
খেলা শেষে ‘মিক্সড জোনে’ যখন এলেন, মুখে ঝকমক করছে প্রাপ্তির হাসি। ঠিক যেন মেলানো যাচ্ছিল না ছবিটা। গোলের জন্য হাপিত্যেশ করে যিনি মরছেন, এই কি সেই লিওনেল মেসি? আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৯০০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে গোল না পাওয়া (পেনাল্টি ছাড়া) মেসি এমন নির্ভার! গোল পেলেও তো অনেক সময় ভাবলেশহীন থাকেন, গোল না পেয়েই এত আনন্দ!
কাল যাঁরা প্যারাগুয়েকে গুঁড়িয়ে দেওয়া আর্জেন্টিনার জয় দেখেছেন, তাঁরা এই উদ্ভাসিত মেসির রহস্য বুঝে ফেলেছেন। গোলই শুধু পাননি, মাঠে আর যা কিছু করা সম্ভব তার সবই করেছেন। তিনটি গোলের শেষ পাস দিয়েছেন, অন্য দুটি গোলেরও ছিলেন উৎসমুখ। ড্রিবল করেছেন বাকিদের চেয়ে বেশি, গোলের সুযোগও সৃষ্টি করেছেন অন্তত পাঁচবার। গোলের হ্যাটট্রিক তো অনেক করেছেন, ‘অ্যাসিস্টের’ হ্যাটট্রিকের স্বাদটাও পেলেন। অনেক দিন পর যেন বার্সেলোনার মেসিকে পেল আর্জেন্টিনা। শেষ পর্যন্ত যে ম্যাচসেরার পুরস্কার পেয়েছেন, সে নিয়ে কেউ বোধ হয় আপত্তি করবেন না।
ম্যাচ শেষে নিজের গোল না পাওয়াটা তাই একদমই বড় করে দেখেননি মেসি, ‘গোল পাইনি বটে, কিন্তু এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বেগ হচ্ছে না। আমরা দল হিসেবে খেলতে পেরেছি।’ দলের খেলাটাও আপ্লুত করেছে আর্জেন্টিনা অধিনায়ককে, ‘শুরু থেকেই ভালো খেলেছি আমরা। আমরা জানতাম, একটা গোল হলেই আরও গোল আসবেই। সেটাই হয়েছে। শুরুতেই গোল পেয়ে যাওয়ার পর জায়গা নিয়ে খেলতে পেরেছি, এরপর দ্বিতীয় গোলটা পেয়েছি। তারপর তো আরও অনেকগুলো এল।’
আর্জেন্টিনার হয়ে এখনো বড় কোনো শিরোপা জেতেননি। সেই অতৃপ্তি-মোচনের আরেকটু কাছে এসে মেসি এখনই যেন শিহরিত, ‘ফাইনালে উঠে আমাদের প্রথম লক্ষ্যটা পূরণ করেছি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খুব কাছে আমরা, ভেবেই রোমাঞ্চিত লাগছে।’ বার্সেলোনার হয়ে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রাপ্তির আভাসটা কতটা উদ্বেল করছে সেটাও বুঝিয়ে দিলেন, ‘কোপা জিতলে সেটা হবে দারুণ কিছু। আমি আসলেই জাতীয় দলের হয়ে কিছু জিততে চাই। তবে আমার মনে হয় ফাইনালটা হবে খুবই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।’
পুরো টুর্নামেন্টেই মেসিকে খানিকটা নিচে খেলিয়ে পাস্তোরেকে খেলার জায়গা করিয়ে দিয়েছেন কোচ জেরার্ডো মার্টিনো। কৌশলটা কাজে লেগেছে। মার্টিনোর কাছে দলের স্বার্থটাই বড়, ‘মেসির পাস থেকে যদি গোল হয় তাহলে সমস্যা কোথায়? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সে খেলার দাবিটা মেটাতে পারছে। আমার তো ওকে একদমই উদ্বিগ্ন মনে হচ্ছে না। আনন্দিত হওয়ার জন্য দলের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার কোনো দরকার নেই ওর।’
ফাইনালে গোল নয়, মেসির চোখ তাই নিশ্চিতভাবেই থাকবে শিরোপায়! এএফপি, গোলডটকম।