একই বছরে টেস্ট অভিষেক তাঁদের। বোলার হিসেবেও একই প্রজাতির তাঁরা—দুজনই যে অফ স্পিনার। বয়সেও কাছাকাছি, এক বছরের বড়-ছোট। সেই রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও নাথান লায়ন কাছাকাছি আছেন টেস্টে উইকেট শিকার সংখ্যাতেও।
ভারতের অশ্বিনের চেয়ে ২৮টি টেস্ট বেশি খেললেও উইকেটের সংখ্যায় অস্ট্রেলিয়ার লায়ন এগিয়ে শুধু ৭ ব্যবধানে। ১২২ টেস্টে লায়নের উইকেট ৪৯৬, ৯৪ টেস্টে অশ্বিনের ৪৮৯। এখনো যাঁরা খেলে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে টেস্টে উইকেট শিকারে এ দুজনই সবার ওপরে। সেই দুজনের একজন লায়ন আগামীকাল শুরু পার্থ টেস্টেই ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলতে পারেন, উইকেট যে দরকার মাত্র চারটি।
উইকেট নেওয়ায় তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও লায়ন রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ব্র্যাকেটবন্দী করতে চান না। অশ্বিন যে তাঁর ভালো করার প্রেরণাও!
তবে কেউ স্বীকার করুন না আর না–ই করুন, লায়ন ও অশ্বিন উইকেট নেওয়ার দৌড়ে একে অপরকে পেছনে ফেলার স্বপ্ন দেখেন না—সেটা বললে ভুল হবে। ক্রিকেটার মাত্রই ভালো করার খিদেটা থাকবেই। আর কোনো ধারেকাছে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে তো কথাই নেই। ভালো করার খিদেটা আরও বাড়াই স্বাভাবিক।
অস্ট্রেলিয়া-পাকিস্তান প্রথম টেস্ট শুরুর আগে লায়নের সামনে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁয়ার ব্যাপারটি মনে করিয়ে দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। আর এই প্রসঙ্গে অশ্বিনকে লায়নের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ধরে সংবাদমাধ্যমটি মনে করিয়েছে এক ধ্রুপদি দ্বৈরথকে। শেন ওয়ার্ন ও মুত্তিয়া মুরালিধরন! ২০ বছর আগে এই দুই কিংবদন্তিকে নিয়েও একই দৌড়ের সুবাস পেয়েছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। টেস্টে কে আগে ৫০০ উইকেটের মাইলফলক ছোঁবেন?
প্রয়াত অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ‘মিশন ফাইভ হানড্রেডস’-এ তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর এক টেস্ট ও চার দিনের ব্যবধানে মুরালিধরনকে পেছনে ফেলেছিলেন। মজার ব্যাপার, দুজনেই এই মাইলফলকের দেখা পেয়েছিলেন একই টেস্ট সিরিজে। ২০০৪ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে গলে সিরিজের প্রথম টেস্টের শেষ দিনে (১২ মার্চ) হাসান তিলকারত্নেকে আউট করে এই সংস্করণে ৫০০তম উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন ওয়ার্ন। মুরালিধরন সে সিরিজেই ক্যান্ডিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে (১৬ মার্চ) একই মাইলফলকের দেখা পান।
প্রায় দুই দশক পর লায়ন-অশ্বিনও ৫০০ উইকেটের মাইলফলকও হয়তো কাছাকাছি সময়েই ছোঁবেন। সেখানে লায়নই যে এগিয়ে, সেটি তো বলতে হয় না।। আগামীকাল যে স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে, সেই পার্থ স্টেডিয়ামে ৩ টেস্ট খেলে ম্যাচপ্রতি গড়ে সাতটির বেশি করে উইকেট পেয়েছেন লায়ন।
আর ভারতের লাল বলের ক্রিকেট খেলতে নামা একটু দেরি হবে। সেঞ্চুরিয়নে আগামী ২৬ ডিসেম্বর (বক্সিং ডে) থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টে মাঠে নামবে ভারত। দুই ম্যাচের এই সিরিজে ভারতের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা। লায়ন পার্থ টেস্টে না পারলেও মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে দ্বিতীয় সুযোগটি পাবেন।
সেই লায়ন গত জুনে লর্ডস টেস্টে পাওয়া চোট থেকে সেরে উঠে এখন টেস্ট ক্রিকেটে ফেরার অপেক্ষায়। অশ্বিন প্রসঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঝাঁজ নয়, বরং আজ প্রশংসাই ঝরল তাঁর মুখে, ‘অশ্বিনকে দেখুন, সে বিশ্বমানের বোলার। তার ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই তাকে ভালোমতো দেখে আসছি। বিশ্বের নানা প্রান্তে বিভিন্ন কন্ডিশনে আমরা বহুবার একে অপরের মুখোমুখি হয়েছি। তার প্রতি আমার শুধু শ্রদ্ধাই আছে। অবশ্যই তার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।’
লায়ন এরপর যেন একটু দার্শনিক হয়ে উঠলেন, ‘যাদের বিপক্ষে আমরা খেলি, তাদের কাছ থেকেও শেখার সুযোগ আছে। এভাবে ভাবলে সে (অশ্বিন) কিন্তু আমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কোচও। এটাও দারুণ ব্যাপার যে আমরা দুজনেই ৫০০ উইকেট পাওয়ার কাছাকাছি অবস্থান করছি। দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কে কোথায় গিয়ে থামি।’
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে লায়নের টেস্ট অভিষেক ২০১১ সালের ৩১ আগস্ট। নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল অশ্বিনের। এরপর টেস্টে লায়নের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে এই সংস্করণে ১০০তম উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন অশ্বিন। সেটি ছিল ২০১৩ সালে ক্যারিয়ারের ১৮তম টেস্টে। লায়নও ২০১৩ সালেই ১০০তম উইকেটের দেখা পান, তবে সেটি ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের ২৯তম টেস্ট। এরপর ২০১৬ সালে এসে ক্যারিয়ারের ৫৫তম টেস্টে ২০০তম উইকেটের দেখা পান লায়ন। অশ্বিন এখানেও এগিয়ে। ২০১৬ সালেই ক্যারিয়ারের ৩৭তম টেস্টে এই মাইলফলকের দেখা পান ভারতীয় তারকা।
অশ্বিন পরের বছর ক্যারিয়ারের ৫৪তম টেস্টে এসে ৩০০তম উইকেটের দেখা পান। লায়ন একই মাইলফলকের দেখা পেয়েছেন ২০১৮ সালে, ক্যারিয়ারের ৭৭তম ম্যাচে। ২০২১ সালে আহমেদাবাদ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪০০তম উইকেট তুলে নেন অশ্বিন নিজের ৭৭তম ম্যাচে এসে। লায়নও সে বছরই চার শর দেখা পেলেও খেলে ফেলেছিলেন ১০১তম টেস্ট। অর্থাৎ ৫০০ পর্যন্ত আসার আগে ১০০ থেকে ৪০০তম উইকেটের মাইলফলক পর্যন্ত অশ্বিন ৪-০ ব্যবধানে এগিয়ে। কিন্তু পাঁচ শ-তে এসে সময়টা লায়নের।
৫০০ পুরো করতে যে চাই আর মাত্র ৪ উইকেট।