
বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে আজ। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দুদলের এটি একাদশ সিরিজ। বিশ্বকাপ ও অন্যান্য টুর্নামেন্ট মিলিয়ে দুই এই ফরম্যাটে মুখোমুখি হয়েছে ৫৭ বার। এই ৫৭ ম্যাচে বলার মতো অনেক কিছুই আছে।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কার একাদশ সিরিজ এটি। ২০২১ ও ২০২৪ সালে নবম ও দশম সিরিজ দুইটি জিতেছে বাংলাদেশ। দুটি সিরিজই হয়েছে বাংলাদেশে। এর আগের আট সিরিজের ছয়টিই জিতেছে শ্রীলঙ্কা, অন্য দুটি হয়েছে ড্র। ড্র দুটি সিরিজ আবার হয়েছে শ্রীলঙ্কায় (২০১৩ ও ২০১৭)।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা। ১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে প্রথম দেখা হয় দুই দলের। টানা ১৫ ম্যাচ হারার পর ২০০৬ সালে বগুড়ায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জেতে বাংলাদেশ। এরপর আরও ১১ ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা সিরিজে সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস শ্রীলঙ্কার। ২০০৮ এশিয়া কাপে লাহোরে সনাৎ জয়াসুরিয়া ও কুমার সাঙ্গাকারার উদ্বোধনী জুটি ১৪.৫ ওভারেই তুলে ফেলে ১১৬ রান। ৪৭ বলে ৭২ রান করেন জয়াসুরিয়া। দলকে ২১১ রানে রেখে আউট হওয়া সাঙ্গাকারা করেন ৯১ বলে ১০১ রান। রান তাড়ায় ৭ উইকেটে ২২৬ রান তুলে ১৩১ রানে হারে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের দলীয় সর্বোচ্চ ৩২৪, ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরের প্রথম ওয়ানডেতে। তামিম ইকবাল করেছিলেন ১২৭ রান। বাংলাদেশ ম্যাচটি জেতে ৯০ রানে।
দুদলের ওয়ানডে লড়াইয়ে ১ হাজার রান তিনজনের। ৩৯ ম্যাচে ১২০৭ রান করে সবার ওপরে বাংলাদেশের মুশফিকুর রহিম। ৩১ ম্যাচে ১২০৬ রান করে শ্রীলঙ্কার কুমার সাঙ্গাকারা দুইয়ে। এ ছাড়া হাজার রান আছে সনাৎ জয়াসুরিয়ার (১০৩০)।
ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসটা শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশানের। ২০১৫ বিশ্বকাপে মেলবোর্নে ১৪৬ বলে ১৬১ রান করে অপরাজিত ছিলেন দিলশান। ওই ম্যাচে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকারাও। ১ উইকেটে ৩৩২ রান তোলা লঙ্কানরা বাংলাদেশেকে ২৪০ রানে অলআউট করে ম্যাচটি জেতে ৯২ রানে।
বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ মুশফিকুর রহিমের। ২০১৮ সালে দুবাইয়ে এশিয়া কাপে ১৪৪ রান করেছিলেন মুশফিক। মুশফিক যখন ব্যাটিংয়ে নামেন ১ রানে ২ উইকেট নেই বাংলাদেশের। স্কোরে ২ রান যোগ হওয়ার পর আহত হয়ে মাঠ ছাড়েন তামিম ইকবালও। সেখান থেকে মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে ১৩১ রানের জুটি গড়া মুশফিক ফেরেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলকে ২৬১ রানে রেখে। শ্রীলঙ্কাকে ১২৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ ম্যাচটি জেতে ১৩৭ রানে জেতে।
দুদলের ওয়ানডে লড়াইয়ে সর্বোচ্চ পাঁচটি সেঞ্চুরি কুমার সাঙ্গাকারার। চারটি করে সেঞ্চুরি নিয়ে দুইয়ে তিলকরত্নে দিলশান ও সনাৎ জয়াসুরিয়ার। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ দুটি করে সেঞ্চুরি তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের।
১৭ ম্যাচে ৩১ উইকেট নিয়ে দুদলের ওয়ানডে লড়াইয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট মুত্তিয়া মুরালিধরনের। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট মাশরাফি বিন মুর্তজার—২২ ম্যাচে ২৬টি।
২০০৩ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচের প্রথম তিন বলেই উইকেট নিয়ে অনন্য এক হ্যাটট্রিক করেন চামিন্ডা ভাস। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে সানোয়ার হোসেনকে আউট করে চতুর্থ উইকেটটিও পেয়ে যান লঙ্কান বাঁহাতি পেসার। পরে আরও ২ উইকেট নেওয়া ভাসের বোলিং বিশ্লেষনটা ছিল এমন, ৯.১–২–২৫–৬। ১২৪ রানে অলআউট বাংলাদেশ। কোনো উইকেট না হারিয়েই ২১.১ ওভারে রানটা পেরিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে লড়াইয়ে সবচেয়ে পরিচিত মুখ মুশফিকুর রহিম। ২০০৬ চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর থেকে সর্বশেষ সিরিজ পর্যন্ত বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কার ৩৯টি ওয়ানডেতেই ছিলেন মুশফিক। মুশফিক ওয়ানডে ছাড়ায় সংখ্যাটা আর বাড়ছে না। ৩৪ ম্যাচ খেলে দুইয়ে মাহমুদউল্লাহ ও ৩১ ম্যাচ নিয়ে তিনে কুমার সাঙ্গাকারা।
বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ওয়ানডে লড়াইয়ে হ্যাটট্রিক আছে তিনটি। ২০০৩ বিশ্বকাপে চামিন্ডা ভাসের সেই অনন্য হ্যাটট্রিকের পর ২০১৭ সালে ডাম্বুলায় বাংলাদেশের তাসকিন আহমেদ ও ২০১৮ সালে মিরপুরে শ্রীলঙ্কার শেহান মাদুশঙ্কা পেয়েছেন হ্যাটট্রিক।
২০২৩ বিশ্বকাপে দিল্লিতে বাংলাদেশ–শ্রীলঙ্কা ম্যাচের আগে কাজীর গরুর মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘টাইমড আউট’ শুধু ক্রিকেটের কেতাবেই ছিল। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের আবেদনে সাড়া দিয়ে ব্যাটিংয়ে নামতে দেরি করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে আউট ঘোষণা করেন আম্পায়ার। ক্ষুদ্ধ ম্যাথুস রাগে গজগজ করতে করতেই মাঠ ছেড়েছিলেন।