ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (বাঁয়ে) ও দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল (বাঁয়ে) ও দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ক্যালিস

গেইল না ক্যালিস, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সেরা কে

‘জ্যাক অব অল ট্রেডস’ বা ‘সকল কাজের কাজী’ই ছিলেন জ্যাক ক্যালিস। ব্যাট হাতে কার্যকর সব ইনিংস খেলতেন, বল হাতেও দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম ভরসা ছিলেন সাবেক এই খেলোয়াড়। ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার—ক্যালিসকে পরিচয় করিয়ে দিতে এই শব্দগুলো ব্যবহার করতে দুবার ভাবতে হয় না।

দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক তারকার অলরাউন্ডার হয়ে ওঠার প্রথম মঞ্চটা ছিল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ১৯৯৮ সাল, জগমোহন ডালমিয়ার ক্রিকেট বিশ্বায়নের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকায় বসে উইলস ইন্টারন্যাশনাল কাপ। তবে পোশাকি এই নামে নয়, টুর্নামেন্টটি সাধারণ্যে পরিচিতি পেয়েছিল নকআউট বিশ্বকাপ নামেই। পরে যেটি নাম বদলে হয়ে যায় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।

১৯৯৮ সালে ঢাকায় সেই টুর্নামেন্টেই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে সত্যিকারের অলরাউন্ডার হিসেবে মেলে ধরেন ক্যালিস। ব্যাট হাতে তিন ম্যাচে ১৬৪ রান করা ক্যালিস, বল হাতে নেন ৮ উইকেট। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ক্যালিস ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০ রানে নেন ৫ উইকেট। ২৪৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৭ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চ্যাম্পিয়ন করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকাই রাখেন ক্যালিস। তাঁকে ফাইনাল ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের স্বীকৃতি দিতে দুবার ভাবতে হয়নি নির্বাচকদের।

১৯৯৮ নকআউট বিশ্বকাপের ফাইনালে জ্যাক ক্যালিস

সেই ক্যালিস এরপর ২০০৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন আরও পাঁচটি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। সব মিলিয়ে আইসিসির এই টুর্নামেন্ট ১৭ ম্যাচে খেলে ৬৫৩ রান করেছেন ক্যালিস, নিয়েছেন ২০ উইকেট।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট আছে ছয়জনের, ব্যাটিংয়ে বেশি রান পাঁচজনের। ব্যাটিংয়ে সবার ওপরের নামটাই চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ইতিহাসে ক্যালিসকে সেরা খেলোয়াড় বলায় দ্বিধা তৈরি করে। নামটা যে ক্রিস গেইল। ক্যালিসের মতোই এই টুর্নামেন্টে ১৭টি ম্যাচ খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওপেনার করেছেন ৭৯১ রান। আর স্পিন বোলিংয়ে নিয়েছেন ১৭ উইকেট। ক্যালিস না গেইল, কে সেরা—এই প্রশ্ন তো উঠতেই পারে।

২০০২ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথম খেলা গেইলের ওয়েস্ট ইন্ডিজও ক্যালিসের দক্ষিণ আফ্রিকার মতো একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ২০০৪ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই টুর্নামেন্টে ১৩৯ রান করা গেইল উইকেট পান ৭টি। সাউদাম্পটনে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে গেইল কাটা পড়েছিলেন ৯৯ রানে। ব্যাট হাতে পরের তিন ম্যাচে ভালো কিছু করতে না পারলেও প্রতি ম্যাচেই অন্তত একটি উইকেট পেয়েছেন গেইল।

২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর ক্রিস গেইল

২০০৬ সালে ভারতে পরের টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন না হলেও গেইল আলো ছড়িয়েছিলেন। ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রানার্সআপ হলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ছিলেন গেইল। আট ম্যাচে ৪৭৪ রান করার পথে তিনটি সেঞ্চুরি করেছিলেন বিস্ফোরক এই ব্যাটসম্যান, নিয়েছিলেন ৮ উইকেট।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কমপক্ষে ৪০০ রান ও ১০ উইকেট নেওয়া খেলোয়াড় আছেন আরও তিনজন—সনাৎ জয়াসুরিয়া, শেন ওয়াটসন ও শচীন টেন্ডুলকার। তবে গেইল কিংবা ক্যালিসের তুলনায় পিছিয়ে তাঁরা।

চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ইতিহাসে সেরা খেলোয়াড় কে—এই প্রশ্নের উত্তরে ক্যালিস না গেইলের নাম বলবেন, সেই বিবেচনার ভার নাহয় আপনিই নিলেন।