Thank you for trying Sticky AMP!!

সংবাদ সম্মেলন করতে টাওয়ার ইন হোটেলে ঢুকছেন তামিম ইকবাল

অবিশ্বাস ছড়িয়ে তামিমের বিদায়

চট্টগ্রামের জুবিলি রোডে তখন ঝুম বৃষ্টি। এর মধ্যেই সাংবাদিকদের একটা ভিড় বেরিয়ে আসছিল হোটেল টাওয়ার ইন থেকে। ভিড়ের মধ্যমণি আর কেউ নন—তামিম ইকবাল। কালো টি-শার্ট পরা তামিমের মুখটা হারিয়ে যাচ্ছিল কালো ক্যাপে। কান্নায় লাল হয়ে আসা তামিমের দুটি চোখ চেষ্টা করেও খুঁজে পাচ্ছিলেন না ফটোগ্রাফাররা। এভাবেই তিনি নেমে পড়লেন বৃষ্টিতে, এরপর ঢুকে গেলেন কালো গাড়িতে। তামিমের সেই গাড়ি টিম হোটেলে যায়নি। গেছে তামিমদের পারিবারিক কাজীর দেউড়ির বাসায়।

তামিম উঠে পড়তে মুহূর্তেই গাড়িটি চোখের আড়াল হলো। বাংলাদেশ ক্রিকেট মাঠের গ্যালারির চেনা মুখ টাইগার নামে পরিচিত শোয়েব আলী তামিমের গাড়ির পেছনে যেতে যেতে বলছিলেন, ‘তামিম ভাই, এটা কী করলেন!’ কথাটায় যতটা না বিস্ময় মেশানো, তার চেয়ে বেশি ছিল যেন আক্ষেপ। তামিম কী করেছেন, সেটা এতক্ষণে সবার জানা। আবেগঘন এক সংবাদ সম্মেলনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম ব্যাটসম্যান

তামিমের অবসরের গুঞ্জনটা গতকাল রাত থেকেই শোনা যাচ্ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসের সেরা ওপেনার ১৬ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানতে যাচ্ছেন, এমন খবর প্রথম আলোতে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই সংবাদকর্মীদের আগ্রহের পারদ বাড়তে থাকে তরতরিয়ে। সকালেই চট্টগ্রামে বাংলাদেশ দলের টিম হোটেলের সামনে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে সংবাদ সম্মেলনে যাওয়ার মুহূর্তটা ক্যামেরাবন্দী করতেই তাঁদের অপেক্ষা।

এর মধ্যেই খবর আসে, দুপুর ১২টায় তামিম সংবাদ সম্মেলন করবেন। সেটাও টিম হোটেলের আশেপাশে কোনো এক জায়গায়। তামিম চেয়েছিলেন তাঁর ক্যারিয়ার যেখানে শুরু, সেই এম এ আজিজ স্টেডিয়ামেই হোক সেটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি হয়নি। তাতে সংবাদ সম্মেলনের সময়ও পিছিয়ে যায় বেলা দেড়টায়। জানানো হয়, সেটি হবে জুবিলি রোডের টাওয়ার ইন হোটেলের কৃষ্ণচূড়া হলে।

তামিমের সংবাদ সম্মেলনে উপচে পড়া ভীড়

সে খবর আসার পর টিম হোটেলের সামনে সাংবাদিকদের ভিড় কমে আসে। সবার গন্তব্য এবার টাওয়ার ইন হোটেল। সেখানে সংবাদ সম্মেলনের জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়। তামিম সেই হোটেলে পৌঁছান বেলা ১টা ১৭ মিনিটে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসার সময়ই তামিমকে ঘিরে ধরেন সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা। তবে দ্রুতই হোটেলের লিফটের দিকে এগিয়ে যান তামিম। স্বাভাবিকভাবেই ক্যামেরার ফ্ল্যাশ, হইচইয়ের শব্দ তাঁর পিছু নিচ্ছিল।

