
অবিশ্বাস্য এক রাত! টি–টোয়েন্টিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা এর আগে কখনোই এমন বেধড়ক পিটুনির সম্মুখীন হননি। ২০ ওভারে ৩০৪ রান তো আর প্রতিদিন হয় না! গতকাল রাতে ম্যানচেস্টারে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ড এমন অবিশ্বাস্য ব্যাটিং–ই করেছে। ফিল সল্ট, জস বাটলারদের ঝড় তোলার রাতে ওলট–পালট হয়েছে রেকর্ড বই।
ব্যাটিংয়ে নেমে ইংল্যান্ড তুলেছে ২ উইকেটে ৩০৪ রান। টি-টোয়েন্টিতে (পুরুষদের) এটিই তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি সব মিলিয়ে তৃতীয় আর স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এর ওপরে আছে শুধু জিম্বাবুয়ের ৩৪৪ রান ৪ উইকেটে (গাম্বিয়ার বিপক্ষে, ২০২৪) আর নেপালের ৩১৪ রান ৩ উইকেটে (মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে, ২০২৩)। মানে টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে ম্যাচে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় রান।
ইংল্যান্ডের মাটিতে স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে এটি সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আগের রেকর্ডটি ছিল সমারসেটের। ২০২২ সালে ডার্বিশায়ারের বিপক্ষে ৫ উইকেটে ২৬৫ রান করেছিল সমারসেট।
ফিল সল্টের অপরাজিত ১৪১ রান ইংল্যান্ডের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এর আগে ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সল্টই করেছিলেন ১১৯। ইনিংসটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সপ্তম সর্বোচ্চ ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ।
ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা বাউন্ডারি থেকে তুলেছেন ২২৮ রান—আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যা তৃতীয় সর্বোচ্চ। গাম্বিয়ার বিপক্ষে নিজেদের রেকর্ড ইনিংসে বাউন্ডারি থেকে জিম্বাবুয়ে করেছিল ২৮২, আর গত বছর হায়দরাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারত করেছিল ২৩২ রান।
ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা মেরেছেন ৩০ চার—আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যা কোনো দলের যৌথ সর্বোচ্চ। সব মিলিয়ে ৪৮টি বাউন্ডারি (৩০ চার ও ১৮ ছক্কা), যা সংখ্যায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর চেয়ে বেশি শুধু জিম্বাবুয়ের ৫৭ (৩০ চার ও ২৭ ছক্কা)।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪৬ রানে এই জয় ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের জয়। এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এটাই সবচেয়ে বড় ব্যবধানের হার। টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে রানের ব্যবধানে এটি তৃতীয় বড় জয়।
ম্যানচেস্টারে দুই দলের মোট রান হয় ৪৬২, যা ইংল্যান্ডের মাটিতে কোনো টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ। আর সব মিলিয়ে পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে অষ্টম সর্বোচ্চ।
৩৯ বলে সল্টের সেঞ্চুরি ইংল্যান্ডের ইতিহাসে দ্রুততম। এর আগে দ্রুততম সেঞ্চুরিটি ছিল লিয়াম লিভিংস্টোনের। তিনি ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪২ বলে সেঞ্চুরি করেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার তিন বোলারের প্রত্যেকে কাল খরচ করেছেন ৬০ রানের বেশি। কাগিসো রাবাদা ৭০, মার্কো ইয়ানসেন ৬০ আর লিজাদ উইলিয়ামস ৬২ রান দেন। পুরুষদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে এর আগে কোনো ম্যাচে একসঙ্গে তিন বোলারের ৬০–এর বেশি খরচের নজির নেই।
৪৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে সল্টের এ নিয়ে সেঞ্চুরি হলো চারটি। তাঁর চেয়ে বেশি সেঞ্চুরি আছে শুধু রোহিত শর্মা ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের, পাঁচটি করে।
ইংল্যান্ড কাল ২৫০ রান তুলেছে ১৬.২ ওভারে। পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে যা ইনিংসে যৌথভাবে দ্রুততম। গত বছর গাম্বিয়ার বিপক্ষেও জিম্বাবুয়ে ২৫০ রানে একই সময়ে পৌঁছেছিল।
কাল ১২.১ ওভারে ২০০ রানে পৌঁছায় ইংল্যান্ড, যা ইতিহাসে দ্বিতীয় দ্রুততম। এর চেয়ে দ্রুত ২০০ রান তুলেছিল শুধু তুরস্ক—১১.৫ ওভারে, বুলগেরিয়ার বিপক্ষে এ বছর। সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম ২০০ রান তুলেছিল বরোদা, সিকিমের বিপক্ষে। তারা গত বছর ১০.৫ ওভারেই ২০০ ছুঁয়েছিল।
সল্ট ও বাটলার কাল দুজনই ২০ বল বা তার কমে ফিফটি করেন। পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ২০২১ সালে রোমানিয়ার তারঞ্জিত সিংহ ও রমেশ সাতিসান করেছিলেন এমনটা, সেটা সার্বিয়ার বিপক্ষে।
রাবাদার ৪ ওভারে ৭০ রান দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে কোনো বোলারের টি-টোয়েন্টিতে সবচেয়ে খরুচে বোলিং ফিগার। এর আগে ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কাইল অ্যাবোট দিয়েছিলেন ৬৮। রাবাদার ৭০ রান পুরুষদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেও যৌথ পঞ্চম সর্বোচ্চ খরচে বোলিং ফিগার। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথম বোলার হিসেবে তিনি টানা তিন ওভারে ২০–এর বেশি রান দেওয়ার রেকর্ডও গড়েছেন।
লিজাদ উইলিয়ামস মাত্র ২.১ ওভারেই খরচ করেন ৫০ রান। পুরুষদের টি-টোয়েন্টিতে মাত্র দুই বোলার তাঁর চেয়ে দ্রুত ৫০ রান খরচ করেছেন। এ বছর রোমানিয়ার বাসু সাইনি ১.৪ ওভারে আর ২০২৩ সালে মঙ্গোলিয়ার মুঙ্গুন আলতানখুয়াগ ২ ওভারে খরচ করেছিলেন ৫০ রান।