পাকিস্তানকে ১৮ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। আজ শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে
পাকিস্তানকে ১৮ রানে হারিয়েছে আফগানিস্তান। আজ শারজা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে

ত্রিদেশীয় সিরিজ

পাকিস্তানকে হারিয়ে ‘মধুর প্রতিশোধ’ আফগানিস্তানের

শারজায় ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের কাছে হারলেও আজ তাদের পাল্টা জবাব দিয়েছে আফগানিস্তান।

শাহিন আফ্রিদি আউট হতেই পাকিস্তানের সমর্থকেরা তাড়াহুড়ো করে শারজা স্টেডিয়াম ছাড়তে লাগলেন। হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগানো রশিদ খানের বলটা হয়তো তাঁরা দেখতে চাননি। ধারাভাষ্যকার রমিজ রাজাও বলছিলেন, ‘এখান থেকে ম্যাচ জিততে হলে ডাবল মিরাকলের চেয়েও বেশি কিছু দরকার পাকিস্তানের।’

রশিদ খানের হ্যাটট্রিক বলটা কোনোরকমে ঠেকালেন হারিস রউফ। সেই ওভার পার করে দেওয়ার পর রউফ ব্যাট হাতে তাণ্ডব চালালেন। কিন্তু তা দলের কোনো কাজে এল না, শুধু পরাজয়ের ব্যবধানটাই কমাল। পাকিস্তানকে ১৮ রানে হারিয়ে ‘মধুর প্রতিশোধ’ নিল আফগানিস্তান। এ জয়ে ত্রিদেশীয় টি–টোয়েন্টি সিরিজের ফাইনালের পথে অনেকটাই এগিয়ে গেল আফগানরা।

হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন রশিদ খান (ডানে)

খেলার সঙ্গে প্রতিশোধ শব্দটি নাকি যায় না। কিন্তু অদূর অতীতে দুই দেশ ক্রিকেট মাঠে মুখোমুখি হলেই গ্যালারিতে সমর্থকদের মধ্যে যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে। তাই এই শব্দ ব্যবহার করতেই হচ্ছে। তার ওপর আফগান অধিনায়ক রশিদ সিরিজ শুরুর আগে ‘পাকিস্তানকে একটি ম্যাচেও জিততে দেব না’ বলে আগা সালমানের দলকে যেন তাতিয়ে দিয়েছিলেন।

তবে রশিদ প্রচ্ছন্ন হুমকির সঙ্গে মাঠের ফল মেলেনি। শারজায় গত শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচে আফগানিস্তানকে ৩৯ রানে হারিয়ে দেয় পাকিস্তান। আজ পাকিস্তানকে হারিয়ে যেন পাল্টা জবাবই দিল আফগানিস্তান।

সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচে আগে ব্যাট করা দল জিতেছে। সে কারণেই হয়তো রশিদ খান আজ টসে জিতে পাকিস্তানকে বোলিংয়ে পাঠাতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি। শারজার আজকের পিচটাও অনেকটাই ব্যতিক্রম ছিল। বল সহজে ব্যাটে আসছিল না। সেদিকউল্লাহ আতাল আর ইব্রাহিম জাদরান দুর্বোধ্য পিচও ভালোভাবে পড়ে ফেলেন।

দ্বিতীয় উইকেট গড়েন ১১৩ রানের জুটি গড়েন সেদিকউল্লাহ আতাল (বাঁয়ে) ও ইব্রাহিম জাদরান

রহমানউল্লাহ গুরবাজ শুরুতে আউট হলেও আতাল ও ইব্রাহিম দ্বিতীয় উইকেট গড়েন ১১৩ রানের জুটি, যা টি–টোয়েন্টি পাকিস্তানের বিপক্ষে যেকোনো উইকেট জুটিতে আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ। দুটি পেয়ে যান ফিফটি।

এই জুটি ভাঙার পর আফগানরা দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারায়। তবে ততক্ষণে তারা পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুড়ে দেওয়ার মতো সংগ্রহ দাঁড় করায়। পাকিস্তানের পেস বোলিং অলরাউন্ডার ফাহিম আশরাফ ২৭ রানে নেন ৪ উইকেট, যা টি–টোয়েন্টিতে তাঁর ক্যারিয়ারসেরা।

লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ওভারেই সাইম আইয়ুবের উইকেট হারায় পাকিস্তান। সাহিবজাদা ফারহান ভালো শুরু করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। দুই ওপেনারকেই আউট করেন আফগান পেসার ফজলহক ফারুকি।

এরপর অভিজ্ঞ ফখর জামান অধিনায়ক আগা সালমানকে নিয়ে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু এই জুটি ভাঙার পর টপাটপ উইকেট হারাতে থাকে পাকিস্তান। ৬২/২ থেকে ১১১/৯–এর দলে পরিণত হয় তারা।

দশ নম্বরে নামা হারিস রউফ করেছেন দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান। তাঁর ১৬ বলে ৪ ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংসটা ক্যারিয়ারসেরাও। সুফিয়ান মুকিমকে নিয়ে ৪০ রান যোগ করেছেন রউফ, যা টি–টোয়েন্টিতে শেষ উইকেট জুটিতে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ।

ম্যাচ শেষে দুই দলের করমর্দন

নুর আহমেদ, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও ফজলহক ফারুকি—আফগানিস্তানের এই চার বোলার নিয়েছেন ২টি করে উইকেট। এই ম্যাচ দিয়েই রহস্যময় স্পিনার আল্লাহ গজরফরের টি–টোয়েন্টিতে অভিষেক হয়েছে। তবে ৩ ওভারে ২৪ রান দিয়ে তিনি ছিলেন উইকেটশূন্য।

সিরিজের চার ম্যাচ শেষে দুটি করে জয়ে ৪ পয়েন্ট পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের। স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত এখন পর্যন্ত নিজেদের দুটি ম্যাচেই হেরেছে।

আমিরাতের পরের দুই ম্যাচ বৃহস্পতিবার পাকিস্তান ও শুক্রবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে। এই দুই ম্যাচের একটিতে স্বাগতিকেরা হারলেই রোববারের ফাইনালে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান–আফগানিস্তান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৬৯/৫ (ইব্রাহিম ৬৫, আতাল ৬৪, রশিদ ৮*, জানাত ৮*, গুরবাজ ৮; আশরাফ ৪/২৭, আইয়ুব ১/১৮, নেওয়াজ ০/২৪, আফ্রিদি ০/২৭)।

পাকিস্তান: ২০ ওভারে ১৫১/৯ (রউফ ৩৪*, ফখর ২৫, সালমান ২০, ফারহান ১৮, আশরাফ ১৪; নুর ২/২০, নবী ২/২০, ফারুকি ২/২১, রশিদ ২/৩০)।

ফল: আফগানিস্তান ১৮ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ইব্রাহিম জাদরান।