মাথায় হেলমেট, হাতেও হয়তো এখন দামী ব্যাট রহমানউল্লাহ গুরবাজের।
মাথায় হেলমেট, হাতেও হয়তো এখন দামী ব্যাট রহমানউল্লাহ গুরবাজের।

একটি ব্যাট কিনতে অর্ধেক পারিশ্রমিকেও কাজ করেছেন গুরবাজ

স্বপ্ন তো কতই থাকে, কিন্তু স্বপ্ন পূরণ হওয়ার পরের গল্পটাই হয়তো জানেন সবাই। আগের লড়াই, সংগ্রাম—সবকিছুই বেশির ভাগ সময় থেকে যায় আড়ালে। নিজের ফেলে আসা সেই গল্প এবার সামনে নিয়ে এসেছেন আফগানিস্তানের তারকা রহমানউল্লাহ গুরবাজ।

গুরবাজ এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগেও তাঁর চাহিদার কমতি নেই। অথচ একটা সময় ছিল, যখন একটা ব্যাট কিনতে লুকিয়ে তাঁকে কাজ করতে হয়েছে। খেলার সময় তাঁর নিজের ব্যাট ছিল না। ফেলে আসা দাহকালের সেসব গল্প ক্রিকইনফোকে শুনিয়েছেন গুরবাজ।

রহমানউল্লাহ গুরবাজ

গুরবাজ শুরুটা করেছেন তাঁর ভাইয়ের ব্যাট ভেঙে ফেলার গল্প দিয়ে, ‘আমাদের অনেক বড় পরিবার, কোনো একটা অনুষ্ঠান চলছিল ঘরে। অনেক অতিথি ছিল, আমার ভাই আমাকে চা আনার জন্য পাঠিয়েছিল। কিন্তু বাইরে গিয়ে চা আনার কথা ভুলে যাই, ক্রিকেট খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। ভাই খুঁজতে এসে দেখে ক্রিকেট খেলছি। সে এতে খুব রাগ করে আর ব্যাটটা ভেঙে ফেলে।’

ব্যাট ভেঙে ফেলা ভাইয়ের প্রতি আর রাগ নেই গুরবাজের, ‘সে পরে আমাকে সাহায্য করেছে। পরে সে বুঝতে পেরেছে, আমি ক্রিকেটের বড় ভক্ত আর ক্রিকেটারই হতে চাই। তখন সে আমার জন্য ভালোটাই চেয়েছে। ভেবেছে, আমার পড়াশোনা করা দরকার।’

গুরবাজের বাবা ছিলেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তাঁর চাওয়া ছিল, সন্তানেরাও যেন লেখাপড়া করে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হন। পরিবারের বাকিরাও তাঁর ক্রিকেটার হওয়ায় সায় দেননি। গুরবাজের জীবনও চলছিল পড়াশোনার পথেই। কিন্তু একদিন টিভিতে ক্রিকেট দেখে প্রেমে পড়ে যান খেলাটার।

এরপর আর ফিরতে পারেননি সেই প্রেম থেকে, ‘আমি ষষ্ঠ শ্রেণি অবধি পড়াশোনায় খুব ভালো ছিলাম। কিন্তু যখনই ক্রিকেট খেলা শুরু করি, তখন পড়া থেকে দূরে চলে যাই আর ক্রিকেটের প্রেমে পড়ি।’

ক্রিকেটটা আর সবার মতো পাড়া-মহল্লাতেই শুরু করেন। এরপর গুরবাজ নাম করেন টেপ বলের ক্রিকেটে। একটা সময় খুলে যায় জাতীয় দলের বয়সভিত্তিক ক্রিকেটের দরজাও। যদিও অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার সময়ও ব্যাট ছিল না তাঁর। সেসব দিন পাড়ি দিয়ে আসার আনন্দ অবশ্য স্বীকার করেন গুরবাজও, ‘আমি অনেক ভুগেছি। আমার ওপর অনেক চাপ ছিল, বিশেষত আর্থিকভাবে। কিন্তু দিন শেষে আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, আমি আফগানিস্তানের হয়ে খেলেছি, দেশের হয়ে কিছু অর্জন করেছি।’

কিন্তু দিনগুলো কতটা কঠিন ছিল? সে গল্পও বলেছেন গুরবাজ। ক্রিকেট খেলার জন্য একসময় অন্য কাজও করতে হয়েছে তাঁকে। গুরবাজদের বাড়িতে কন্ট্রাক্টর নির্মাণকাজ শুরুর পর তিনি সেই কন্ট্রাক্টরের কাছে কাজ চেয়েছিলেন। গুরবাজের ভাষায়, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, তোমার হয়ে কাজ করব। কিন্তু কাউকে বলতে পারবে না; কারণ, আমার বাবা-ভাই কাজ করতে দেবে না। বাকিদের যে টাকা দাও, তার অর্ধেক দিলেই হবে, এমনও বলেছিলাম তাকে। আমি শুধু তোমার সঙ্গে কাজ করব, অনেক পরিশ্রমও করব।’