২০২৩-২৪ মৌসুমের চুক্তিতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেতন বাড়ানো, ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলতে না দেওয়া হলে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ নানা সুবিধা দিয়ে ক্রিকেটারদের সামনে কেন্দ্রীয় চুক্তির নতুন প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। এ ছাড়া স্থিতিশীলতা আনার জন্য কয়েক বছরের জন্যও প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে তাঁদের। ক্রিকেট পাকিস্তানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছেন পিসিবি প্রধান জাকা আশরাফ।
মূলত পিসিবির সঙ্গে ক্রিকেটারদের ২০২২-২৩ মৌসুমের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। সেই চুক্তি শেষ হলেও এখন পর্যন্ত ২০২৩-২৪ মৌসুমের চুক্তিতে সই করেননি বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ানরা। কারণ, বেতন বাড়লেও পরিমাণটায় খুশি ছিলেন না ক্রিকেটাররা। ক্রিকেটারদের চাওয়া ছিল পুরো কেন্দ্রীয় চুক্তিই ঢেলে সাজানো হোক। এর মধ্যে বেতন বৃদ্ধি তো আছেই, পাশাপাশি বিমা সুবিধা, ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে অংশগ্রহণ নীতিমালা এবং লভ্যাংশ বণ্টনের মতো বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি চেয়েছিলেন তারা।
নতুন চুক্তিতে তিন সংস্করণে খেলা ক্রিকেটার, যেমন—বাবর, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদিরা মাসে ৪ কোটি ৫০ লাখ পাকিস্তানি রুপির প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে। যা আগের চুক্তির চেয়ে চার গুণ বেশি। আগের চুক্তিতে লাল বলে খেলা ক্রিকেটাররা মাসে পেতেন ১ কোটি ১০ লাখ পাকিস্তানি রুপি। এ ছাড়া ক্রিকেটারদের অন্য খাতেও আয় বাড়ানোর কথা ভাবছে পিসিবি।
রাজনৈতিক কারণে পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা আইপিএলে খেলতে পারেন না। যে কারণে আর্থিকভাবে অনেকটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁরা। অন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে সুযোগ মিললেও জাতীয় দলের খেলা থাকায় অনেক সময়ই অংশ নিতে পারেন না ক্রিকেটাররা। যা নিয়ে গত কয়েক বছরে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ নিয়েও বিভিন্নভাবে অস্বস্তিবোধ করেছেন কেউ কেউ।
বর্তমানে একজন ক্রিকেটারকে অনাপত্তিপত্র পেতে হলে প্রথমে প্রধান কোচের সম্মতি পেতে হয়, এরপর বোর্ডের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বিষয় পরিচালকের অনুমোদন দরকার হয়। ক্রিকেটাররা এ বিষয়ে সহজ নীতিমালার দাবি জানিয়েছেন। আর যদি কোনো কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে খেলতে না দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ নীতি চালুর কথা বলেছিলেন তাঁরা। সেই দাবি পূরণ হতে পারে ক্রিকেটারদের। শতভাগ পূরণ না হলেও কিছুটা যেন আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া যায়, সেই বিষয়টি ভাবছে পিসিবি।
এ ছাড়া কোন ক্যাটাগরির ক্রিকেটাররা কটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলবে সেটাও নির্দিষ্ট করে দিতে চায় পিসিবি। ক্যাটাগরিতে ‘এ’তে থাকা ক্রিকেটাররা খেলতে পারবে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। ‘বি’ ক্যাটাগরির ক্রিকেটাররা পারবে দুটি লিগে আর ‘সি’ ক্যাটাগরিতে থাকা ক্রিকেটাররা খেলবে ৩ টি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে।
যদিও লভ্যাংশ বণ্টনের বিষয়টি মানছে না পিসিবি। টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে এই সংস্করণের ম্যাচ ফি বাড়ানোর কথা ভাবছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
চুক্তির পুরো বিষয়টি হচ্ছে সাবেক তিন অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক, ইনজামাম-উল-হক ও মোহাম্মদ হাফিজকে নিয়ে গড়া ক্রিকেট টেকনিক্যাল কমিটির সহায়তায়। পাকিস্তানের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক মিসবাহর নেতৃত্বে এই কমিটি ক্রিকেটারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। যে কারণে চুক্তি হওয়া নিয়ে আশাবাদী বোর্ড।
পিসিবি এই চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ অভিহিত করেছে। তবে এর নেপথ্যে বেশ কয়েকটি কারণও আছে। সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানি রুপির মান কমেছে। মুদ্রাস্ফীতিও বেড়েছে ভয়ংকরভাবে। ইতিবাচক দিকও আছে। আইসিসি থেকে পাওয়া পিসিবির লভ্যাংশ গত বছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।