
রশিদ খানের গুগলিতে বিভ্রান্ত বাংলাদেশ—শিরোনাম হতে পারত এটাই।
শেষ পর্যন্ত তা যে হলো না, সেটি পারভেজ হোসেন–তানজিদ হাসানের ওপেনিং জুটির সৌজন্যে তো বটেই, এরপরও ভয়ানক ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ দলকে উদ্ধার করা নুরুল হাসানেরও। শেষ দিকে নুরুলের ১৩ বলে অপরাজিত ২৩ রান শারজায় গতকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ৮ বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে।
পারভেজ–তানজিদের ওপেনিং জুটির সময় মনে হচ্ছিল আফগানদের ১৫১ রান তাড়া করে ম্যাচটা বাংলাদেশ বুঝি ১০ উইকেটেই জিততে যাচ্ছে। কিন্তু হুট করেই আসে বিপর্যয়। বিনা উইকেটে ১০৯ রান থেকে মাত্র ৯ রানের মধ্যে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলায় বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বলতে গেলে শূন্যের ঘরে নেমে আসে। শেষ পর্যন্ত জয় দিয়ে সিরিজ শুরু হলেও ব্যাটিং নিয়ে অতৃপ্তিটা তাই থেকেই যাচ্ছে।
সেটা শুধু ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারেননি বলেই নয়, বেশির ভাগ ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন প্রায় একইভাবে—ভুল ছিল রিভিউ নেওয়ার বিবেচনায়ও। এর আগে ১০৯ রানের জুটির পথে ফিফটি করেছেন দুই ওপেনারই। চার বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় ৩৭ বলে ৫৪ রান করে ফরিদ আহমেদের বলে পারভেজের এলবিডব্লুতে ভাঙে সে জুটি। এরপরই শুরু হয় ভয়ংকর ধস, যেটিতে আফগানদের বলতে গেলে একাই নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪ ওভারে ১৮ রানে ৪ উইকেট নেওয়া লেগ স্পিনার রশিদ খান।
পারভেজ ফেরার পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে চার বলের ব্যবধানে সাইফ হাসান ও তানজিদকে আউট করেন রশিদ। তাঁর গুগলি বুঝে উঠতে না পেরে শূন্য রানে সাইফ এলবিডব্লু আর তানজিদ ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। নিজের শেষ ওভারটা করতে এসে রশিদ এলবিডব্লু করেন জাকের আলী আর শামীম হোসেনকে। দুজনই রিভিউ নিলেও সফল হননি কেউই।
বাংলাদেশের আতঙ্ক আরও বাড়ে নূর আহমেদের পরের ওভারে তানজিম হাসানও এলবিডব্লু হয়ে গেলে। যদিও টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে বল তাঁর প্যাডে লাগার আগে ব্যাট ছুঁয়ে গেছে, কিন্তু ততক্ষণে যে সব রিভিউই শেষ বাংলাদেশের!
বিপর্যয় থেমেছে ১১৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট পড়ার পর। কৃতিত্বটা দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান নুরুল আর রিশাদ হোসেনের। শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৬ রান। কিন্তু নুরুল–রিশাদ মিলে সে আনুষ্ঠানিকতা সেরে ফেলেন চার বলেই। আজমতউল্লাহর প্রথম দুই বলেই নুরুল দুই ছক্কা মারেন লং অন আর থার্ড ম্যানের ওপর দিয়ে, দ্বিতীয়টি আবার স্কুপ শটে। তৃতীয় বলে ১ রান নিয়ে প্রান্ত বদলের পর পরের বলে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে রিশাদের চার হারতে হারতে জিতিয়ে দেয় বাংলাদেশকে।
তবে তানজিদ–পারভেজের এক শ পেরোনো ওপেনিং জুটিটা না হলে ম্যাচটা অত দূর পর্যন্ত যেত কি না কে জানে! অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার রাতে জয়ের সঙ্গে এটাও স্বস্তি যে এশিয়া কাপে প্রত্যাশা মেটাতে না পারা ওপেনিং জুটিটা ফিরে পেয়েছে তাদের হারানো ছন্দ। সেটিও টি-টোয়েন্টিতে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি গড়ে।
বাংলাদেশের জয়ে কৃতিত্ব দিতে হবে বোলারদেরও। ২৫ রানের উদ্বোধনী জুটির পর ১৫ রানের ব্যবধানে আফগানিস্তানের চার ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তাঁরা। সেই ধস সামলেও গুরবাজের ৪০, নবীর ৩৮ আর শরাফউদ্দিন আশরাফের ১৭ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের সামনে লড়াই করার মতো সংগ্রহ পায় আফগানরা। বাংলাদেশের হয়ে দুটি উইকেট করে পান তানজিম ও রিশাদ।
শারজায় সিরিজের দ্বিতীয় টি–টোয়েন্টিটি হবে আজই।