লিফটে ওঠার সময় এক ফটোগ্রাফার তামিমের সঙ্গে লিফটে ওঠার অনুরোধ করেন। তামিম তখন প্রথমবারের মতো মাথা তুলে সেই ফটোগ্রাফারকে বারণ করেন, ‘আজ না ভাই প্লিজ।’ কথাটা বলার সময় তামিমের চোখ ছলছল করছিল। যেন কথাটা বলতেও কষ্ট হচ্ছিল তামিমের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। সোজা লিফটের এক কোণে নিজেকে লুকিয়ে নেন তিনি। ওদিকে সংবাদকর্মীদের ভিড় সিঁড়ি বেয়ে পৌঁছে যায় সংবাদ সম্মেলনকক্ষে।

Also Read: চাপের মুখে তামিমের অবসর?

হইচই আর ক্যামেরার ঝলকানি তখন চূড়ান্ত। সঙ্গে মুঠোফোনের ক্যামেরা তো আছেই। তামিম সেখানে এসেই একবার চারপাশটা দেখে নিলেন। সবাইকে প্রস্তুত হওয়ার জন্য কিছু সময়ও দিয়েছেন। সে সময়টা তামিম তাকিয়ে ছিলেন শূন্য দৃষ্টিতে। নিজের কথাগুলো হয়তো তখনই গুছিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু কথা বলার সুযোগ তিনি পাচ্ছিলেন না। সংবাদকর্মীদের হইচইয়ে কথা বলার মতো অবস্থা ছিল না।

কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তামিম

একটা পর্যায়ে তামিম নিজেই সংবাদকর্মীদের চুপ করার অনুরোধ করেন। সেটাও বেশ কয়েকবার। অবসরের ঘোষণাটা আসে এরপরই। কিছুক্ষণ আগে যেখানে ছিল শোরগোল, কিছুক্ষণের জন্য সেখানে নেমে আসে অদ্ভুত এক নীরবতা। সবাই যেন নিশ্বাস বন্ধ করে তামিমের কথাগুলো শুনছিলেন। তামিমও আর কথা বাড়াতে পারছিলেন না। বিদায়ের কথাটা বলার পর কান্না থামাতে পারেননি তিনি। ক্যাপে মুখ লুকিয়ে দুই চোখ লুকানোর চেষ্টা করেন। পাশে থেকে একজন সে সময় চোখ মুছতে তামিমকে টিস্যু এগিয়ে দেন। কিন্তু তামিমের কান্নার সঙ্গে লড়াইটা চলতে থাকে আরও কিছুক্ষণ। এর মধ্যেই নিজের বক্তব্যটা তুলে ধরেন।

Also Read: বিসিবির শেষ চেষ্টাও ঠেকাতে পারেনি তামিমের অবসর

তামিমের বলা কথাগুলো এখন সবার জানা। সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে শেষবারের মতো বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটার হিসেবে সংবাদ সম্মেলনকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। আজ থেকে তিনি সাবেক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জমকালো আলোয় আর তাঁকে দেখা যাবে না। সে আলো থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নিলেন। তামিম চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরও সংবাদ সম্মেলনকক্ষে কেমন একটা শূন্যতা যেন।

একজন ক্যামেরাপারসনকে তখন বলতে শোনা গেল, ‘তামিম আর (ক্রিকেটে) নেই। ভাবা যায়!’ মুঠোফোনে কয়েকজন ক্রিকেটারও অবাক। ‘ভাই এটা কেন করল?’, ‘এভাবেই–বা কেন?’, ‘আমরা তো কিছুই জানতাম না!’—এমন প্রশ্নের ছড়াছড়ি সবখানে।

তামিম নিজের কথার বাইরে সংবাদ সম্মেলনে আলাদা করে কোনো প্রশ্নেরও জবাব দেননি। তাঁর কথা শেষ হওয়ার পরপরই এক রিপোর্টার প্রশ্ন করেন, ‘তামিম একটা বিষয়...’

তামিম সে বিষয় শোনেননি। তাঁর অবসরের এমন ঘোষণার পর তাই চারদিকে অবিশ্বাসের ছড়াছড়ি।

কে জানত, তামিম এমন উপসংহার টানবেন!