদিও ২০২৪ সাল থেকে কিছুটা উন্নতি দেখা যাচ্ছে। এ সময়ে শ্রীলঙ্কা পাওয়ারপ্লের রান রেটে দশ দলের মধ্যে ষষ্ঠ, আর বাংলাদেশ ডেথ ওভারে দশ দলের মধ্যে পঞ্চম। তবে মাঝের ওভারগুলোয় দুর্বলতা এখনো আগের মতোই।

রান রেটে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার পিছিয়ে থাকার একটি বহুল আলোচিত ব্যাখ্যা হচ্ছে নিম্নমানের পিচে খেলা। ঢাকার শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়াম আর কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম অতিরিক্ত স্পিনবান্ধব, যা ব্যাটসম্যানদের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের জন্য প্রতিকূল বলে যুক্তি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক লিটন দাস তো একাধিকবারই বলেছেন, শেরেবাংলায় না খেললে তাঁর ব্যাটিং গড় ও স্ট্রাইক রেট এখনকার চেয়ে অনেক ভালো থাকত। শ্রীলঙ্কাতেও প্রেমাদাসার উইকেট নিয়ে সাবেক অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও বর্তমান প্রধান কোচ সনাৎ জয়াসুরিয়াকে অসন্তোষ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছিল।

পিচের কারণে রান কম ওঠে—এমন অভিযোগের পরিসংখ্যানগত সত্যতাও আছে কিছুটা। যেমন ২০২০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ওভারপ্রতি সবচেয়ে কম রান উঠেছে বাংলাদেশ (৩৯ ম্যাচে ৭.০৫) ও শ্রীলঙ্কার মাটিতে (২৮ ম্যাচে ৭.৭৬)। একই সময়ে ব্যাটিং গড়েও (উইকেটপ্রতি রান) এ দুই দেশই দশ দলের মধ্যে নবম ও দশম স্থানে—শ্রীলঙ্কায় উঠেছে ২২.৪৭ রান করে, বাংলাদেশে ২১.২৬ করে।

তবে পিচই সমস্যার একমাত্র কারণ কি না, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। ঘরোয়া ক্রিকেটের কাঠোমা, অবকাঠামো, কোচিংসহ আরও অনেক কিছুই এর পেছনে থাকতে পারে। এমনকি ‘পিচ তত্ত্বের’ বিপক্ষে জোরালো যুক্তিও আছে। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দল নিজ দেশের বাইরে খেলার পরও তাদের রান রেট খুব বেশি বাড়ে না।
২০২০ সাল থেকে শীর্ষ দশ দলের বিপক্ষে দেশের বাইরে খেলার সময় শ্রীলঙ্কার রান রেট প্রতি ওভারে মাত্র ০.২৮ বেড়েছে, বাংলাদেশের বেড়েছে ০.৭০। অথচ অন্য দলগুলো একই সময়ে বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার বাইরে গড়ে প্রতি ওভারে ১.৫৩ রান বেশি করেছে।

দেশের বাইরে শ্রীলঙ্কা ইনিংসপ্রতি গড়ে ৫.৬ রান বেশি করেছে, বাংলাদেশ করেছে ১৪ রান। অন্যভাবে বললে বাংলাদেশ দল দেশের মাটিতে প্রতিটি টি–টোয়েন্টি ম্যাচে ১০০ রান করে থাকলে বিদেশে সেটা ১১৪ হয়েছে। অথচ অন্য সব দল মিলে এই দুটি দেশের বাইরে খেললে গড়ে ৩০.৬ রান বেশি করেছে।

প্রশ্নটা তাহলে থাকছেই—দেশের পিচ যদি কারণ না হয় তাহলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা কেন টি–টোয়েন্টির রান রেটে পিছিয়ে আছে? এই প্রশ্ন নিয়েই আজ আবুধাবির শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপের ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে দুই দল। রান রেটে তলানিতে থাকা দুই দলের লড়াই কি তাদের দুর্বলতার কোনো উত্তর দেবে?