
চট্টগ্রামের উইকেট রান–প্রসবা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আজ শুরু তিন ম্যাচের টি–টোয়েন্টি সিরিজে তাই বোলারদেরই কঠিন চ্যালেঞ্জ।
তখনো ফিল্ডিং অনুশীলনে তুমুল ব্যস্ততা ক্রিকেটারদের। চট্টগ্রামের ভ্যাপসা গরমে তাঁদের পেয়ে বসার কথা ক্লান্তিও। কিন্তু বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের ক্লাসের যে তখন শুধুই শুরু। ক্যাচ–থ্রোতে তাঁদের ব্যস্ততা যখন ফিল্ডিং কোচ জেমস প্যামেন্টের সঙ্গে, তখন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামের সেন্টার উইকেটগুলোর একটির সামনে দাঁড়িয়ে পেস বোলিং কোচ শন টেইট আর স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ।
কারণ, চট্টগ্রামের ঘাসে ঢেকে থাকা উইকেটে চ্যালেঞ্জটা তাঁদের জন্যই বেশি। উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে মুশতাক আর টেইটের প্রায় ১৫ মিনিটের আলোচনায় হয়তো সেসব প্রসঙ্গই উঠেছে। বোলারদের চ্যালেঞ্জ উতরানোর উপায় বাতলে দেওয়ার দায়িত্বটা তো তাঁদের দুজনের কাঁধেই। খানিক পর সেই আলোচনায় কিছুক্ষণের জন্য যোগ দিয়েছিলেন দলের সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দীনও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি সিরিজের আগে বাংলাদেশের চিন্তাটা যে বোলারদের নিয়েই বেশি, তা বোঝা যাবে এ দৃশ্যেই।
চট্টগ্রামের উইকেটটা যে ব্যাটসম্যানদের জন্য একরকম স্বর্গই বলা যায়। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে হওয়া ১৩০ টি–টোয়েন্টির ২১টি দেখেছে দুই শ পেরোনো ইনিংস।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় টি–টোয়েন্টি আসর বিপিএলের দলীয় সর্বোচ্চ ১০টি ইনিংসের আটটিও এখানেই। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এখানে প্রথম ইনিংসে গড় রান ১৪৫। দুই ইনিংস মিলিয়ে ওভারপ্রতি ৮.১২ গড়ে রান দিয়েছেন বোলাররা। বাংলাদেশের বোলাররা যদিও খুব বেশি খারাপ করেননি এখানে। এই মাঠে খেলা ১৩ ম্যাচে তাঁরা ওভারপ্রতি ৬.৯৮ রান দিয়েছেন।
তবে চট্টগ্রামের এই পিচে রান আটকানো আর উইকেট নেওয়া যে কঠিন, সেটা তো আর অজানা নয় বাংলাদেশ দলের! তাই তো ফিল্ডিং অনুশীলন শেষে রিশাদ হোসেন–মোস্তাফিজুর রহমানদের ব্যস্ততা সেন্টার উইকেটের নেটে। ঘণ্টা দেড়েক ধরে চলা তাঁদের সেই অনুশীলনে ব্যাটসম্যান বদলেছে ঠিকই, কিন্তু ম্যাচ পরিস্থিতি তৈরি করে সেই অনুশীলন থেকে কোনো বোলারেরই ‘ছুটি’ মেলেনি খুব একটা। প্রায় পুরোটা সময়ই পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের পরামর্শ দিয়ে গেছেন দুই বোলিং কোচ।
চট্টগ্রামে আজ বাংলাদেশ দল নামছে টানা পঞ্চম টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে। আগের চারটি সিরিজ জয়ের পথে ব্যাটসম্যানদের নিয়ে অনেক আলোচনা–সমালোচনা হলেও বোলাররা ছিলেন সেসবের আওতামুক্ত।
এ বছর ওভারপ্রতি ৭.৪৮ রান করে দিয়েছেন বোলাররা। চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অবশ্য ভিন্ন এক লড়াই লড়তে হবে তাঁদের। বোলারদের কঠিন পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষের রান আটকানো আর উইকেট নেওয়ার সেই লড়াই করতে দেখতে চান বাংলাদেশের টি–টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক লিটন দাসও!
কাল সংবাদ সম্মেলনে লিটন তেমন কথাই বলে গেছেন। এ বছর বাংলাদেশ বেশির ভাগ টি–টোয়েন্টিই এমন উইকেটে খেলেছে, যেখানে বোলারদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে কম। লিটন মনে করেন, এতে বোলারদের আরও ভালো করার স্পৃহা হারিয়ে যেতে পারে। ধারাবাহিক ভালো বোলিং করার সামর্থ্যেও পড়তে পারে টান।
বাংলাদেশের অধিনায়কের অমন চাওয়া সে কারণেই, ‘আপনি যখন তাদের কঠিন বা চ্যালেঞ্জিং উইকেটে নিয়মিত বোলিং করাবেন, সেখান থেকেই ধারাবাহিকতা তৈরি হবে। আপনি যদি এটা জানেন, আমি যে উইকেটে বোলিং করব সেখানে সাহায্য থাকবে, তাহলে খুব একটা চ্যালেঞ্জ থাকে না। যেহেতু আমাদের হাতে বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি সময় নেই, চেষ্টা করব আমরা এখানে (বোলারদের জন্য কঠিন উইকেটে) খেলার।’
সেই চ্যালেঞ্জের জন্য চট্টগ্রামই যে আদর্শ জায়গা, তা বোঝা যাবে বাংলাদেশের সূচির দিকে তাকালেও। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই সর্বশেষ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেটিও হবে চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বাস্তবতা অবশ্য ভিন্ন। তাদের জন্য টি–টোয়েন্টি সিরিজ জয়টাই এখন হয়ে উঠেছে মুখ্য, তা উইকেট ব্যাটিং বা বোলিং বান্ধব হোক। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল অবশ্য এই সংস্করণে ব্যাটিং–বোলিং কোনোটিতেই ছন্দে নেই। চট্টগ্রামে ভালো উইকেটে খেলার আগে তাই দলটির অধিনায়ক শাই হোপ জোর দিচ্ছেন বোলারদের ধারাবাহিকতাতেই।
ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে কাল তিনি বলেছেন, ‘আমার মনে হয় ধারাবাহিকতাটাই মূল। আমরা যে পরিকল্পনা করেছি, সেটা ঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। হ্যাঁ, পরিকল্পনা তো অনেকই করেছি। কিন্তু সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে না পারলে তো সবকিছুই বৃথা যাবে।’