টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৬ বারের মতো এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম
টেস্ট ক্যারিয়ারে ১৬ বারের মতো এক ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম

চট্টগ্রাম টেস্ট

তাইজুলের ভেলকি, শেষ সেশনে গেল ৭ উইকেট

রোদঝলমলে দিনে হঠাৎ আকাশে মেঘ। অন্ধকার ঢেকে যায় চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামও। কিন্তু ওই আঁধারের মধ্যেই বাংলাদেশ দলকে এক টুকরা আলো এনে দেন নাঈম হাসান। পরপর দুই ওভারে তাঁর দুই উইকেট নেওয়ার আগপর্যন্ত চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনটা বাংলাদেশের জন্য হতাশারই ছিল।  

প্রথম দিন শেষে জিম্বাবুয়ে শেষ পর্যন্ত থেমেছে ৯ উইকেট ২২৭ রান করে। অথচ একপর্যায়ে ৪ উইকেটে তাদের রান ছিল ২০০।  নাঈম ওই ২ উইকেট না নিলে বা এর আগে যদি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যান নিক ওয়েলচ মাংসপেশির টানে আহত অবসর না হতেন, দিনটা আরও ভালোভাবে শেষ করতে পারত সফরকারীরা।

সকালের সেশনে দুই উইকেট তুলে নেওয়ার পর শন উইলিয়ামসকে সঙ্গে নিয়ে জিম্বাবুয়েকে বড় সংগ্রহের পথে তিনি নিয়ে যাচ্ছিলেন ওয়েলচ। বাংলাদেশের ফিল্ডার আর বোলারদের ব্যর্থতায় তাঁদের ফেরানোটা মনে হচ্ছিল বেশ দুরূহ কাজ। কিন্তু চা–বিরতির পর ব্যথা আর সহ্য করতে না পেরে ৫৪ রানে থাকতেই মাঠ ছাড়তে হয় ওয়ালচকে।

তীব্র গরমে ওয়েলচের মাঠ ছেড়ে চলে যাওয়াটাই জিম্বাবুয়ের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে

সেটাই জিম্বাবুয়ের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। ওয়েলচের পর উইকেটে আসা ক্রেইগ আরভিনই প্রথম শিকার হন নাঈমের। এরপরের উইকেটটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের জন্য। ৬৭ রান করে ফেলা শন উইলিয়ামসের দুর্দান্ত ক্যাচটি নিয়ে এই উইকেটের বড় কৃতিত্বটা পাওনা তানজিম হাসানের। উইকেটের মাঝপথে পড়ে গিয়েও সাদমান ইসলাম–জাকের আলীর দুর্বল থ্রোয়ে বেঁচে যাওয়া এই ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের জন্য বড় বিপদই হয়ে উঠছিলেন।  

বাংলাদেশের হয়ে পরের গল্পটা লিখেছেন তাইজুল ইসলাম। চট্টগ্রামে টানা দ্বিতীয় ফাইফারে জিম্বাবুয়েকে বলতে গেলে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন তিনি। শুরুটা করেছিলন ওপেনার বেন কারানকে ফিরিয়ে। নাঈমের জোড়া উইকেটের পর ওয়েসলি মাধেভেরে তাঁর বলেই ক্যাচ দিয়ে দেন উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো জাকের আলীর হাতে।

এই স্কোরকার্ড নিশ্চয় দেখতে চাইবে না জিম্বাবুয়ে

নতুন বল নেওয়ার পর আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন তাইজুল। ৮০তম ওভারে বোলিংয়ে এসে তৃতীয় বলেই ছক্কা খেয়েছিলেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজার হাতে। তাঁকে এলবিডব্লিউ করার পরের বলে রিচার্ড এনগারাভাকে আউট করে জাগিয়ে তুলেছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা।

স্টেডিয়ামে হাজির শখানেক দর্শকের চিৎকার সারাদিনে শোনা যায় ওই সময়টুকুতেই। হ্যাটট্রিকটা তাইজুল করতে পারেননি। তবে আরও দুটি উইকেট নিয়ে জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ের শেষ ডেকে আনেন তিনিই।

তাইজুলের নেওয়া শেষ উইকেটটির কথা আলাদা করেই উল্লেখ করা প্রয়োজন। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরা ওয়েলচ, যিনি আবার মাঠে নামার পর তাঁকে আর একটি রানও যোগ করতে দেননি বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার।

প্রথম দিনের খেলা শেষে স্বস্তির হাসি নিয়ে মাঠ ছাড়ছে বাংলাদেশ দল। আজ চট্টগ্রামে

জিম্বাবুয়ের জন্য অলআউট হয়ে যাওয়াটা এরপর সময়ের ব্যাপারই হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু শেষ পাঁচ ওভারে বাংলাদেশ ফেলতে পারনি তাদের শেষ উইকেটটি। বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার অপেক্ষাটাও বেড়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২২৭/৯ (উইলিয়ামস ৬৭, ওয়েলচ ৫৪, বেনেট ২১, কারেন ২১; তাইজুল ৫/৬০, নাঈম ২/৪২, তানজিম ১/৪৯)।

* ১ম দিন শেষে।