Thank you for trying Sticky AMP!!

বোল্ড হয়ে ফিরছেন এক ব্যাটসম্যান

কোনো রান না দিয়ে ১০ উইকেট, সব ব্যাটসম্যান বোল্ড

একজন বোলার বল হাতে নিলে তাঁর মনের নিগূঢ়তম ইচ্ছাটা কী থাকে? অবশ্যই ম্যাচের গতিপ্রকৃতি বুঝে বল করতে হয়। সংস্করণভেদে কখনো রান আটকাতে কখনোবা উইকেট নেওয়ার বোলিং করতে হয়। কিন্তু এসব সংস্করণ-টংস্করণ বাদ দিন। পাড়াগাঁওয়ের ক্রিকেট থেকে আন্তর্জাতিক—বোলিংয়ে এসে বোলাররা আসলে কী করতে চান বলুন তো?

বল করে মাটি থেকে স্টাম্প উপড়ে ফেলা—এ ভাবনাতেই ভোট পড়বে বেশি। সত্যি বলতে, বোলার পেসার কিংবা স্পিনার যা-ই হোন না কেন, বোল্ড আউট করার মজাই অন্য রকম। তাই প্রতিপক্ষের ১০টি উইকেট বোল্ড আউট করে নেওয়ার স্বপ্ন যে কারও থাকে না, সেটি বলা যাবে না। এমন স্বপ্ন তো দেখাই হয়, আর মানুষকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে নিয়ে যায় স্বপ্নই। কথায় আছে, স্বপ্নই মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে।

জেনিংস টিউনও নিশ্চয়ই এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি ভাগ্যবান বলেই স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে। আর সে কারণে স্বপ্নপূরণের ১০১ বছর পরও বেঁচে আছেন ইতিহাসের পাতায়। কী অবিশ্বাস্য বোলিং ফিগার! প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নিয়েছেন, তার সবই বোল্ড! এটা যদি অবিশ্বাস্য লাগে, তবে এ তথ্যটি আরও অবিশ্বাস্য—জেনিংস সেই ১০ উইকেট নেওয়ার পথে একটি রানও দেননি!

প্রশ্ন হতে পারে, এত দিন পর সেই আশিকালের বাসি গল্প বলার কী কারণ? আগেভাগেই বলে রাখি, জেনিংসের সেই অবিশ্বাস্য কীর্তির আজ ১০১ বছর পূর্তি। ১৯২২ সালের ৬ মে ইংল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট লিগে ক্লিফের হয়ে ইস্ট রিংটনের বিপক্ষে ০ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন জেনিংস টিউন। সবই ছিল বোল্ড। আবারও প্রশ্ন করতে পারেন, সে তো বুঝলাম, তা এমন অবিশ্বাস্য কীর্তি কি স্বীকৃত ক্রিকেটে আছে?

১৯২২ সালের আজকের এই দিনে ইংল্যান্ডের ডিস্ট্রিক্ট লিগে ক্লিফের হয়ে ইস্ট রিংটনের বিপক্ষে ০ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন জেনিংস টিউন। সবই ছিল বোল্ড।

স্বীকৃত ক্রিকেট কী, এ বিষয়টি আগে খোলাসা করা প্রয়োজন। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এ তিন সংস্করণে তো খেলা হয়। এর বাইরে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে আছে লিস্ট ‘এ’, টি-টোয়েন্টি ও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। এগুলোই স্বীকৃত ক্রিকেট।

এর বাইরেও বিভিন্ন দেশে নানা রকম লিগ হয়। যেমন ধরুন, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ লিস্ট ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত হলেও অন্য জেলার প্রিমিয়ার লিগ কিন্তু তা নয়। কিন্তু সেসব লিগেরও তথ্য সংরক্ষণ করে রাখা হয়, সেটা এ দেশে না হতে পারে, কিন্তু ইংল্যান্ডের মতো দেশে ডিস্ট্রিক্ট লিগ কিংবা জুনিয়র লিগের তথ্যও সংরক্ষণে রাখা হয়। আর তাই জেনিংস টিউনের সেই কীর্তিকে বিবেচনা করা হয়, ক্রিকেটে যেসব টুর্নামেন্টের নথিপত্র সংরক্ষণে আছে, সেগুলোর (মাইনর লিগসহ) মধ্যে তর্কযোগ্যভাবে সেরা বোলিং ফিগার।

Also Read: এক শ রানের নিচে অলআউট করার যুগান্তকারী উপায়

তবে এই দাবির বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন যে কেউ। কারণ জেনিংস টিউনই এক ইনিংসে কোনো রান না দিয়ে ১০ জন ব্যাটসম্যানকে আউট করা একমাত্র বোলার নয়। সে কথায় পরে আসছি। আগে অন্য সব সংস্করণগুলোর সেরা বোলিং ফিগার জানিয়ে রাখা যাক।

ক্লিফ ক্রিকেট গ্রাউন্ড, এ মাঠেই ১০১ বছর আগে ০ রানে ১০ উইকেট নিয়েছিলেন জেনিংস টিউন

টেস্টে ইনিংসে সেরা বোলিংয়ের উদাহরণ সবারই জানা। টেস্টে এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে তিনজনের—জিম লেকার (৫৩/১০), অনিল কুম্বলে (৭৪/১০) ও এজাজ প্যাটেল (১১৯/১০)। ওয়ানডেতে ১৯ রানে সর্বোচ্চ ৮ উইকেট নিয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক পেসার চামিন্ডা ভাস। ওয়ানডে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের আওতাভুক্ত হলেও এই সংস্করণে ঘরোয়াতে ভাসের চেয়েও ভালো বল করার নজির আছে।

