আফিফ হোসেনের বলে স্কয়ার কাট করে চার মারলেন ইকবাল হোসেন। সঙ্গে সঙ্গেই দৌড় শুরু হলো রংপুর বিভাগের ডাগআউটে দাঁড়িয়ে থাকা সবার। মাঠে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরলেন। কেউ কেউ তুলে নিলেন স্টাম্পও। তাঁদের এই উচ্ছ্বাস জাতীয় ক্রিকেট লিগে আরেকবার ‘চ্যাম্পিয়ন’ হওয়ার? না, তিন দিনের মধ্যে খুলনাকে ৭ উইকেটে হারিয়ে আজই আনুষ্ঠানিকভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায়নি রংপুর। তবে তাদের এই জয় আর শেষ রাউন্ডে অন্য তিন শিরোপাপ্রতিদ্বন্দ্বীর দুর্দশার কারণেই রংপুরের তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা প্রায় নিশ্চিতই।
একটু যে অনিশ্চয়তা, সেটি সিলেট বিভাগের কারণে। পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থেকে শেষ রাউন্ড শুরু করা সিলেট খেলছে বরিশালের বিপক্ষে। এই ম্যাচে সিলেট জিতলে চ্যাম্পিয়ন হবে তারাই। কিন্তু আগামীকাল অলৌকিক কিছু না হলে দলটির জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। রাজশাহীতে আজ তৃতীয় দিনটা বরিশাল শেষ করেছে দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেটে ২১২ রান তুলে। সিলেটের প্রথম ইনিংসের চেয়ে দলটি এগিয়ে ২৩৭ রানে। আগামীকাল বরিশাল কত রানের লক্ষ্য দেবে সিলেটকে, কে জানে। সিলেটের ম্যাচ জয়ের মতো সময়ও থাকবে কি না, সেটিও প্রশ্ন।
শিরোপা জেতার সম্ভাবনা নিয়ে শেষ রাউন্ড শুরু করেছিল চারটি দল। এর মধ্যে খুলনাকেই হারিয়েছে রংপুর। রাজশাহীর কাছে হারাও প্রায় নিশ্চিত প্রথমবার লিগ খেলতে এসেই শিরোপার সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলা ময়মনসিংহের। শীর্ষে থেকে শেষ রাউন্ডে খেলতে নামা সিলেটের জন্যও বরিশালের বিপক্ষে শেষ দিনে ম্যাচ জেতা বেশ কঠিন।
দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট হারিয়ে ৪১ রান নিয়ে আজ বগুড়ায় রংপুরের বিপক্ষে তৃতীয় দিন শুরু করেছিল খুলনা। মুকিদুল ইসলামের ৫ উইকেটে তারা অলআউট হয়ে যায় ৯৬ রানে। প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রানে পিছিয়ে থেকেও তাই ২৩১ রানের লক্ষ্য পায় রংপুর।
রানতাড়া তাদের জন্য সহজ করে দেন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া ইকবাল হোসেন। ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ১৭০ বলে ১১৪ রান করে অপরাজিত থেকে ৭ উইকেট হাতে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন তিনি। এই জয়ে ৮ পয়েন্ট পাওয়া রংপুরের পয়েন্ট এখন ৩১।
২৬ পয়েন্ট নিয়ে এই রাউন্ড শুরু হওয়ার আগে শীর্ষে ছিল সিলেট। বরিশালের বিপক্ষে শেষ দিনের আগে ২৩৭ রানে পিছিয়ে আছে তারা। প্রথম ইনিংসে ৩১২ রান করা বরিশাল দ্বিতীয় ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে এখন পর্যন্ত করেছে ২১২ রান। এর আগে ৫ উইকেট নিয়ে সিলেটকে ২৮৭ রানে অলআউট করেন রুয়েল মিয়া। টানা ৩ ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার।
দলটির ওপেনার ইফতেখার হোসেন ৯৩ রানে অপরাজিত থেকে চতুর্থ দিনে মাঠে নামবেন। বরিশালের ৬ উইকেট তুলে নিয়ে বড় লক্ষ্য তাড়া করতে হবে সিলেটকে। তারা ম্যাচটা ড্র করলেও পয়েন্ট হবে ২৮, তখনো চ্যাম্পিয়ন হবে রংপুরই।
নাটকীয় কিছু না ঘটলে শিরোপার লড়াইয়ে থাকা আরেক দল ময়মনসিংহের হারও অনেকটা নিশ্চিত। রাজশাহীর বিপক্ষে শেষ দিনে ১ উইকেট হাতে রেখে জয়ের জন্য ২০১ রান লাগবে তাদের। ৯৭ রান নিয়ে ময়মনসিংহের আবু হায়দারের সেঞ্চুরির অপেক্ষাই এখন শুধু। এই রাউন্ডে খেলতে নামার আগে ২৪ পয়েন্ট ছিল তাদের, সিলেট পা হড়কালে সবচেয়ে জোরালো সম্ভাবনাটা তাদেরই থাকার কথা ছিল।
এদিকে মিরপুরে চট্টগ্রামকে ইনিংস ব্যবধানে হারিয়েছে ঢাকা বিভাগ। আনিসুল ইসলাম, মার্শাল আইয়ুব ও আশিকুর রহমানের সেঞ্চুরিতে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট হারিয়ে ৫৪১ রান করে ঢাকা। প্রথম ইনিংসে ১৫৮ রানে অলআউট হয়ে ফলোঅনে পড়ে চট্টগ্রাম। দলটির কোনো ব্যাটসম্যান ফিফটিও পাননি। ঢাকার হয়ে ৩ উইকেট করে নেন রিপন মন্ডল, সুমন খান ও সালাউদ্দীন শাকিল।
দ্বিতীয় ইনিংসেও চট্টগ্রামের ব্যাটসম্যানরা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এবার ১৯১ রানে অলআউট হয়ে ইনিংস ও ১৯২ রানের বড় ব্যবধানে হারে চট্টগ্রাম। লিগে এটিই প্রথম জয় ঢাকার। আগের ৬ ম্যাচে ৫ ড্র ও ১ ম্যাচে হারা দলটি আগেই শিরোপার লড়াই থেকে ছিটকে গিয়েছিল।