বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ জেমস প্যামেন্ট
বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ জেমস প্যামেন্ট

মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের কোচ যেভাবে বাংলাদেশকে বদলে দিতে চান

খেলোয়াড়ি জীবনে তেমন বর্ণিল নয়, তবে কোচ হিসেবে জীবনবৃত্তান্তটা ভালোই ভারী। জেমস প্যামেন্টের বর্তমান পরিচয় বাংলাদেশের দলের ফিল্ডিং কোচ। কয়েক দিন আগেও আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে ছিলেন একই ভূমিকায়। কিন্তু ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের নির্ভার জীবন ছেড়ে এখনকার দিনে কি কেউ জাতীয় দলের বছরব্যাপী দায়িত্ব নিতে আসে!

প্যামেন্ট এসেছেন, আর তাতেই বুঝে নেওয়া যায়—আরামের জীবনের চেয়ে কাজের জীবনটাই তাঁর বেশি পছন্দ। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও যেন সেটাই জানিয়ে দিলেন বাংলাদেশ দলের নতুন ফিল্ডিং কোচ, ‘খেলোয়াড়দের বোঝাতে সাহায্য করতে চাই যে তাঁরা কতটা ভালো, এটাই আমার প্যাশনের জায়গা।’

চেষ্টাটা বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের নিয়ে এরই মধ্যে শুরুও করে দিয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে কাজ করা প্যামেন্ট বাংলাদেশের হয়ে কাজ শুরু করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে, চুক্তিটা ২০২৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত। দলের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে এখন পর্যন্ত নাকি ইতিবাচক সাড়াই পেয়েছেন তিনি।

তা ফিল্ডিংয়ে নতুন কী শেখাচ্ছেন প্যামেন্ট? এবার তাঁর উত্তর, ‘আমি ম্যাচ পরিস্থিতি অনুযায়ী কয়েকটা ভাগে ড্রিলগুলো করাই। এমন কিছু জিনিস করছি, যেন ক্রিকেটাররা বুঝতে পারে এইমাত্র কী হলো, আর একটু পর কী হবে। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে তাঁদের টেকনিক্যাল সক্ষমতা আর ট্যাকটিক্যাল সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।’

বাংলাদেশ দলের অনুশীলনে জেমস প্যামেন্ট।

এর বাইরে ক্যাচিংয়েও দিচ্ছেন গুরুত্ব। ফিল্ডিংয়ের এই জায়গায় যে ক্রিকেটারদের হাত প্রায়ই পিচ্ছিল হয়ে যায়, সেটা জানা নতুন আসা এই কোচেরও, ‘আমি দেখেছি দলের ক্রিকেটাররা ক্যাচ ছেড়ে দিচ্ছে, আমরা কিছু ধরেছিও। আমার কাছে সমস্যাটা মানসিক, টেকনিক্যাল নয়। ক্রিকেটাররা কীভাবে দুইটা বলের মাঝের সময়টায় নির্ভার থাকতে পারে আর পরের বলে মনোযোগ দিতে পারে, এ নিয়ে কাজ করব।’

ফিল্ডিংয়ের বাইরে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের আরেকটি সমস্যাতেও চোখ রাখছেন প্যামেন্ট—রানিং বিটুইন দ্য উইকেট। সেটা রাখারই কথা অবশ্য। মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে তাঁর অনেক ভূমিকার একটি ছিল ‘রানিং বিটুইন দ্য উইকেট’ স্পেশালিস্ট হিসেবেও। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের এই সমস্যা নিয়ে প্যামেন্ট বলেছেন, ‘রানিং বিটুইন দ্য উইকেটের গুরুত্বটা ক্রিকেটারদের বোঝাতে হবে। সঙ্গী ব্যাটসম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ, চাপটা প্রতিপক্ষের ওপর দিয়ে দেওয়া আর ভালো দৌড়ানোর সক্ষমতা তো লাগবেই।’

এসব করার জন্য কী করতে হবে, তারও একটা সূত্র পাওয়া গেল তাঁর কথায়, ‘আপনাকে শারীরিকভাবে যতটা বেশি সম্ভব ভালো অ্যাথলেট হতে হবে, প্রতিপক্ষের ফিল্ডারদের কীভাবে বিভ্রান্ত করবেন আর স্ট্রাইকটা কীভাবে রোটেট করবেন, তা–ও জানতে হবে। জুটি গড়ার সচেতনতা আর স্ট্রাইক রোটেশনে উন্নতি আপনাকে নিয়মতি বাউন্ডারি হাঁকানোর ক্ষেত্রেও সাহায্য করবে।’

এসব কাজ ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের চেয়ে ভালোভাবে জাতীয় দলে করতে পারবেন বলেই বিশ্বাস পেমেন্টের। একটা দলে লম্বা সময় থাকলে সবার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ বেশি, আস্থা অর্জন করাও সহজ। ক্রিকেটারদের খেলাটাকে বোঝার পাশাপাশি পুরো দলের খেলায়ও নিজের একটা ছাপ রাখতে চান প্যামেন্ট। আর চান আগামী দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ দলটাকে পৃথিবীর সেরা সব অ্যাথলেট দিয়ে ভরিয়ে দিতে। হ্যাঁ, প্যামেন্টের চোখে ভালো ফিল্ডার মানেই সেরা অ্যাথলেট, ‘আমি চাই বাংলাদেশ এমন একটা দল হবে, যাদের কল্পনাশক্তি থাকবে প্রখর আর সৃজনশীল। পৃথিবীর সেরা সব অ্যাথলেটে ভর্তি থাকবে দল।’