কেশব মহারাজ কথাই বলতে পারছিলেন না ঠিকঠাক। প্রথা ভেঙে তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন সাক্ষাৎকার নিতে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ। মহারাজের কণ্ঠ থেমে যাচ্ছিল আনন্দাশ্রুতে। ফাঁকে ফাঁকে তিনি যা বললেন, তাতে কৃতজ্ঞতা থাকল সমর্থকদের জন্য, ‘এটা বিশেষ, এখানে যাঁরা এসেছেন ও যাঁরা দেশে আছেন—তাঁদের জন্য ট্রফিটা উঁচিয়ে ধরতে পারা সম্মানের। গত পাঁচ দিন যে একতা ছিল, এটাই আমাদের দেশ। এখানে যাঁরা এসেছেন, সবার কাছে আমরা ভীষণ কৃতজ্ঞ।’
শুধু তো আর মহারাজ নন। দক্ষিণ আফ্রিকার যাঁকেই পাওয়া গেল, যখন যিনিই কথা বললেন—সবারই কৃতজ্ঞতা দর্শকদের প্রতি। তা না হয়ে অবশ্য কারণও নেই—১৯৯৮ সালের পর এবারই প্রথম আইসিসির কোনো শিরোপা জিতেছেন তাঁরা, জিতেছেন প্রথম ‘বিশ্বকাপ’।
১৯৯৮ সালে ঢাকায় মিনি বিশ্বকাপ জয়ের পর বৈশ্বিক আসরে ১১ সেমিফাইনাল আর ১ ফাইনালে হারের পর এবার দক্ষিণ আফ্রিকা জিতেছে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই জয়ের পথেও কম কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয়নি। প্রথম ইনিংসে তারা পিছিয়ে গিয়েছিল ৭৪ রানে। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতল দলটি।
শেষ দিকে ড্রেসিংরুমের অবস্থা কেমন ছিল, তার একটা ধারণা মিলবে মার্কো ইয়ানসেনের কথায়, ‘বসে বসে প্রার্থনা করছিলাম, আমরা ভাগ্যবান যে কাজটা ঠিকঠাক করতে পেরেছি। ড্রেসিংরুমে সবাই অনেক নার্ভাস ছিল। অনেকে চুপ করে বসেছিল, কিন্তু আমাদের দর্শকেরা প্রতিটি রানের জন্য চিৎকার করেছেন, এর চেয়ে বেশি কিছু চাওয়ার নেই।’
২৮২ রানের লক্ষ্য তাড়া করা বেশ কঠিনই হওয়ার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। তবে ১৩৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে প্রোটিয়াদের জয়টা এনে দিয়েছেন এইডেন মার্করাম। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের সেরা খেলোয়াড়ও হয়েছেন তিনি।
ম্যাচের পর ওই অনুভূতি শুনিয়েছেন মার্করাম, ‘কখনো এর চেয়ে দামি রান করিনি। বিষয়টা একটু অদ্ভুত, প্রথম ইনিংসে ডাক মেরে ফেরার পর সবকিছু কীভাবে ঠিকঠাক হলো। কিছুটা ভাগ্যও দরকার হয়। লর্ডস এমন জায়গা, যেখানে সবাই খেলতে চায়। দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক সমর্থক এসেছেন, এটা অন্যতম বিশেষ একটা দিন তাঁদের জন্যও।’
মার্করামের জন্য কাজটা সহজ করে দিয়েছেন টেম্বা বাভুমা। চোট নিয়েও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে খেলে গেছেন। মার্করামের সঙ্গে ১৪৭ রানের জুটিতেই ম্যাচটা অজিদের কাছ থেকে বের করে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
ম্যাচের পর অধিনায়ককে নিয়ে মার্করাম বলেন, ‘দুই তিন বছর ধরে সে আমাদের সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে। সে ড্রেসিংরুমে না ফিরে এমন একটা ইনিংস খেলেছে, যেটা অনেক মানুষই মনে রাখবে।’