
স্টেডিয়ামের সাউন্ড বক্সে বেজে উঠল ডিজে মিউজিক, এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে করতালি আর উচ্ছ্বাসে ভাসলেন গ্যালারিভরা দর্শক। খেলার নির্মম বাস্তবতা তো এটাই—একদিকে যখন আনন্দের জোয়ার, অন্যদিকে বিষাদের ছায়া। সেই বিষাদের ছায়া মেখে পাকিস্তান দলের প্রতিনিধি হয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসা কোচ মাইক হেসনের কথায় যে ছন্দ হারানোর সুর থাকবে, তা অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। হারলে হতাশা থাকবেই। কিন্তু হারের ধরনে হতাশার মাত্রার রকমফের হয়। তবে পাকিস্তান দলের কোচের মিনিট চারেকের প্রশ্নোত্তর পর্বে হারের হতাশা থেকে ‘ক্ষোভ’ই বেরিয়ে এসেছে বেশি।
দুনিয়াজুড়ে কোচিং করিয়ে অভিজ্ঞতার ভাঁড়ার সমৃদ্ধ করেছেন। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেই উইকেট নিয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে। উত্তরে হেসন অভিযোগের সুরে বললেন, ‘কোনো দলের জন্যই এই উইকেটকে আমার আদর্শ মনে হয় না। দলগুলো এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ রকম উইকেট গ্রহণযোগ্য নয়।’
উইকেট যে এত বাজে, তা–ও নাকি শুরুতে বুঝতে পারেনি পাকিস্তান। সেটির জন্য অবশ্য মিরপুরের উইকেটকে দায় দেননি হেসন। পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৪ রান যিনি করেছেন, দায়টা নাকি সেই ফখর জামানের! এটুকু পড়ে বিস্ময় জাগতেই পারে—যিনি পাকিস্তানকে অন্তত এক শ রান পার করালেন, সেই ফখরকে কেন দুষছেন কোচ! সেটা কি ৩৪ বলে ৬ চার ও এক ছয়ে ৪৪ রান করার পরও ইনিংসটা বড় হয়নি বলে?
না, ব্যাপারটা তা নয়। শুরুর দিকে ফখরের কিছু শটই নাকি পাকিস্তানকে উইকেট নিয়ে ‘ভুল বার্তা’ দিয়েছে! হেসনের কথা, ‘যখন আপনি বুঝতে পারবেন না যে উইকেটে ১০০, ১৩০ নাকি ১৫০ রান যথেষ্ট কি না…।’ এটা বলে বলে হতাশা প্রকাশের পর নিজের দলের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাকেও সামনে নিয়ে এসেছেন পাকিস্তানের কোচ, ‘উইকেট যেমনই হোক, আপনাকে তো পারফর্ম করতেই হবে।’
প্রতিপক্ষ কোচ যখন উইকেট নিয়ে এমন ক্ষোভ দেখিয়ে যান, স্বাভাবিকভাবেই তখন মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখতে ইচ্ছা করবে। সেটা দেখতে হলে তাকাতে হবে বাংলাদেশের ইনিংসে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের ১১০ রান তাড়া করতে নেমে ২৭ বল হাতে রেখেই ৭ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। এই সহজ জয়ের প্রধান নির্মাতা পারভেজ হোসেন। ৩৯ বলে ৩ চার ও ৫ ছয়ে অপরাজিত ৫৬ রান করা পারভেজ উইকেট নিয়ে কী বলেন, সেটাও জানার ইচ্ছা হওয়াটাই স্বাভাবিক।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা পারভেজের কাছে উইকেট নিয়ে জানতে চাওয়া হয়। উইকেট নিয়ে হেসনের বিশ্লেষণটাও তাঁকে জানানো হয়। বাংলাদেশের ওপেনার তো হেসনের অমন মন্তব্যে খুব বিস্মিতই হয়েছেন, ‘না, তেমন কিছু তো মনে হয়নি আমার কাছে! আমরা ১১০ রান করেছি ১৬ ওভারে। আমরা যদি ২০ ওভারও খেলতাম, ১৬০ রান করতে পারতাম।’ তাহলে পাকিস্তানের এমনভাবে খেই হারানোর কারণ কী? একটা ব্যাখ্যা আছে পারভেজের কাছেও, ‘হতে পারে ওরা মানিয়ে নিতে পারেনি, আমরা মানিয়ে নিতে চেষ্টা করেছি।’
কিন্তু মিরপুরের উইকেটের ‘বদনাম’ তো আর নতুন নয়। সারা বছর এই উইকেটে খেলেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। গত পরশু ম্যাচের আগের দিন তো বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক লিটন দাসও রসিকতা করে বলে গেছেন, এমন উইকেটে বোলার হলেই হয়তো ভালো করতেন! মিরপুরের এই উইকেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সব সময় খেলেন বলেই নাকি সামগ্রিকভাবেই ব্যাটসম্যানদের উন্নতির গ্রাফে বড় বাধা। কাল হেসনও এমন কথাই বলেছেন।
পারভেজ অবশ্য এত কিছু ভাবতে চান না। তাঁর সাফল্যের রহস্য খুবই সরল, ‘আমি আসলে বর্তমানে থাকার চেষ্টা করেছি। আমার ফোকাস এই সিরিজে ছিল। পরের বল কী হবে, সেটাতেই ছিলাম সব সময়।’