রশিদ লতিফ
রশিদ লতিফ

‘তাঁরা যে ক্ষতি করে গেছেন, সেটা এখনো পোষানো যায়নি’— ’৯০ দশকের পাকিস্তানি তারকাদের নিয়ে রশিদ লতিফ

খেলোয়াড়ি জীবন থেকেই তিনি ম্যাচ ফিক্সিং নিয়ে সোচ্চার। ’৯০ দশকে যখন ফিক্সিং নিয়ে পাকিস্তান ক্রিকেটে তোলপাড়, তখন যে কজন ক্রিকেটার প্রতিবাদী আওয়াজ তুলেছিলেন, রশিদ লতিফ তাঁদের একজন। পরে লতিফ বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন, এর জন্য নাকি তাঁকে খেসারতও দিতে হয়েছে অনেক। বারবার দল থেকে বাদ পড়েছেন। ক্যারিয়ার যেভাবে এগোনোর কথা ছিল, সেভাবে এগোয়নি।
সেই একই দাবি আবারও করলেন পাকিস্তানের সাবেক এই উইকেটকিপার। ফিক্সিংয়ের কারণে শুধু তাঁর ক্যারিয়ারের নয়, পাকিস্তান ক্রিকেটেরও বিশাল ক্ষতি হয়েছে, এমন মন্তব্য করে লতিফ আরও বলেছেন, সেই ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি পাকিস্তান দল।

 লতিফ এই কথাগুলো বলেছেন পাকিস্তানের টেলিভিশন চ্যানেল জিও টিভিতে ‘হারনা মানা হ্যায়’ নামে এক ক্রিকেট শো-তে। মূলত চ্যাম্পিয়নস ট্রফি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল সেই অনুষ্ঠানে। যেখানে সঞ্চালকের সঙ্গে অতিথি হিসেবে লতিফ ছাড়াও ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক পেসার মোহাম্মদ আমির ও সাবেক ওপেনার আহমেদ শেহজাদ।

জিও টিভিতে ‘হারনা মানা হ্যায়’ ক্রিকেট শো-তে মোহাম্মদ আমির ও আহমেদ শেহজাদের মাঝে রশিদ লতিফ

আলোচনার একপর্যায়ে সঞ্চালক অতিথিদের জিজ্ঞেস করেন, পাকিস্তানের ইতিহাসে সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান কে—রশিদ লতিফ নাকি মঈন খান?
উত্তরে আহমেদ শেহজাদ সরাসরি বলে দেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই, পাকিস্তানের ইতিহাসে সেরা উইকেটকিপার রশিদ লতিফ।’
মোহাম্মদ আমির অবশ্য উত্তরটা দিয়েছেন একটু অন্যভাবে, ‘উইকেটকিপার হিসেবে উনিই (রশিদের দিকে তাকিয়ে) সেরা। তবে যদি ব্যাটসম্যান-কিপারের কথা বলি, আমি বলব, কামরান আকমল সেরা।’

মঈন খান ও রশিদ লতিফের মধ্যে দলে জায়গা নিয়ে ভালো লড়াই চলেছে ‘৯০-এর দশকে। মঈন মূলত পাকিস্তানের ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী দলের খেলেই তারকাখ্যাতি পেয়ে যান। যদিও এর বছর দুয়েক আগেই তাঁর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক।
লতিফের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ১৯৯২ বিশ্বকাপের পর। ১৯৯৬ বিশ্বকাপে খেলেছেন তিনি, খেলেছেন ২০০৩ বিশ্বকাপেও। আবার ১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলেন মঈন খান।

’৯০–এর দশকে, ওই সময়ে যা হয়েছিল, খুব খারাপ হয়েছিল। ফিক্সিংয়ের কারণে পাকিস্তান ক্রিকেটের বদনাম হয়ে গিয়েছিল। যদি লিগ্যাসির কথা বলি, ৯০–এর দশকের খেলোয়াড়দের চেয়ে বড় খেলোয়াড় পাকিস্তানে আসেনি। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটের যে ক্ষতি ওরা করে গেছে, সেটা এখনো পোষানো যায়নি
রশিদ লতিফ

সব মিলিয়ে রশিদের চেয়ে মঈন পাকিস্তানের হয়ে খেলেছেন বেশি, ক্যারিয়ারও কিছুটা দীর্ঘ। মঈন খেলেছেন ৬৯টি টেস্ট ও ২১৯টি ওয়ানডে। রশিদ খেলেছেন ৩৭টি টেস্ট ও ১৬৬টি ওয়ানডে।
এ দুজনের পরে পাকিস্তান ক্রিকেটে শুরু হয় কামরান আকমল–যুগ। পাকিস্তানের হয়ে যিনি জিতেছেন ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।

কে ভালো উইকেটকিপার, বাকি দুজনের কাছ থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার পর সঞ্চালক রশিদ লতিফকে জিজ্ঞেস করেন, এত ভালো উইকেটকিপার হওয়ার পরেও কেন পাকিস্তানের হয়ে তাঁর ক্যারিয়ার অন্যদের মতো এত দীর্ঘ নয়।


উত্তরে লতিফ টেনে আনেন ম্যাচ ফিক্সিংয়ে বিরুদ্ধে তাঁর সোচ্চার অবস্থানের কথা, ‘আসলে ’৯০–এর দশকে, ওই সময়ে যা হয়েছিল, খুব খারাপ হয়েছিল। ফিক্সিংয়ের কারণে পাকিস্তান ক্রিকেটের বদনাম হয়ে গিয়েছিল। যদি লিগ্যাসির কথা বলি, ৯০–এর দশকের খেলোয়াড়দের চেয়ে বড় খেলোয়াড় পাকিস্তানে আসেনি। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটের যে ক্ষতি ওরা করে গেছে, সেটা এখনো পোষানো যায়নি। এরপর যেসব ঘটনা (ফিক্সিং) ঘটেছে, সেগুলোও তাদের কারণেই হয়েছে। আপনি তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনেও যদি অবৈধ হস্তক্ষেপ করেন, তাহলে দেশের ভালো হবে কী করে। আমিও সেই কেলেঙ্কারির সময়েরই একজন।’
সঞ্চালক এ সময় বলেন, ‘কিন্তু আপনি আপনার জায়গা থেকে লড়াই করে গেছেন। আপনি নিশ্চয়ই এটা ভেবে শান্তিতে ঘুমাতে পারেন। নাকি?’
লতিফ হেসে বলেন, ‘আপনারা তো জানেনই সব।’