২০১৮-১৯ মৌসুমে চেন্নাইয়ে ঝাড়খন্ড-রাজস্থান ম্যাচে ১০ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন শাহবাজ নাদিম। আর স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে ইনিংসে সেরা বোলিং নেদারল্যান্ডসের স্পিনার কলিন অ্যাকারমানের। ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে ২০১৯ সালে ১৮ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন।

প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ভুললে চলবে না (টেস্টও এর আওতাভুক্ত)। টেস্টের বাইরে প্রথম শ্রেণির যেসব স্বীকৃত টুর্নামেন্টে সেসব মিলিয়ে ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়া বোলার ৮৫ জন। এটা প্রতি দলে ১১ জন খেলোয়াড় নিয়ে ম্যাচ খেলার হিসাব। প্রতি দলে অন্তত ১২ জন করে খেলোয়াড় নিয়ে দল গঠন করে যেসব প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা হয়েছে, সেসব ম্যাচেও ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার নজির আছে। এই তালিকায় আছেন ৫ বোলার, তবে সবাই রান দিয়েছেন।

টেস্টে এক ইনিংস ১০ উইকেট নেওয়ার সর্বশেষ কীর্তি এজাজ প্যাটেলের

এবার স্বীকৃত ক্রিকেটের বাইরের টুর্নামেন্টগুলোর প্রসঙ্গে আসা যাক। ক্রিকইনফো জানাচ্ছে, এসব টুর্নামেন্টে ইনিংসে কোনো রান না দিয়ে ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে ২৫ জনের। এই ২৫ জনের মধ্যে দুজন একদমই ব্যতিক্রম। কারণ তাঁরা ১০ উইকেট ও কোনো রান না দেওয়ার পথে সবাইকে বোল্ড করেছেন। এই ২৫ জনের মধ্যে আর কেউ সবাইকে বোল্ড আউট করতে পারেননি। ঠিকই ধরেছেন জেনিংস টিউন এবং...। নামটা বলে দেওয়া যাক—অ্যালেক্স কেলি। ক্রিকইনফোয় জেনিংস টিউন কিংবা অ্যালেক্স কেলির প্রোফাইল নেই। তবে ক্রিকেটবিষয়ক এই সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে, জেনিংস টিউনের সেই কীর্তির ৭৭ বছর পর ১৯৯৪ সালে তা ফিরিয়ে আনেন কেলি।

১৯৯৪ সালে ডারহাম কাউন্টি জুনিয়র লিগে বিশপ অকল্যান্ডের হয়ে নিউটন আইক্লিফের বিপক্ষে ০ রানে ১০ উইকেট নেন কেলি এবং সব ছিল বোল্ড আউট। ক্রিকইনফোয় সে ম্যাচের স্কোরকার্ড নেই। খুঁজে পাওয়া গেল ‘দ্য অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রিকেট স্ট্যাটিসটিসিয়ান অ্যান্ড হিস্টোরিয়ানস’-এর ওয়েবসাইটে। স্কোরকার্ডে দেখা গেল ৪.৩ ওভার বল করে কোনো রান ছাড়াই সব উইকেট নিয়েছিলেন কেলি।

নিউটন বিনা উইকেটে ২৭ রান তোলার পর বোলিংয়ে এসে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিলেন। মজাটা হলো, ৪৭ রানে অলআউট হওয়া নিউটন আইক্লিফের স্কোরকার্ডে মোট ১১ জন ব্যাটসম্যানের নামের পাশেই লেখা বোল্ড এবং উইকেটগুলো সব ১৭ বছর বয়সী পেসার কেলির। তাহলে কেলির উইকেট কয়টি! ১০ না ১১? হয় স্কোরকার্ডে ভুল লেখা হয়েছে নয়তো কেলি সত্যিই হয়তো ১১ জনকে আউট করেছিলেন! তবে এর কোনো বিবরণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জেনিংস টিউনকে নিয়ে আরেকটু জানানো যায়। ৫ ওভার বল করে ১০ উইকেটের সব বোল্ড করেছিলেন জেনিংস। ইংল্যান্ডের প্রয়াত ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ বিল ফ্রিন্ডাল এ নিয়ে বলে গেছেন, ‘মাইনর ক্রিকেটে একবারই ১০ উইকেট নেওয়ার ঘটনা জানি। সব ছিল বোল্ড, কোনো রান দেয়নি। ১৯২২ সালের ৬ মে জেনিংস টিউন মাত্র ৫ ওভার বল করে এই অবিশ্বাস্য কীর্তি গড়েছিলেন।’

ইংল্যান্ডের প্রয়াত ক্রিকেট পরিসংখ্যানবিদ বিল ফ্রিন্ডাল

জেনিংস সেই কীর্তি গড়ার আগে আরও ৯ জন ইনিংসে কোনো রান না দিয়ে ১০ উইকেট নিয়েছেন। সবার আগে এই কীর্তি গড়েছেন এ ডার্টনেল ১৮৬৭ সালে। সর্বশেষ ১৯৯৮-৯৯ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে কোনো রান না দিয়ে ১০ উইকেট নেওয়ার নজির গড়েছেন ডি মর্টন। কিন্তু জেনিংস টিউন ও অ্যালেক্স কেলির সে কীর্তি গড়তে পারেননি আর কেউ—যা যেকোনো বোলারের কাছেই চূড়ান্ত স্বপ্ন।

Also Read: ২,১৫৫টি ক্রিকেট মাঠের সমান, চার রেকর্ড