কীভাবে এত গোল করে মেয়েরা?

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৫ নারী ফুটবল দল।
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–১৫ নারী ফুটবল দল।
>
  • অনূর্ধ্ব–১৫ সাফের পর হংকং জকি কাপেও চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
  • দুটি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ মোট গোল করেছে ৩৭টি
  • গড়ে পাঁচটির বেশি
  • এর পেছনে মেয়েদের ফিটনেসের কথায় বললেন বাংলাদেশ কোচ

হংকংয়ে চার জাতি জকি কাপে গোলবন্যা বইয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা।
মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ১০-১, ইরানের বিপক্ষে ৮-১ আর শেষ ম্যাচে স্বাগতিক হংকংকে ৬-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশ হয়েছে চ্যাম্পিয়ন। টুর্নামেন্টে সব মিলিয়ে বাংলাদেশের গোল ২৪টি। বিদেশের মাটিতে তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে দুই ডজন গোল! ম্যাচপ্রতি গড়ে আটটি। ভাবা যায়!
গত ডিসেম্বরে ঢাকায় সাফ অনূর্ধ্ব–১৫ সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ চার ম্যাচে করেছিল ১৩ গোল। দুই টুর্নামেন্টে সাত ম্যাচে গোল দাঁড়াল ৩৭টি। গড়ে পাঁচটির বেশি। আন্তর্জাতিক ফুটবল বলেই পরিসংখ্যানটা চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। একটা প্রশ্ন এসেই যায়। আমাদের অনূর্ধ্ব–১৫ দল খুব ভালো, নাকি প্রতিপক্ষ খুব বাজে!
প্রতিপক্ষ যে মোটেও বাজে নয়, সেটা না বললেও চলছে! হংকংয়ের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশই ছিল র‍্যাঙ্কিংয়ের সবচেয়ে পেছনের দল—১০২। মালয়েশিয়া ছিল ২২ ধাপ এগিয়ে। ইরান ৪৪ ধাপ। ৩১ ধাপ এগিয়ে ছিল হংকং। কিন্তু এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের মেয়েরা প্রমাণ করেছে, তাদের দারুণ ভবিষ্যৎ আছে। তারা উঠে আসছে।
জন্মগত প্রতিভার অধিকারী এই মেয়েরা গোল করতে জানে। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও বললেন সে কথাই, ‘কোনো সন্দেহ নেই জন্মগতভাবে আমাদের মেয়েরা মেধাবী। কিন্তু গোল করার পেছনে সবার আগে আসবে ভালো ফিটনেসের কথা। ফিটনেস ভালো আছে বলেই মাঠে তাদের মনোযোগ থাকে সব সময়। কঠিন পরিস্থিতিতেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে দ্রুত। প্রতিপক্ষের সঙ্গে করতে পারে ফাইট। এরপরে আসবে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া ও স্কোরিং অনুশীলন।’
দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে অনুশীলন করছে মেয়েরা। ফলে দলীয় বোঝাপড়া বাড়ার সঙ্গে ব্যক্তিগত ফিটনেসের মানটাও তাদের অনেক উঁচুতে। ক্যাম্পে মেয়েদের নিয়মিত নেওয়া হয় কুপার (এন্ডুরেন্স) টেস্ট। সেখানে দেখা গেছে, ১২ মিনিটে গড়ে প্রায় ২৮০০ মিটার বা তারও ওপরে দৌড়াচ্ছে তহুরা খাতুন, শামসুন্নাহাররা। ক্রীড়াবিজ্ঞানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী অনূর্ধ্ব–১৫, ১৬ বছরের মেয়েরা কুপার টেস্টে ২১০০ মিটার দৌড়াতে পারলেই সেটা বিশ্বমানের ফিটনেস হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশের মেয়েদের দমই কেবল বিশ্বমানের নয়, তাঁদের ‘কোর’ ট্রেনিং (যা পেটের পেশির শক্তি ও শারীরিক ভারসাম্য বাড়ানোর অনুশীলন) সেশনের সময়টাও বিশ্বমানের কাছাকাছি। আধুনিক ফুটবলে টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল বিষয়গুলো মাঠে প্রমাণ করতে চাইলে ব্যক্তিগত দক্ষতা ও দমের সঙ্গে প্রয়োজন শরীরের ভারসাম্য। যার মধ্যে কোর ট্রেনিং অন্যতম। বাংলাদেশের মেয়েরা শুরুতে এই অনুশীলন এক মিনিট করতে না পারলেও এখন তারা ১০ মিনিট ধরে পুরো প্যাকেজ শেষ করতে পারে বলে জানান কোচ ছোটন, ‘প্রথমে মেয়েরা কোর ট্রেনিংয়ের সেশনে ভয় পেত। এক মিনিটও করতে পারত না। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলো, এখন ওরা পুরো প্যাকেজটি ১০ মিনিট সময় নিয়ে করতে পারে।’
প্রতিপক্ষকে এ কারণেই তো গোলবন্যায় ভাসায় আমাদের মেয়েরা!